নিজস্ব প্রতিনিধি – নির্বাচন কমিশন ‘অনুমতি’ দিক বা না-দিক, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার জলপাইগুডি়তে ঝডে় দুর্গতদের ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে দেবে৷ ‘‘নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা থাকলে আমার এবং আমার সরকারের বিরুদ্ধে এফআইআর করবে৷ কিন্ত্ত আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা ঝড়ে গৃহহীন মানুষদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকবে’’, শুক্রবার জলপাইগুড়ির মঞ্চ থেকে স্পষ্ট বার্তা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়৷ তিনি আরো বলেন, রাজ্য সরকার তরফ থেকে ইতিমধ্যেই ঝড়ে গৃহহীন মানুষদের কুড়ি হাজার টাকা এবং যারা স্বল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের পাঁচ হাজার টাকা অর্থ সাহায্য করা হয়েছে৷ তবে নির্বাচন শেষের এক সপ্তাহের মধ্যেই যারা পাঁচ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তাদের আরো কুড়ি হাজার টাকা দেওয়া হবে৷ আসামে বিহু উৎসবের জন্য টাকা দেওয়ার প্রসঙ্গে ফের নির্বাচন কমিশনকে আক্রমণ করেন অভিষেক৷ তাঁর ভাষায়, আসামে বিজেপি ক্ষমতায় আছে বলেই উৎসব পালনের জন্য টাকা দেওয়া হলো কিন্ত্ত বাংলায় অন্য সরকার তাই মানবিক কারণের জন্যও রাজ্য সরকারকে দুর্গতদের অর্থ সাহায্যের অনুমতিটুকু দেওয়া হলো না৷
কিভাবে এই অর্থ সাহায্য করা হবে তার ব্যাখ্যা দেন অভিষেক৷ তাঁর ভাষায়, আগামী সোমবারের মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তরা ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পাবেন৷ তার মধ্যে ৪০ হাজার টাকা এখনই দেওয়া হবে, ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে আর ইউসি জমা দিলে কাজ শুরু হবে বাকি ৬০ হাজার টাকা তারপরই পাবেন মানুষেরা৷ এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝডে়র ১২ দিন পরে এখনও বিপর্য্যস্ত অঞ্চলের দুর্গতদের অনেকেই খোলা আকাশের নীচে ত্রিপল টাঙিয়ে রয়েছেন বলে অভিযোগ৷ এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক নির্বাচনী জনসভায় জানিয়েছেন, নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি চালু থাকায় তিনি সরকারি ভাবে কোনও ঘোষণা করতে পারবেন না৷ এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনও বিমুখ হয়েছেন৷ এসব টানাপোড়েনের মধ্যেই এই ঘোষণা করে দিলেন অভিষেক৷
অভিষেক স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘‘এক একটা মানুষের জীবন আমাদের কাছে মণিমুক্তের মতো৷ মানুষের জীবনের এক এক মিনিট গুরুত্বপূর্ণ তাই দুর্যোগের রাতেই মুখ্যমন্ত্রী বাগডোগরায় পৌঁছে গিয়েছিলেন৷ এমনকি যে দুটি বাচ্চাকে আমি দেখতে গিয়েছিলাম তারাও বর্তমানে সুস্থ এবং বাড়ি ফেরার পথে৷’’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার দুর্গতদের যে ক্ষতিপূরণ বাবদ এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা করে দেবে সেটা তৃণমূলের উপহার নয়, সাধারণ মানুষের অধিকার৷ যাকে ইচ্ছে ভোট দিন, পরিষেবা আপনাকে তৃণমূল দেবে৷’’ মঞ্চ থেকেই কেন্দ্রকে আক্রমণ শানিয়েছেন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘এই মাঠে সভা করে গেলাম, আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে যদি বিজেপি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে দেখাতে পারে তারা ২০২১ এর পর বাংলায় আবাসের জন্য দশ পয়সা দিয়েছে তাহলে আমি রাজনীতি থেকে চিরতরে অবসর নেবো৷’’ এই ঝড়ে গৃহহীন মানুষদের যাঁরা খোঁজ নেননি তাঁরাই বাংলায় বলেন ‘মোদী গ্যারান্টি’৷ এরাই আবাস থেকে রাস্তা, একশো দিনের কাজের টাকা বাংলায় বন্ধ করেছে৷ তিনি দৃঢ় কণ্ঠে মঞ্চ থেকে বলেন, ‘‘বিজেপির মডেল – না ঘর দুঙ্গা, না ঘর দেনে দুঙ্গা৷ কিন্ত্ত তৃণমূলের মডেল – তৃণমূলই দেগা, তৃণমূলই কারেগা, মিলেগা তো তৃণমূল সে হি মিলেগা৷’’ পাশাপাশি তিনি প্রমান দিয়ে ‘দিদি গ্যারান্টি’ বনাম ‘মোদী গ্যারান্টি’ এর তুলনামূলক আলোচনা করেছেন৷ প্রধানমন্ত্রী একটি জনসভা থেকে বলেছেন, যাঁরা মাছ খান তাঁরা হিন্দু বিরোধী৷ এই প্রসঙ্গেই প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, বিজেপি সকলকেই হিন্দু বিরোধী বলছে৷ বিজেপি কেবল মানুষের ভোট চায়না, বরং মানুষ কি পড়বেন, কি খাবেন, কাকে ভালোবাসবেন সব কিছুর নিদান দেবে কেন্দ্র সরকার৷ সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপির থেকে রিপোর্ট কার্ড চাইবেন৷ জানতে চাইবেন এই ময়নাগুড়ি থেকে বার্নিশ বা এই জেলার জন্য কি করেছে বিজেপি সরকার?’’