‘সেলিম বাজপাখি, সিপিএম কিনলে কংগ্রেস ফ্রি’, জোটকে কটাক্ষ
নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুর, ২৯ এপ্রিল— সোমবার মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম এবং ভগবানগোলায় নির্বাচনী জনসভা করেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ জঙ্গিপুর কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী খলিলুর রহমানের সমর্থনে এদিন তিনি খড়গ্রামের নগরের কৃষক বাজার মাঠে প্রথম জনসভাটি করেন৷ এটি শেষ করেই যোগ দেন ভগবানগোলা থানা সংলগ্ন একটি ইটভাটার মাঠে৷ এখানে তিনি মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের প্রার্থী আবু তাহের খান এবং ভগবনগোলা বিধানসভা উপনির্বাচনের প্রার্থী রেয়াত হোসেন সরকারের সমর্থনে জনসভা করেন৷ দু’টি সভা থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী কেন্দ্রীয় সরকার, বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএমকে একযোগে আক্রমণ করেন৷ ভগবানগোলার সভা থেকে সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমকে বাজপাখি বলেও এদিন কটাক্ষ করেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী৷ এ প্রসঙ্গে বাম-কংগ্রেস জোটকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘ওদের তো একটা কিনলে আরেকটা ফ্রি৷ সিপিএম কিনলে কংগ্রেস ফ্রি, কংগ্রেস কিনলে সিপিএম ফ্রি৷’ প্রখর রোদ এবং সেই সঙ্গে প্রচণ্ড গরমকে উপেক্ষা করেই এদিন মুখ্যমন্ত্রীর দু’টি সভাতেই মানুষ ভিড় করেন৷ বিশেষ করে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতোই৷ প্রার্থীরা ছাড়াও দু’টি জনসভাতেই জেলা এবং স্থানীয় নেতৃত্বরা উপস্থিত ছিলেন৷
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খড়গ্রামের জনসভা থেকে বলেন, ‘মনে রাখবেন, এটা বিধানসভার নির্বাচন নয়৷ এটা লোকসভার নির্বাচন৷ দিল্লিতে বিজেপি সরকারকে হঠাতে হবে, এটি তার নির্বাচন৷’ তিনি এদিন বলেন, ‘মুর্শিদাবাদে সুতি, ধুলিয়ানে গঙ্গার ভাঙন একটা বড় সমস্যা৷ এটা দিল্লির কাজ৷ কিন্ত্ত দিল্লি সব বন্ধ করে দিয়েছে৷ টাকা-পয়সা দিচ্ছে না৷ তা সত্ত্বেও আামরা আড়াইশো কোটি টাকা ইতিমধ্যে বরাদ্দ করেছি এই সমস্ত এলাকায় কাজ করার জন্য৷ কান্দির মাস্টার প্ল্যানও আমরা সম্পূর্ণ করে দিয়েছি৷ ওটা চারশো চল্লিশ কোটি টাকার প্রকল্প৷ এতে দশ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবে৷ মুর্শিদাবাদের অনেক মানুষ বিড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত৷ তাঁদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প করেছি আমরা৷ তাঁদের প্রিমিয়াম রাজ্য সরকার জমা দেয়৷ আপনাদের কোনও পয়সা দিতে হয় না৷’
তিনি আরও বলেন, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পেয়েছেন তো? বেড়েছে তো? যাঁদের ষাট বছর বয়স, তাঁরাও পাবেন৷ ষাট বছর হয়ে গেলে সারা জীবন পাবেন৷ এটা মা-বোনেদের অহংকার৷ কৃষকদের আমরা বছরে দশ হাজার টাকার করে দিই৷ শস্যবিমা দিতে হয় না৷ আমরা খরচ করি৷ আগে একটা সার্টিফিকেট অ্যাটেস্টেট করতে গেলে, কারও না কারও বাড়ি দৌড়তে হত৷ এখন তো নিজেই নিজেকে সার্টিফায়েড করছেন৷ এই সুযোগও করে দেওয়া হয়েছে৷ কত সহজ করে দেওয়া হয়েছে জীবনটাকে৷’
এরপরই বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, ‘বিজেপি গভর্নমেন্ট হচ্ছে অফ দ্য এজেন্সি, বাই দ্য এজেন্সি অ্যান্ড ফর দ্য এজেন্সি৷ তারা এজেন্সির কথা ছাড়া এক পা চলে না৷ সবাইকে ফোন করে ভয় দেখায়৷ নয় এনআইএ করব, নয় তো সিআইএ করব, নয় হ্যান করেঙ্গা, ত্যান করেঙ্গা৷ ওদের বলুন যে দু’টি দফায় নির্বাচন হয়ে গিয়েছে, তাতে তোমরা এপাশ ওপাশ ধপাস হয়েছো৷ আর বাদবাকি যে দফায় নির্বাচন হবে, তার জন্য বুক দুরুদুরু করছে৷’ তিনি বলেন, ‘এই লড়াইটা আমাদের জিততে হবে৷ কারণ ২০০৪-এ মনে আছে? অটলজি ভালো মানুষ ছিলেন৷ ভদ্র মানুষ৷ আমরা তাঁর বিরুদ্ধে একটা কথাও বলিনি৷ কিন্ত্ত অটলজির আমলে বিজেপি একটা স্লোগান দিয়েছিল, ইন্ডিয়া ইজ স্মাইলিং৷ মানুষ কিন্ত্ত উল্টো করে দিয়েছিল৷ মানুষ কিন্ত্ত ভোট দেয়নি৷ এবারও প্রচারবাবুরা প্রচার করে মিথ্যা কথা বলছে৷ সব রেশন নাকি ওরা দিচ্ছে৷ দু’বছর ধরে রেশনের একটা টাকাও ওরা দেয়নি৷ দু’বছরে ৩২ হাজার কোটি টাকা আমরা দিয়েছি৷ কেন্দ্রীয় সরকার থেকে একটা টাকাও দেয়নি৷ মিথ্যা কথা বলে৷ ভাঁওতাবাজি করে৷ জুলুমবাজি করে৷ আর কিছু কিছু মিডিয়াকে দিয়ে লেখায় এই বলেছে, ওই বলেছে৷ এত পাবে, অত পাবে৷ পরে দেখবেন মিডিয়ারও ক্রন্দন, যখন হবে বিজেপির বিসর্জন৷ কারণ তারাও সেদিন বুঝতে পারবে, তারা সত্যটা ধরতে পারেনি৷’
নাম উল্লেখ না করে নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘প্রচারবাবু বলছেন, ইসবার চারশো পার৷ আর আমি বলছি, ইসবার পগার পার৷ ইসবার দুশো ভি নেহি হোগা পার৷ শুনুন, অত স্বস্তিতে নেই৷ এত ঝড়ে, জলে, রোদে ডুবেও ঝলসাতে ঝলসাতে আমি একমাস ধরে বাড়ির বাইরে৷ আরও একমাস আমায় করতে হবে৷ আর বিজেপি বাবুরা কত সুখে আছে৷ আমাদের মুখ্যমন্ত্রীরা কিচ্ছু পায় না৷ আমাদের নিজেদের হেলিকপ্টার ভাড়া করতে হয়৷ নিজেদের হোটেল ভাড়া করতে হয়৷ আর ওনাদের জন্য তো সবকিছু মাফ৷’ মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমকে কটাক্ষ করে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী বলেন, ‘পাশের কেন্দ্র মুর্শিদাবাদ৷ এখানে উড়ে এসে একজন বাজপাখি দাঁড়িয়েছেন৷ তৃণমূলের ভোট কাটতে৷ আমি জাকির, খলিলুর সহ সবাইকে বলে যাচ্ছি, নজর দিতে হবে৷ এরা সকাল-সন্ধ্যা আমাদের গালাগালি দেবে৷ আর আমাদের ভোট কেটে সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভোট ভাগ করে বিজেপিকে জেতাবে৷ এই ভুলটা যেন আমরা না করি৷ এটা আমাদের কথা আপনাদের কাছে বললাম৷ আমি আবেদন করলাম৷’
এরপর ভগবানগোলার সভা থেকেও মহম্মদ সেলিমকে কটাক্ষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ভোট পাখি একটা৷ বাজপাখির মতো সেলিম আছে৷ কংগ্রেস-সিপিএমের জোট৷ বাংলায় ভোট৷’ ‘ইন্ডিয়া’ জোটে আমি আছি৷ কিন্ত্ত কংগ্রেস-সিপিএমের এই জোটে আমি নেই৷ এটা মাথায় রাখবেন৷’ এই সভাতেই তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী আবু তাহের খানকে কাছে ডেকে এনে এবং তাঁর হাতটা তুলে ধরে জনতার উদ্দেশ্যে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী বলেন, ‘অনেকে হয়তো বলতে পারেন, আবু তাহের খান অসুস্থ৷ কিন্ত্ত আপনারা জানেন, ছেলেটা প্রায় মরেই গিয়েছিল৷ ছ’মাস হাসপাতালে থেকে জীবনটাকে লড়াই করে ওর মনের জোরের জন্য আমি ওকে টিকিট দিয়েছি৷ আমাকে বলেছিল, দিদি আমি পারব৷ আমি বললাম, তোর শরীরটা আবার খারাপ হয়ে যাবে৷ বলল, আপনি চিন্তা করবেন না, আমি ঠিক মানুষের সঙ্গে থাকব৷ আমি পারব৷ আপনি যেমন পারেন, আমিও পারব৷ আমি বললাম, ঠিক আছে৷ অনেক কষ্ট করে ওকে টিকিট দেওয়া হয়েছে৷ অনেক ভাবনা করে৷’