নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুর, ২১ মার্চ— পূর্ব ঘোষণা মতো মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে এসে পৌঁছন ক্রিকেট খেলোয়াড় ইউসুফ পাঠান৷ তৃণমূল কংগ্রেস এবার বহরমপুর কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে তাঁকে৷ বহরমপুর টেক্সটাইল কলেজ মোড়ে তাঁকে কেন্দ্র করে একটি সভার ডাক দিয়েছিল বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্ব৷ এই সভার মধ্য দিয়েই নির্বাচনী প্রচার শুরু করলেন ইউসুফ৷ সভায় দলের কর্মী-সমর্থকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতোই৷ তাঁদের সামনে তিনি মাইক হাতে বক্তব্যও রাখেন৷ তাঁর প্রতিটি শব্দের পরেই উপস্থিত কর্মী-সমর্থকরা চিৎকার আর করতালি দিয়ে সমর্থন করেছিলেন৷ সভায় জেলা নেতাদের পাশে বসিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মধ্য দিয়েই এদিন ইউসুফ পাঠান বুঝিয়ে দেন তিনি তৈরি হয়েই খেলতে এসেছেন৷ প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পরে তাঁকে বিরোধীরা ‘বহিরাগত’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন৷ এমনকি নিজের দলের বিধায়ক ভরতপুরের হুমায়ুন কবীরও সেই পথেই হেঁটে ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের এই সদস্যের পিছনে একই তকমা লাগিয়েছিলেন৷ স্বভাবতই তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতেই উঠে আসে বহিরাগত সংক্রান্ত প্রশ্ন৷ উত্তরে এক ঢিলে দুই পাখি মারেন ক্রিকেটে বিধ্বংসী হিটার বলে পরিচিত ইউসুফ পাঠান৷ হুমায়ুন কবীরকে পাশে বসিয়ে তিনি জানিয়ে দেন, দেশের প্রধানমন্ত্রীও গুজরাতের বাসিন্দা৷ কিন্ত্ত তিনি লড়াই করেন বারাণসী থেকে৷ জনপ্রিয় এই ক্রিকেটারকে কাছে পেয়ে দলের নেতা থেকে সাধারণ কর্মীরা সেলফি তুলতে, সই সংগ্রহ করতে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন, ধাক্কাধাক্কি পর্যন্ত হয়৷
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ইউসুফ পাঠান বলেন, ‘আমি কি বহিরাগত? আপনারাই বলুন, আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে আমি বহিরাগত? দেখুন আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যিনি গুজরাতের বাসিন্দা৷ কিন্ত্ত নির্বাচন লড়েন কোথা থেকে নিশ্চয়ই আপনারা জানেন৷ বারাণসী৷ কিন্ত্ত বাংলা আমার ঘর৷ এটা আমি আগেও বলেছি৷ এখানে আমি থাকতে এসেছি৷’ সাংবাদিকদের আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘গুজরাত থেকে আমি এসেছি, সেটা আমার জন্মভূমি৷ কিন্ত্ত বাংলা হচ্ছে আমার কর্মভূমি৷ এখানে আমি অনেক কাজ করেছি৷ আগে আরও অনেক কাজ আমাকে করতে হবে৷’ বহরমপুর কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরি পাঁচবারের সাংসদ৷ তাঁকে কি তিনি পরাজিত করতে পারবেন? উত্তরে এবারও সোজা ব্যাটে খেলেন ইউসুফ৷ তিনি বলেন, ‘উনি কয়েকবারের সাংসদ ঠিকই৷ কিন্ত্ত এবার পরিবর্তন হবে৷ যখন কিছু পরিবর্তন হয়, তখন তা মানুষের ভালো জন্যই হয়৷ মানুষ এটা গ্রহণ করে এবং মেনে নেয়৷ কারণ তাঁরা জানে ভালোর জন্য পরিবর্তন জরুরি৷’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার দলের সদস্যরা বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে অনেক কাজ করেছেন৷ এবার আমার লক্ষ্য সেই কাজগুলোকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া৷ মুর্শিদাবাদের রেশম শিল্প খুব বিখ্যাত৷ আমার লক্ষ্য জয়ের পরে এই শিল্পকে গোটা পৃথিবীতে নিয়ে যাওয়ার৷’
মাইক হাতে হিন্দিতে বক্তব্য রাখার সময় ইউসুফ পাঠান বলেন, ‘আপনাদের পাশে থেকে আপনাদের সেবা করার জন্য দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে পাঠিয়েছেন৷ আমি কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে যখন খেলতাম, তখন যেভাবে ভালোবাসা দিয়েছেন, আমি আশা করব, সেই ভালবাসাটাই আপনারা আমাকে দেবেন৷ এর আগে মাঠে নামার পরে গ্যালারি থেকে আপনাদের ভালোবাসা পেয়েছি৷ আজকে এখানে আসার পরে সরাসরি আপনাদের হূদয় থেকে বেরিয়ে আসা ভালোবাসা পেলাম আমি৷’
শুক্রবার বহরমপুর থানার গোরাবাজার জমিদারি সংলগ্ন এলাকার একটি মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়লেন৷ তাঁর সঙ্গে নামাজ পড়তে দেখা যায় তৃণমূল কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন নেতা ও কর্মীকে৷ বহরমপুর কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীকে দেখার জন্য সাধারণ মানুষ ভিড়ও করেন৷ জুম্মাবারের নামাজের মধ্যে দিয়েই এদিন ভারতীয় বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়কে জনসংযোগ করতে দেখা যায়৷ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ইউসুফ জানান, ‘বাঙালি খাবার খুব ভালো লেগেছে৷ বিশেষ করে ভেটকি মাছ৷ খুব সুন্দর৷ খুব স্বাদ রয়েছে৷ রোজা শুরু হওয়ার আগে আমি ভেটকি মাছ সহকারে বাঙালি খাবার খেয়েছি৷ আমার খুব পছন্দের৷ এছাড়াও বাংলার মিষ্টি খুব সুন্দর৷’ এখানেই থেমে না থেকে ইউসুফ বলেন, ‘কারও সঙ্গে ফাইট বা লড়াই করতে আমি বহরমপুরে আসিনি৷ আমি এসেছি মানুষের সমস্যার কথা শুনতে৷’