হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা ‘মাস্টার মাইন্ডের’ নাম বললেন ইউনুস

হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পিছনে ছিল এক গভীর ষড়যন্ত্র। এর পিছনে ছিল অন্য কারও হাত। এমনই দাবি করলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস। এর পিছনে ছিল একটি সংগঠিত চক্রান্ত। নিউ ইয়র্কে দাঁড়িয়ে এমনই বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস করলেন বাংলাদেশের নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ। তিনি রাষ্ট্রসঙ্ঘের বৈঠকে গিয়ে বুধবার এই মন্তব্য করার পর বৃহস্পতিবার সেই চক্রান্তকারী ব্যক্তির নামও প্রকাশ করে দিলেন।

প্রসঙ্গত তিন দিন আগে রাষ্ট্রসঙ্ঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেন ইউনুস। সেখানে তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত থাকা তিন ছাত্রনেতার সঙ্গেও পরিচয় করান। এখানে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানেও যোগ দেন। ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ লিডারস স্টেজ’ নামে এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় হাসিনা সরকারের পতনের গোপন রহস্য ফাঁস করেন ইউনুস। হাসিনার পতনের পিছনে যে একটি গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে, কার্যত সেকথা স্বীকার করে নেন বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।

কিন্তু কে সেই ব্যক্তি? যার অঙ্গুলি হেলনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত সরকারের পতন হল? এর জবাবে ইউনুস একজন মেহফুজ আবদুল্লা নামে একজন ব্যক্তির কথা বলেছেন। কিন্তু তাঁর কী পরিচয়? কার নির্দেশে ছক কষা হয়েছিল হাসিনার বিরুদ্ধে? কীভাবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা আওয়ামী লিগ সরকারকে মাত্র ছয় মাসের মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত করলেন সেবিষয়ে মুখ খোলেননি ইউনুস।


উল্লেখ্য, নবনির্বাচিত হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার ছয় মাসের মধ্যেই সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে শুরু হয়ে যায় কোটা বিরোধী আন্দোলন। সেই আন্দোলন ক্রমশ হিংসাত্মক রূপ নেয়। আন্দোলনকারীরা একের পর এক সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নষ্ট করতে শুরু করে। সরকার এই আন্দোলন দমনে পুলিশকে ব্যবহার করে। কিন্তু একটা সময় সেই আন্দোলন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতেই পুলিশ গুলি চালানো শুরু করে। এরই মধ্যে দেশের সুপ্রিম কোর্ট ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়ে ৯৩ শতাংশ সরকারি ক্ষেত্রে কোটা তুলে দিয়ে মেধার উপর গুরুত্ব দেওয়ার আদেশ দেয়। বাকি ৭ শতাংশ ক্ষেত্রে সংরক্ষণ রাখা হয়। এরপর ছাত্ররা কয়েকদিন আন্দোলন বন্ধ রাখলেও ফের আন্দোলন শুরু করে। তখন তাঁদের একটাই দাবি, ‘হাসিনার পদত্যাগ’।

এভাবে সরকারি চাকরিতে কোটা বিরোধী আন্দোলন ‘হাসিনা হঠাও’ আন্দোলনে পরিণত হয়। সেই আন্দোলনে শুধু ছাত্ররাই ছিলেন না, ছিলেন সাধারণ মানুষ। এবং জামাতের একটি বড় অংশ সেই আন্দোলনে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। ছাত্রদের আন্দোলন হাইজ্যাক করে নেয় জামাতপন্থীরা। বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ভাইরাল হয়। একাধিক জায়গায় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া, মহিলাদের ওপর অত্যাচার ও দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। শেষে গত ৫ আগস্ট ছাত্র ও জনতার বিশাল একটি দল হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে ‘গণভবন’ অভিযান করে। সেদিনই সেনাবাহিনীর পরামর্শে হাসিনা পদত্যাগ করেন। এবং মাত্র ৪০ মিনিটের মধ্যে আত্মরক্ষার তাগিদে বিশেষ বিমানে ভারতে চলে আসেন মুজিব কন্যা।