করােনা ভাইরাস নিয়ে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার যখন অনেকটাই অন্ধকারে , ঠিক সেই সময়ই ব্রহ্মাণ্ডের ‘কৃষ্ণ গহ্বর’ ( ব্ল্যাক হােল )- এর রহস্য সন্ধানে অনেকটাই এগিয়ে গেলেন বিজ্ঞানীব। এমনকী এবছর পদার্থবিদ্যায় নােবেল প্রাইজ ঘােষিত হয়েছে এই ‘কৃষ্ণ গহ্বর’ নিয়ে গবেষণার সূত্রেই।
বিজ্ঞানী রজার পেনরােজ, রেইনহার্ড গেঞ্জেল এবং আন্দ্রে গেজ এবার পদার্থবিদ্যায় নােবেল পুরস্কার পেলেন। পদার্থবিজ্ঞানে এবার নােবেল পুরস্কারে জয় এল কৃষ্ণগহ্বরের সূত্র ধরে। বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে সবচেয়ে রহস্যময় এবং শক্তিধর বিষয় হল এই ব্ল্যাক হােল। এর মধ্যে ব্ল্যাক হােল সংক্রান্ত গবেষণার জন্য নােবেল পেলেন বিজ্ঞানী রজার পেনরােজ। অন্যদিকে ব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রে থাকা ‘দৈত্যাকার কৃষ্ণগহ্বর ’ নিয়ে পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য নােবেল সম্মানের স্বীকৃতি পেলেন রেইনহার্ড গেলে এবং আন্দ্রে গেজ।
এর মধ্যে নােবেল পুরস্কারের অর্থমূল্যের ( দশ লক্ষ সুইডিস ক্রোনার ) অর্ধেক অংশ পাচ্ছেন ব্রিটেনের রজার পেনরােজ এবং বাকি অর্ধাংশ পাচ্ছেন যৌথভাবে জার্মারি রেইনহার্ড এবং আমেরিকার আন্দ্রে গেজ।
আইনস্টাইনের তত্ত্বকে এগিয়ে নিয়েই বিজ্ঞানে নােবেল পেলেন ৮৯ বছর বয়সী রজার পেনরােজ। ১৯১৫ সালে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন দেখিয়েছিলেন । গােটা ব্রহ্মাণ্ড বাঁধা পড়েছে অভিকর্ষ বলেক হাতে। এই অভিকর্ষ বলের জন্যই গােটা ব্রহ্মাণ্ডের আকার আকৃতির বদল হচ্ছে। এই অভিকর্ষ বলের জন্যই মানুষটি পৃথিবীর সঙ্গে আটকে থাকে। কোন গ্রহ সৌরমণ্ডলের কোন কক্ষপথে ঘুরবে, তা ঠিক করে দেয় এই অভিকর্ষ বল।
এমনকী মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতে কোন কোন কক্ষপথ ধরে সূর্য প্রদক্ষিণ করবে, সেটাও নির্দিষ্ট হয় এই অভিকর্ষ বলের জন্যই। আইস্টাইন দেখিয়েছিলেন খুব ভারী মহাজাগতিক বস্তুর জোরালাে টানে তার আশেপাশে থাকা সবকিছুই তার মধ্যে ঢুকে পড়ে। এমনকী তার নাগপাশ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না আলাে। সেই কারণেই এর নামকরণ করা হয়েছে ব্ল্যাক হােল।
তবে এই ব্ল্যাক হােল কীভাবে কাজ করে সেই রহস্য সমাধান করে যেতে পারেননি বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। পরে বিভিন্ন গবেষণা জানিয়েছে এই ব্ল্যাক হােলের চারপাশে থাকে একটা এলাকা। যার নাম ইভেন্ট হরাইজোন। ২০১৯ সালে এই কৃষ্ণগহ্বরের ছবি তােলা সম্ভব হয়েছে।
আইনস্টাইনের মৃত্যুর দশ বছর পরে বিজ্ঞানী রজার পেনরােজ এই ব্ল্যাক হােল কীভাবে কাজ করে তার একটি গাণিতিক বিশ্লেষণ করেন। ব্ল্যাক হােল কীভাবে তৈরি হল পঞ্চাশ বছরের সেই ধাধার সমাধান করে ফেলেছিলেন রজার পেনরােজ। অবশ্য রজার পেনরােজের এই গাণিতিক সূত্রসন্ধানের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক বাঙালি বিজ্ঞানী প্রেসিডেন্সি কলেজের ( অধুনা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ) অধ্যাপক অমল রায়চৌধুরীর নাম। মঙ্গলবার এই কৃষ্ণগহ্বর কীভাবে কাজ করে তার ওপর আলােকপাত করার স্বীকৃতি হিসেবেই নােবেল পেলেন কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিজ্ঞানী রজার পেনরােজ।
পুরস্কারের অন্যান্য ভাগীদারদের মধ্যে ছিলেন রেইনহার্ড গেঞ্জেল এবং আন্দ্রে গেজ। নয়ের দশকে তার দেখিয়েছিলেন সুর্যকে গ্রহগুলি কোন কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করবে, তা নির্ধারণ করে সেই গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা দৈত্যাকার কৃষ্ণগহ্বর- এর জোরালো অভিকর্ষ বল।
আন্দ্রে গেজ পদার্থবিজ্ঞান নােবেলজয়ী চতুর্থ বিজ্ঞানী। মাদাম ক্যুরি ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানে নােবেল পাওয়া প্রথম মহিলা। নােবেল প্রাপ্তির সংবাদের পরে নিউইয়র্কের আন্দ্রে গেজ মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, আশা করব, পদার্থবিদ্যায় তরুণ প্রজন্মের মেয়েদের উদ্বুদ্ধ করতে পারব আমি। এটা এমনই একটা ক্ষেত্র, যেখানে অনেক আনন্দ রয়েছে। যদি কেউ বিজ্ঞান সম্পর্কে উৎসাহিত হয়, তাহলে বিজ্ঞান নিয়ে অনেক কিছু করতে পারবে।