‘কেন এখনও শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হল না?’, লোকসভায় নির্মলাকে প্রশ্ন অভিষেকের

প্রশান্ত দাস:  ‘শ্বেতপত্র প্রকাশে ব্যর্থ হয়েছেন! একটি প্রশ্নেরও যথাযথ উত্তর দিতে পারেন না’, লোকসভায় নির্মলাকে আক্রমণ অভিষেকের “কাগজ মিথ্যে বলে না”, মঙ্গলবার লোকসভায় গর্জে উঠে জানালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন অভিষেক সরাসরি তোপ দাগলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বিরুদ্ধে।

উল্লেখ্য, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির পরাজয়ের পর আবাস এবং একশো দিনের কাজে এ রাজ্যে এক পয়সাও বরাদ্দ করেনি বিজেপি। এই অভিযোগ পূর্বেই তুলেছিলেন তৃণমূলের সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। এমন অভিযোগ তিনি তুলেছিলেন চলতি বছরের ১৪ই মার্চ অর্থাৎ লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে। কিন্তু, বিজেপির বরাবরের দাবি, বাংলাকে তাঁরা অর্থ দিয়ে আসছে। বরং বাংলার শাসকদলই সেই অর্থের অপব্যবহার করছে। অভিষেক এ প্রসঙ্গেই বিজেপির নিজ বক্তব্য প্রমাণের জন্য শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছিলেন। ছুঁড়ে দিয়েছিলেন ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ’। এরপর কেটে গিয়েছে চার মাস, বিজেপি শ্বেতপত্র প্রকাশের সামান্য ইচ্ছেটুকু প্রকাশ করেনি।

এবার এই প্রসঙ্গ তুলেই লোকসভায় আওয়াজ তুলল বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দল তৃণমূল কংগ্রেস। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তথা অন্যান্য বিজেপি নেতৃত্ব শ্বেতপত্র প্রকাশ না করে অভিষেকের ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ’ গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছেন। লোকসভায় এমনই অভিযোগ তুলে ওয়াক আউট করে তৃণমূল সাংসদগণ। অভিষেক এদিন নির্মলার উদ্দেশ্যে বলেন, “লোকসভার পরে যখন রাজ্যসভায় বাজেট পেশ করা হয়েছে, তখন অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, বিগত দশ বছরে বাংলার সরকার কেন্দ্রের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহারে ব্যর্থ হয়েছে। আমি একটি সহজ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে চাই, ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় হারার পর বিজেপি কি আবাস এবং একশো দিনের কাজে বাংলায় এক পয়সাও বরাদ্দ করেছে? ২৯জন তৃণমূল সাংসদ উপস্থিত রয়েছেন এই কক্ষে। তিনি (নির্মলা) শ্বেতপত্র প্রকাশে ব্যর্থ হয়েছেন! দুই কক্ষেই তিনি ক্রমাগত মিথ্যে কথা বলে বাংলা তথা ভারতের মানুষদের ভুল পথে চালিত করেছেন। তিনি একটি প্রশ্নেরও যথাযথ উত্তর দিতে পারেন না।”


এ প্রসঙ্গে অভিষেকের আরও সংযোজন, “আজ আমার কাছে শ্বেতপত্র থাকলে আমি তা নিয়ে বলতে দ্বিধাবোধ করতাম না। তাঁরা জনসমক্ষে শ্বেতপত্র প্রকাশে ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ তাঁদের কাছে এমন কোনও তথ্যই নেই। বরং কেন্দ্র সরকার বাংলার ১.৭২ লক্ষ কোটি টাকা আটকে রেখেছে।” নীতি আয়োগের বৈঠকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মাইক বন্ধ করে দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলেও এদিন আক্রমণাত্মক হন অভিষেক। তিনি বলেন, “তিনি (মুখ্যমন্ত্রী) জনসাধারণের দাবিগুলি তুলে ধরতেই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। আমরা আমাদের অধিকারের জন্য মাথা নত করতে রাজি আছি, কিন্তু ভিক্ষা করতে নয়।”

অভিষেকের আরও সংযোজন, “তাঁরা নিজ বক্তৃতায় (বাজেট) বাংলার নাম পর্যন্ত উল্লেখ করেননি। তাঁরা ক্রমাগত গরিব এবং গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে চলেছেন। দেশের জনতা সব দেখছে।” অভিষেকের স্পষ্ট প্রশ্ন, “কেন এখনও শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হল না?” বাংলা থেকে ১২ জন বিজেপি সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কেউই কেন্দ্র সরকারকে চিঠি লিখে শ্বেতপত্র প্রকাশের জন্য আবেদন জানাননি, কটাক্ষের সুর চড়িয়ে বিরোধীদের খোঁচা অভিষেকের। রাজনীতি সরিয়ে সাম্যতা এবং উন্নয়নের পথে হাঁটাতেই বিশ্বাসী তৃণমূল, দলীয় আদর্শ তুলে ধরে লোকসভায় ভাষণ যুবরাজের।

তাঁর ভাষায়, “আমরা আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়িতে হেরেছি। খুঁজুন, একজন মহিলাও এমন নেই, যিনি বলবেন লক্ষীর ভান্ডার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। পুরুলিয়া, কাঁথি থেকেও এমন একজন মেয়ে পাবেন না, যে কন্যাশ্রী থেকে বঞ্চিত। আমরা রাজনৈতিক ভেদাভেদ করিনা। যাঁরা এমন বলেন, তাঁরা কেবল মানুষকে ভুল পথে চালিত করছেন।”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভোট প্রচারে উত্তরবঙ্গ গিয়েছিলেন অভিষেক। সেখানে ময়নাগুড়ির জনসভা থেকে ১৪ই মার্চ অভিষেক আত্মবিশ্বাসে ভর করে বলেছিলেন, “আমি বিজেপি নেতৃত্বদের আমার সঙ্গে মুখোমুখি তর্কে বসার চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি। ২০২১ সালে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকে আবাস যোজনা এবং ১০০ দিনের কাজের মতো প্রকল্পগুলিতে ১ পয়সাও বরাদ্দ করেনি কেন্দ্র। আমি ভুল কি না, তা প্রমাণ করার জন্য বিজেপিকে শ্বেতপত্র প্রকাশ করার চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি।” ওইদিন নিজ এক্স হ্যান্ডেলেও এই বিষয়ক ট্যুইট করেছিলেন অভিষেক। এবার কোনও ট্যুইট বা সভা থেকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া নয়, বরং লোকসভাতেই জোর গলায় আওয়াজ তুললেন তৃণমূল সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।