আসন্ন বিশ্ব পরিবেশ দিবস৷ আগামী ৫ জুন৷ সারা পৃথিবী জুডে় নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপিত হবে৷ কিন্ত্ত এই প্রথম বনকর্মী, ফরেস্ট অফিসার তথা বন আধিকারিকদের আসন্ন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ছবি আঁকা পোস্টকার্ডে শুভেচ্ছা জানালেন অভিনেত্রী তথা সমাজকর্মী সঙ্গীতা সিনহা৷ অরণ্য, বন্যপ্রাণীর ছবি এঁকে বাংলার নানা প্রান্তের ফরেস্ট অফিসার তথা বন আধিকারিকদের আসন্ন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো হল৷
একটা কথা আমরা সকলেই জানি, পাহাডে় ঘুরতে আমরা অনেকেই যাই৷ কিন্ত্ত তার পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হন খুব কম মানুষজন৷ যেখানে সেখানে প্লাস্টিকের প্যাকেট, প্লাস্টিকের খালি জলের বোতল, চিপ্সের প্যাকেট আরো কত কিছু ফেলে দেন অনেকে৷ যেকোনো জায়গায় ধূমপান করেন, আধখাওয়া সিগারেট ফেলে দেন ঝোপের মধ্যে৷ সচেতনতার অভাবে ক্ষতি হয় পাহাডে়র, সেখানে বসবাসকারী প্রাণীদের, সর্বোপরি পরিবেশের৷
পাহাড় মানেই গাছে ঢাকা বন, সঙ্গে বন্যপ্রাণী, পাখি৷ এসবের রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্বে ভারতবর্ষের নানা প্রান্তের ছডি়য়ে ছিটিয়ে আছেন অসংখ্য বনকর্মী, ফরেস্ট অফিসার৷ তাঁদের কতজনকে আমরা চিনি? কতজনের খোঁজ নিই? অথচ পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা৷ তা সত্বেও তাঁদের এই কাজ যেন ‘থ্যাঙ্কলেস জব’৷ অ্যাঞ্জেল নবজীবন ওয়েলফেয়ার সোসাইটি এর কর্ণধার সঙ্গীতা ‘রিকশাওয়ালা’ ছবির নায়িকার ভূমিকায় কাজ করেছিলেন৷ পাশাপাশি ছোটদের নিয়ে সারাবছর নানা রকমের কাজ করেন৷ তবে এই ভাবনা একেবারে অন্যরকম৷ পোস্টকার্ডে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ফরেস্ট অফিসারদের, বনকর্মীদের তাঁদের কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন সঙ্গীতা৷ পোস্টকার্ডে আঁকা বন্যপ্রাণী, পাহাড়, নদী, গাছ, পাখির ছবি৷ যে প্রাকৃতিক সম্পদ প্রতিনিয়ত রক্ষা করে চলেছেন এই বনকর্মীরা৷ ছবি এঁকেছেন তরুণ শিল্পী অতনু রায়৷
সঙ্গীতা সিনহা এই উদ্যোগ নিয়ে জানালেন, ‘আমি নিজেও খুব পাহাডে় ঘুরতে যেতে ভালোবাসি৷ কিন্ত্ত আমিও দেখেছি অনেক ভাবেই পাহাডে়র পরিবেশ পর্যটকদের একাংশ দ্বারা বিঘ্নিত৷ যেখানে, সেখানে প্লাস্টিকের প্যাকেট, প্লাস্টিকের খালি জলের বোতল, চিপ্সের প্যাকেট ফেলে দেন৷ যারা অবৈধ ভাবে গাছ কাটে, বন্যপ্রাণীর ক্ষতি করে এই বনকর্মীরা সদা সতর্ক থেকে বনের রক্ষনাবেক্ষণ করেন৷ এমনিতেই গরমে মানুষ নাজেহাল৷ গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর দায়ে গোটা পৃথিবী কাহিল৷ এখন আরো গাছ লাগানোর দরকার৷ কিন্ত্ত প্রাকৃতিক ভাবে গডে় ওঠা অরণ্যের কোনো বিকল্প হতে পারেনা৷ তাই এই উদ্যোগ নেওয়া হল, যাতে সকালেই সমাজের এই বন্ধুদের কাজের গুরুত্ব বোঝেন এবং তাঁদের কাজের সম্মান করেন৷ ছবি আঁকা পোস্টকার্ডে ধন্যবাদ জানিয়ে শুভেচ্ছা বার্তা নিশ্চয়ই তাঁদেরও ভালো লাগবে৷’
আসলে বন সৃজনের চেযেও বড় কথা হল বনের রক্ষণাবেক্ষণ, বন্যসম্পদের সংরক্ষণ৷ সেই কাজে যাঁরা যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের কাজের স্বীকৃতিও একটা বড় বিষয়৷ পোস্টকার্ডে তাঁদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন একটা শুভ উদ্যোগ৷
সঙ্গীত ও দাবার মেলবন্ধন
উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক সঞ্জয় মিত্র শিশু ও কিশোর সঙ্গীত প্রতিভাদের যেমন জনসমক্ষে এনেছেন, তেমনই তাদের দাবা খেলায় উৎসাহ দিতে আয়োজন করেছিলেন বিশাল এক কর্মযজ্ঞের৷ সাঙ্গীতিক ক্ষেত্রে তিনি পাশে পেয়েছেন প্রখ্যাত তবলাশিল্পী পণ্ডিত সমর সাহাকে, আর দাবার ক্ষেত্রে গ্র্যাণ্ডমাস্টার দিবেন্দু্য বড়ুয়াকে৷ উভয়ক্ষেত্রেই সুযোগ বঞ্চিত ও স্বল্প সুযোগ প্রাপ্ত প্রতিভাদের পাদপ্রদীপের আলোয় আনার জন্যই তাঁর এই প্রচেষ্টা৷ সঞ্জয় মিত্র চ্যারিটেবল ট্রাস্টের উদ্যোগে ‘সারা বাংলা দাবা সংস্থা’-র মাধ্যমে আই.সি.সি.আর প্রেক্ষাগৃহে হয়ে গেল আন্তর্জাতিক মানের দাবা খেলার তিনদিন ব্যাপী প্রতিযোগিতা (৪, ৫, ৬ই মে)৷ ৫ই মে প্রতিযোগিতার পর দুই কিশোর-কিশোরী স্বাক্ষর রাখল তাদের সঙ্গীত প্রতিভার৷ সঞ্জয় মিত্রর মতে – সঙ্গীত ও দাবা দুটিই অত্যন্ত মনঃসংযোগের ব্যাপার৷ শিশু বয়স থেকেই সেই মননশীলতার বিকাশ মানবিকতার স্ফুরণে খুব কার্যকরী৷ বর্ত্তমানে সঙ্গীতের মতই সম্প্রতি দাবা খেলাকে জনমুখী করতে পশ্চিমবঙ্গের তেইশটি জেলায় তাঁর সংস্থা দান করেছে দাবার বোর্ড – ঘুঁটি ও দাবা খেলার ঘডি়৷ প্রতিটি স্থানেই ছিল সাংবাদিক সন্মেলনের আয়োজন৷
ছোটরা ছাড়াও যোগ দিয়েছিলেন নানান প্রদেশের উৎসাহী জাতীয় পর্যায়ের চ্যাম্পিয়নরা৷ দাবা বিশেষজ্ঞদের মতে এই ধরণের বিশাল মাপের আয়োজন কোলকাতায় এই প্রথম এবং সঙ্গীতকে এর পাশাপাশি রাখা এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ৷ ৬ মে ছিল সর্বশেষ পর্যায়ের চূড়ান্ত খেলা৷ তাই ৫ মে অত্যন্ত কঠিন মনঃসংযোগের পর প্রতিযোগীদের ক্লান্ত মন হালকা করতেই উচ্চাঙ্গসঙ্গীত অনুষ্ঠানের আয়োজন৷ এদিন বেহালা ও কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশন করল সৌপর্ণ ঘোষ এবং সৃজা হালদার৷ বেনারস ঘরানায় তালিমপ্রাপ্ত সৌপর্ণর প্রথম পরিবেশন রাগ ঝিঁঝোটি – বিলম্বিত (মধ্যলয়) ও দ্রুত ত্রিতাল৷ স্বল্প সময়ের মধ্যেই সৌপর্ণ দেখিয়েছে গায়কীঅঙ্গে সৌন্দর্যময় বোল-বাণী, তান, অতিদ্রুত ত্রিতালে ঝালায় তার সুতালিমের ঝলক৷ প্রথমে উস্তাদ বডে় গোলাম আলি খানের সুবিখ্যাত ‘য়াদ পিয়া কি আয়ে’ ও পরে ‘না মানুঙ্গি (খাম্বাজ) ঠুংরী দুটি বাজানোর মত কঠিন কাজও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সমাধা করল সৌপর্ণ৷ ইন্দোর শৈলীতে সৃজা হালদারের পরিবেশন কৌশিকধ্বনিতে দ্রুত ত্রিতাল বন্দীশ ও পূর্বী রাগে ঠুমরি৷ ত্রিতাল বন্দীশে সরগম্ কহনের কৌশল, আ-কারান্ত তান উল্লেখযোগ্য৷ পূর্বী ঠুম্রিতে ছিল যথার্থ ঠহরান ও গায়নশৈলীর মুন্সিয়ানা৷ আশা রইল আগামী দিনে যথার্থ তালিম ও রেওয়াজে এই দুই প্রতিভার পরিবেশন সম্পূর্ণ ত্রুটি মুক্ত হয়ে আরও ব্যপ্তি নিয়ে পূর্ণতা লাভ করবে৷ এদের সঙ্গে যথার্থভাবে সহযোগিতা করেছেন দেবজ্যোতি বোস (তবলা), বিলাল খান সালনভি (তবলা) এবং সুধেন্দু হালদার (সারেঙ্গি)৷ সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে সঞ্চালনা করেছেন দেবাশিস বোস৷ সঙ্গীতজগত ও ক্রীড়াসংস্কৃতির মধ্যে সম্প্রীতি ও মেলবন্ধনের প্রচেষ্টায় বর্তমানে ‘সঞ্জয় মিত্র চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-ই অগ্রণী৷
অরূপে অপরূপে
রোটারি ক্লাব অফ নর্থ ক্যালকাটা ইস্ট আয়োজিত ‘অরূপে অপরূপে’ অনুষ্ঠানটি হয়ে গেল সম্প্রতি আই.সি.সি.আর. -এর সত্যজিৎ রায় অডিটোরিয়ামে৷ এদিনের প্রধান অতিথি নচিকেতা চক্রবর্তী ও ক্লাবের প্রেসিডেন্ট বিবেকানন্দ ভৌমিকের মিলিত প্রদীপ প্রজ্জ্বলনে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন৷ অনুষ্ঠানের প্রথম শিল্পী ক্লাবেরই সদস্যা অহনা৷ কবিগুরুর ‘বিশ্ববীণা রবে’ গানটির সঙ্গে নমনীয় ও স্বচ্ছন্দ নৃত্যশৈলীতে পাওয়া যায় ওডি়শী নৃত্যের কিছু মুদ্রাভঙ্গি৷ এদিনের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন বিখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মনোজ মুরলী নায়ার৷ অত্যন্ত সুগীত ছ’টি গানে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রাখলেন তিনি৷ রেওয়াজি, সুরেলা, সুমিষ্ট, গাম্ভীর্যময়, নমনীয় কণ্ঠে তাঁর প্রথম নিবেদন কবিপ্রণামে ‘তোমার দ্বারে কেন আসি’ (তালছাড়া), যেটি বিচ্ছুরিত যেন এক আকুতি নিয়ে৷ ‘আমার বেলা যে যায়’ গানটির পর দক্ষিণী শৈলীতে মহিশূরী ভজন অনুপ্রাণিত রবীন্দ্রনাথের রচনা ‘একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ’ (ত্যাগ রাজের ‘অতি লাবণ্যরাম কন্যোলারা’) সঞ্জীবিত শিল্পীর কণ্ঠে৷ দক্ষিণী গানটির কিয়দংশ শেষে গেয়ে শোনান শিল্পী৷ কণ্ঠের মিষ্টত্ব ও রোমান্টিকতায় অনুভবময় পরিবেশন প্রেম পর্যায়ের ‘তুমি রবে নীরবে’, ‘ভালবেসে সখী’৷ এক ভিন্ন স্বাদ ও অভিব্যক্তিতে অলংকৃত ‘‘যেতে যেতে একলা পথে’’৷ স্পষ্ট উচ্চারণে একদম সহজ ও স্বাভাবিক গায়নভঙ্গি গানগুলিকে শ্রুতিনন্দন করে তুলেছে৷ এরপর উদ্যোক্তাদের অনুরোধে নচিকেতা শোনালেন রবীন্দ্রসঙ্গীত – ‘তোমার কাছে এ বর মাগি’৷ পরবর্তী নৃত্য শিল্পী সুতীর্ণা দত্তর ভরতনাট্যম আঙ্গিকের মুদ্রাসৌকর্যে প্রাণবন্ত পরিবেশন ‘সৃজন ছন্দে’ নৃত্যবিন্যাস৷ অনুষ্ঠানের শেষ আকর্ষণ ছিল ক্লাবের সদস্যদের অভিনীত নাটক ‘শ্রীমতী ভয়ঙ্করী’৷ এক সময়ের জনপ্রিয় এই নাটকটিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন কুশীলবরা৷ এঁদের উদ্দেশ্য ছিল চরিত্রগুলিকে যথাসম্ভব জীবন্ত করে তোলার৷ ডঃ ইন্দ্রাণী বসু মল্লিকের পরিচালনায় অংশগ্রহণে ছিলেন ইন্দ্রাণী দত্ত, অঙ্গনা পল, মৈণাক রায়, সোহিনী রায়, বিবেকানন্দ ভৌমিক, সৌমেন্দ্র রক্ষিত, তনুশ্রী রক্ষিত, শুভদীপ রায়, শ্রীকান্ত বসু মল্লিক, কল্যাণ সাহা, শুভাশিস হালদার, হর প্রসাদ গর্গ ও দিব্যানি গর্গ৷ অপেশাদার নাটক হিসাবে ছোটখাটো ত্রুটিকে তাঁরা ঢেকে দিয়েছেন আন্তরিকতার মোড়কে৷ কথা বলোর ভঙ্গিতে ও বিক্রমে বিশেষভাবে নজর কাডে়ন নরদুর্লভের ভূমিকায় শুভদীপ রায় ও দোলনের ভূমিকায় ইন্দ্রাণী দত্ত৷ ভৃত্য আলুর ভূমিকায় মৈনাক রায় এবং প্রলয় শঙ্কর চ্যাটার্জীর ভূমিকায় বিবেকানন্দ ভৌমিকের অভিব্যক্তিপূর্ণ সংলাপ প্রশংসার দাবি রাখে৷
আলোচনায় নজরুল
কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর জীবনের উল্লেখযোগ্য তিনটি বছর নদিয়ার কৃষ্ণনগরে ছিলেন (১৯২৬ -১৯২৮)৷ তাঁর ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজডি়ত বাসস্থানটি আজ হেরিটেজ বিল্ডিং হিসেবে ঘোষিত৷ সেখানেই গডে় উঠেছে নজরুল পাঠাগার৷ নবদ্বীপ কথাশিল্প আবৃত্তি চর্চাকেন্দ্র গত ২৬ মে স্থানীয় বাকুলতলা প্রাক্তনী সভাগৃহে ‘নদিয়ার গ্রেস কটেজে নজরুল’ বিষয়ে এক আলোচনার আয়োজন করেছিল৷ আলোচক ইনাস উদ্দীন৷ প্রাবন্ধিক সিরাজুল ইসলাম আলোচনা করেন ‘নজরুলের কবিতায় ধর্মচেতনা’ বিষয়ে৷ এছাড়াও ছিল সঙ্গীত ও আবৃত্তি৷ মুকুল মন্ডলের গান, তিলক বিশ্বাস, বিপ্লব পালের আবৃত্তি শ্রোতাদের তৃপ্ত করে৷ সমবেত প্রযোজনায় ছিল খেয়ালিপানা এবং সুচেতনা৷ আবৃত্তি শোনায় কথাশিল্পর শিক্ষার্থীরা৷ সঞ্চালনায় পীতম ভট্টাচার্য৷
চৌধুরি হাউস সঙ্গীতসম্মেলন
কলকাতা সেন্টার ফর পারফর্মিং আর্টসের উদ্যোগে তিনদিনব্যাপী চৌধুরি হাউস মিউজিক কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হল৷ ২০২২ সালের পর আবারও ২০২৪ সালের হল৷ বালিগঞ্জ ফাঁডি়তে অবস্থিত চৌধুরি বাডি়র উঠোনে৷ এটি ছিল এই বাডি়র সঙ্গীত সম্মেলনের নবম বর্ষ৷
ফি-বছরের শীতকালীন অধিবেশন এবার ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে খানিকটা এগিয়ে অপেক্ষাকৃত গরম আবহে অনুষ্ঠিত হল৷ আর, সকালে শুরু না হয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিত্তোর সময়ে (দুপুর দুটো থেকে)শুরু হয় তিনদিনই৷ এই বছরটি সংগীতের রাজাধিরাজ পন্ডিত কুমার গন্ধর্ব সাহেবের শতবর্ষ৷ এই কারণে সম্পূর্ণ সম্মেলনটি কুমার গন্ধর্বের শতবর্ষ উদযাপন হিসাবে রাখা হয়েছিল৷
কনফারেন্স শুরু হল উপস্থিত বিশিষ্ট অতিথিদের হাতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনে৷ এরপর ক্যালকাটা পারফর্মিং আর্টসের কর্ণধার মিস্টার অনিরুদ্ধ চৌধুরী উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বার্তা রাখেন৷ তারপরে শুরু হয়ে যায় গান বাজনা পর্ব৷
প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয় দিল্লি থেকে আগত সুমিত আনন্দ পান্ডের ধ্রুপদ গায়নে৷ শুদ্ধ সারং রাগে গাইলেন দ্বারভাঙ্গা শৈলীর আদলে আলাপচারী৷ তারপরে নিবেদন করেন কম্পোজিশনগুলি, চৌতাল ও ধামারে৷ সঙ্গে পাখোয়াজে ছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী৷ সৌগত গাঙ্গুলি এরপর সরোদে রাগ ভীমপলাশী বাজালেন৷ আলাপ ও জোড়৷ আর তারপর ছিল গতকারি৷ তবলায় ছিলেন- বোধিমন দাসগুপ্ত৷ অনুষ্ঠানে কন্ঠসংগীত শিল্পী দত্তাত্রেয় ভেলাঙ্কার রাগ পুরিয়া গাইলেন৷ মুম্বইয়ের বিশিষ্ট জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী বিদুষী গৌরী পাথারে তাঁর গান নিবেদন পর্বের শুরুতে শোনালেন রাগ মারবা৷ বিলম্বিত ও দ্রুত লয়ের দুখানি পরিচিত বন্দিশের পর চয়ন করেন রাগ কৌশিধ্বনি৷ আয়োজকের বিশেষ অনুরোধে৷ তবে তালবাদ্যের প্রয়োগ ছাড়াই গেয়ে চমৎকৃত করেন৷ সঙ্গে ছিলেন সুবীর অধিকারী (তবলা)ও সুপ্রিয়া মোদক যোশি(হারমোনিয়াম)৷ ধারওয়ারের লব্ধ প্রতিষ্ঠিত সেতারবাদক শফিক খাঁ রাগ বাগেশ্রী পরিবেশনের জন্য নির্বাচন করেছিলেন৷ আলাপ -জোড়- ঝালার পর সুমিষ্ট গত বাজালেন৷ তবলায় সহযোগ প্রদান করেন- কুমুদ রঞ্জন সাঁতরা৷ প্রথম দিনের সমাপন লগ্নে কন্ঠসংগীত পরিবেশন করেন পন্ডিত কুমার গন্ধর্বের পৌত্র- ভুবনেশ কোমকলি৷ চয়ন করেছিলেন রাগ মারুবেহাগ৷ গাইলেন তিন লয়ে তিনখানি বন্দিশ৷ পরে শোনালেন রাগ গৌরি বসন্ত৷ তাঁকে সহযোগ প্রদান করেন- আশিস সেনগুপ্ত (তবলা) ও সুপ্রিয়া মোদক যোশি (হারমোনিয়াম)৷
দ্বিতীয় দিনের অধিবেশন শুরু হয়- সোহিনী সিংহ মজুমদারের কন্ঠসংগীতে৷ মূলতানি রাগের আধারে “গোকূল গাব কে ছোঁড়া”(একতাল) গেয়ে চলে যান দ্রুত লয়ের বন্দিশে৷ পরে চয়ন করেন দাদরা৷ উপভোগ্য এই পর্বের সহযোগী শিল্পীরা ছিলেন, দেবজিত পুতিতুন্ডী (তবলা)ও সুব্রত ভট্টাচার্য(হারমোনিয়াম)৷ সরোদে সৌগত রায়চৌধুরি রাগ মধু-মালতী উপস্থাপন করেন৷ সহযোগে ছিলেন দীপরঞ্জন ঘোষ৷ গানে অম্বরীশ দাস ভীমপলাশী শোনালেন৷ তার পরবর্তী পরিবেশনা ছিল রাগ বসন্ত৷ সহযোগে ছিলেন কৌশিক ব্যানার্জি (তবলা) ও রতন ভট্টাচার্য(হারমোনিয়াম)৷ এরপর সন্তোষ সন্ত বংশীবাদনের জন্য রাগ বাচস্পতি নির্বাচন করেছিলেন৷ পরে একটি ভাটিয়ালি ধুন শুনিয়ে শেষ করেন৷ তবলায় সহযোগ দেন অমিত চ্যাটার্জি৷ প্রথমদিনের শিল্পী শফিকের যমজ ভাই জনাব রফিক খাঁ তাঁর সেতারের বাজনায় ভীষণই মুগ্ধতার আবহ তৈরি করেন৷ যথাযথ সহায়তা করেন হিন্দোল মজুমদার৷ সমাপনীতে ছিল বিদুষী গুরু সঞ্চিতা ভট্টাচার্যও সম্প্রদায়ের ওডি়শি নৃত্য উপস্থাপনা৷ অর্ধ-নারীশ্বর নৃত্যপদে সূচনা করেন৷ তবে ভগবান শিবকে এখানে মঙ্গলময়রূপে উপস্থাপিত করা হয়৷ এরপর ছিল দলগত উপস্থাপনা ‘রাগেশ্রী পল্লবী’৷ অংশগ্রহণে ছিলেন সঞ্চিতা ড্যান্স ফাউন্ডেশনের- অমৃতা, অঞ্জলি, সৃজনী, অনুশ্রী ও তমালিকা৷ এটির কোরিওগ্রাফি গুরু সঞ্চিতা ভট্টাচার্যনিজেরই৷ তৃতীয়টি ছিল সঞ্চিতার একক নৃত্যপদ ‘দ্রৌপদী’৷ মুগ্ধ করে নৃত্যাভিনয়৷ শেষে ছিল ‘আমার দুর্গা’ নৃত্যপদের উপস্থাপনা৷ এই অংশটির সুররচনা করেছেন- পন্ডিত তরুণ ভট্টাচার্য৷
তৃতীয়দিনেj অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা ছিলেন মহুয়া মুখার্জি(কন্ঠ), পন্ডিত শৈলেশ ভাগবত (সানাই), নিশান্ত ভেঙ্কটেশ (কন্ঠ), রামচন্দ্র ভাগবত (বেহালা)৷ বেনারস ঘরের বিশিষ্ট তবলাবাদক পণ্ডিত রাজকুমার মিশ্র অনুষ্ঠানে একক লহরা পরিবেশন করেন৷ আর নবম কনফারেন্সের সমাপন ঘটান বিশিষ্ট সরোদবাদক পন্ডিত বসন্ত কাবরা৷ তবলা সহযোগে ছিলেন পন্ডিত সমীর চ্যাটার্জি৷
শিশুদের মনোবিকাশে ধ্যান
ব্রজ গোপিকা সেবা মিশন জোর দিচ্ছে শিশুদেন মনোবিকাশে৷ তাঁদের উদ্ভাবিত রূপধ্যান সাধনার এক অনন্য ধারা যা ঈশ্বরের কাছে মানুষের পৌঁছে যাওয়ার পথ আরও সহজ করে৷ যাঁরা আধ্যাত্মিকতার মধ্যে জীবনের আনন্দ ও ভক্তি খোঁজেন এই সহজ পন্থা তাঁদেরই জন্য৷ এমনই মনে করেন স্বামী যুগলশরণ৷ বর্তমানে তিনি কলকাতা এবং পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন শহর থেকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন আনন্দময় জীবনে উত্তরণের ঘটানোর উপায় নিয়ে৷ প্রতিষ্ঠা করেছেন ব্রজ গোপিকা সেবা মিশন৷ মনোবিকাশ ও সামাজিক শিক্ষার পাশাপাশি কেরিয়ার অপর্চুনিটি কোর্সও এখানে করানো হয়৷ যার মাধ্যমে করোনার সময় দেশজুডে় অন্তত চার হাজার মানুষ করোনার ভীতি কাটাতে মানসিক শক্তি অর্জন করেছেন৷
কোনও শিক্ষা শুরু করার প্রকৃষ্ট সময় শৈশব৷ তাই বালসংস্কার শিবির আয়োজন করে প্রথমে তাদের মনের গঠন উপযুক্ত করা, তারপরে যুব উত্থান শিবিরের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের মনকে আধ্যাত্মিকতার পথে পরিচালনা করে দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটি প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলার শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে৷ সঙ্কটের সময়ে মতি স্থির রাখার শিক্ষা দিচ্ছেন৷
স্বামী যুগলশরণ প্রথম থেকেই মেধাবী ছাত্র৷ আধ্যাত্মিকতার টানে ছেডে়ছেন জিওলডিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার বরিষ্ঠ বৈজ্ঞানিকের চাকরি৷ তাতেও সন্ত্তষ্ট হননি৷ এখন আর্তের সেবা ও শিশুদের কল্যাণে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন স্বামী যুগলশরণজি৷ বৈষ্ণব বংশে জন্ম নেওয়া এই সন্ন্যাসী অবশ্য নিজেকে গুটিয়েই রাখেন, তাঁর আধ্যাত্মিক গুরু কৃপালুজি মহারাজের প্রচারক হিসেবে নিজের পরিচয় দিতেই তিনি বেশি স্বচ্ছন্দ৷ সঙ্গে আলোর পথ দেখানো৷ তাঁর জীবনের মূল মন্ত্র যেন-তমসো মা জ্যোতির্গময়৷
শতবর্ষে ছবি
বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসে সেই চৈতন্য পরবর্তীকাল থেকে একেবারে বিশ শতক পর্যন্ত কীর্তনের আবেদন কখনও ম্লান হয়নি৷ ১৯৩৭ সালে দিলীপকুমার রায়কে লেখা চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছিলেন যে বাংলা কীর্তন শাখায় প্রশাখায় ফুলে ফলে পল্লবে সঙ্গীতের আকাশে স্বকীয় মহিমা অধিকার করে রয়েছে৷ বিশ শতকে বংলা পদকীর্তন ও পদাবলী কীর্তনের জগতে এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী সঙ্গীতজ্ঞা ছিলেন গীতশ্রী ছবি বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁর জন্ম বাঙালি স্বাদেশিকতার এক যুগ সন্ধিক্ষণে, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের প্রয়াণের আশেপাশে৷ তাঁ সঙ্গীত সাধনা ছিল দীর্ঘকালব্যাপী এবং চিত্র-বিচিত্র৷ দেশাত্মবোধক এবং নানা ভক্তিগীতি ছাপিয়ে এই গান শেষ পর্যন্ত পদাবলী কীর্তনে স্থিত হয়৷ বহু শত রেকর্ড ও ছায়াছবির নেপথ্য কন্ঠ তার উজ্জ্বল সাক্ষ্য৷ তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকাও ছিলেন৷ আজীবন সঙ্গীত সাধনা ক্রমশ সাধনার সঙ্গীতে উন্নীত হয়েছিল৷
ছবি বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম শতবর্ষের প্রাক্কালে তাঁর ছাত্রছাত্রী এবং অনুরাগীবৃন্দ রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, গোলপার্ক -এর সহযোগিতায় এক সঙ্গীত শ্রদ্ধাঞ্জলির আয়োজন করেছে আগামী ৭ জুন, শুক্রবার, বিবেকানন্দ হলে, বেলা তিনটেয়৷ উদ্বোধন করবেন স্বামী সুপর্ণানন্দজি মহারাজ এবং বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সঙ্গীত শিল্পী হৈমন্তী শুক্লা ও মহামিলন মঠের কিংকর সামানন্দ৷ এই উপলক্ষে গীতশ্রী ছবি বন্দ্যোপাধ্যায়ের গীতশ্রীর জীবনালেখ্যসহ স্মারক গ্রন্থ ‘ছবি-অর্ঘ্য’ (সম্পাদনা : উমা চট্টোপাধ্যায় ও অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়) প্রকাশিত হবে৷ যার প্রকাশক ‘সূত্রধর’৷
নিসর্গগাথা
তিনি বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী ছিলেন৷ বাংলা ভাষাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছেন৷ তাই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন শিক্ষকতা৷ কিন্ত্ত এ সত্ত্বেও তিনি নিয়মিত করে চলেছেন চিত্রচর্চা৷ রঙরূপের এই চর্চায় তিনি প্রকৃতিকে প্রস্ফুটিত করে চলেছেন তাঁর তুলিতে৷ তিনি একাধারে শিল্পীদের নিয়ে অনেক প্রদর্শনীর পরিকল্পনা করেছেন৷ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীদের নিয়ে অনেক প্রদর্শনী সংগঠিত করেছেন৷ তিনি এই সময়ের একজন উল্লেখযোগ্য শিল্পী সুশান্ত দাস৷ সম্প্রতি তাঁর একক চিত্র প্রদর্শনী হয়ে গেল কলকাতার চারুবাসনা সুনয়নী আর্ট গ্যালারিতে যা যোগেন চৌধুরী সেন্টার ফর আর্টস নামেও পরিচিত৷ প্রদর্শনীর সময়কাল ছিল ৩১ মে পর্যন্ত৷ প্রদর্শনীর উদ্বোধনে ছিলেন যোগেন চৌধুরী, সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়, সমীর আইচের মতো শিল্পীরা৷ বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রসেনজিৎ মুখার্জি৷ প্রদর্শনীর শিরোনাম সাগা অফ নেচার বা নিসর্গগাথা৷ বেদনার মধ্যে স্বপ্নিলভাষা আর না উচ্চারিত বাণী৷ গাছ-পাতা আর ফুলগুলির পালাগানের অনন্যতা ঘিরে রেখেছে ছবির শরীর৷ রঙ তুলির প্রয়াসে প্রকৃতির রূপসন্ধান, যা দর্শকদের মুগ্ধতাবোধে আঁচ.ড় কাটে৷ জমি বিভাজন বা রঙরূপের মূর্ত বিমূর্ত রূপ ধরা পড়েছে দর্শকদের মনে৷ নির্মাণ কৌশল এবং কাব্যময়তা মিলেমিশে একাকার৷