বারবার আমরাই কেন টার্গেট, উত্তর খুঁজছেন নবান্ন অভিযানে আক্রান্ত পুলিশকর্মীরা 

‘আমরাই কেন? আমাদের কী দোষ? আমরা তো আমাদের কাজ করছিলাম।’, মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানে আহত পুলিশকর্মীরা বলছেন এমনটাই। ডিউটি শেষ করে অন্যদের মতো তাঁদেরও বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তার পরিবর্তে বর্তমানে আহত বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মীর ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালে। সেখান থেকে পরিজনদের ফোন করে এমনটাই বলছেন তাঁদের অনেকে। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা উপেক্ষা করে দিনের পর দিন তাঁদের ডিউটি করতে হয়। যদিও কর্তব্য করতে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। কিন্তু শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সহিংস হওয়ায় প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এতকিছুর মধ্যেও তাঁদের বাড়তি আস্থা ও ভরসা জোগাচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশকে কুর্নিশ জানিয়ে বুধবার মেয়ো রোডে প্রকাশ্য সমাবেশ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘পুলিশের রক্ত ঝরেছে। মাথা ফেটেছে। তার পরেও পুলিশ সংযত থেকেছে। আমি পুলিশ কর্মীদের স্যালুট জানাচ্ছি।’

উল্লেখ্য, ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’ এবং ‘সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ’র ডাকে নবান্ন অভিযানে সামিল হয়েছিলেন অনেকেই। তথাকথিত ছাত্রদের নবান্ন অভিযানে অবশ্য পড়ুয়াদের তুলনায় মাঝ বয়সীদের ভিড়ই ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রথম থেকে ‘শান্তিপূর্ণ’ মিছিল বলা হলেও, বেলা যত গড়িয়েছে, ততই রণক্ষেত্র হয়েছে পরিস্থিতি। যদিও প্রথম থেকে কলকাতা পুলিশের তরফে বারবার আন্দোলনকারীদের বলা হয়, শান্তিপূর্ণভাবে ফিরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সেকথা আমল না দিয়ে শুরু হয়  গার্ডরেল ভাঙার চেষ্টা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে জল কামান চালায় কলকাতা পুলিশ। ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল, ছোড়া হয় স্মোক বম্ব। তারপরেই শুরু হয় পুলিশকে লক্ষ্য করে পাল্টা ইট ছোড়া।

কোথাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট বৃষ্টি, আবার কোথাও পুলিশের গাড়িতে ধরিয়ে আগুন। সব মিলিয়ে মঙ্গলবারের ঘটনায় আন্দোলনকারীদের হাতে আহত হয়েছেন মোট ৩৬জন পুলিশকর্মী। তার মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৫জন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন আনন্দপুর থানা এবং প্রগতি ময়দান থানার ওসিও। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁদের। অন্যদিকে মঙ্গলবারের ঘটনায় গুরুতর জখম হন কলকাতা পুলিশের সার্জেন্ট দেবাশিস চক্রবর্তী। আন্দোলনকারীদের ছোড়া ইট বাঁ চোখে লাগে তাঁর। তারপরেই তড়িঘড়ি তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁর রেটিনা এবং কর্নিয়া প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। সূত্রের খবর, হায়দ্রাবাদে তাঁর চিকিৎসা করানো হবে।


এর আগেও একাধিকবার বিভিন্নভাবে আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ। কখনও সাধারণ মানুষের হাতে, কখনও আবার আন্দোলকারীদের হাতে। কিন্তু পুলিশ কর্মীদের প্রশ্ন একটাই, ‘আমরা তো সাধারণ মানুষের জন্যই রাস্তায় থাকি। তাদের ভাল মন্দ আমরা সব সময় দেখি। কিন্ত তাও আমাদের উপর হাত ওঠে।’ অন্যদিকে সদ্য হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া যেমন আমাদের কাজ। ঠিক তেমনি রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখাও আমাদের কাজ। সেই কারণে সারা বছর নিজের পরিবারকে সময় না দিয়ে রাস্তায় থাকি। কিন্তু তাতেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিলে কোনও ভাবেই বাধা দিই না।’ পাশাপাশি আরও এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘মনে হচ্ছিল, আর হয়তো বাড়ি ফিরতে পারব না। ওরা এমনভাবে আমাদের দিকে ইট ছুড়ছিল।’ অন্যদিকে এক পুলিশকর্তা এই ঘটনার জন্য দুষলেন সমাজ মাধ্যমের ভুল খবরকে। তাঁর কথায়, ‘আর জি কর-এর ঘটনায় অনেক কিছুই ভুল তথ্য ছড়িয়েছে সমাজ মাধ্যমে। আমরা বারবার সেই সমস্ত তথ্য থেকে সাধারণ মানুষকে দূরে থাকতে বলেছি। বিবৃতিও দিয়েছি। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। যার ফলস্বরূপ পুলিশের উপর এই ক্ষোভ।’

প্রসঙ্গত, ১৪ আগস্ট রাতে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের সামনে অশান্তির জেরে আহত হয়েছিলেন মানিকতলা থানার ওসি দেবাশিস দত্ত। আন্দোলনকারীদের হাসপাতালে ঢুকতে বাধা দেওয়ায় ঠিক একইভাবে আক্রান্ত হন তিনিও। তবে শেষ পর্যন্ত রক্তাক্ত অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে দেখা যায় তাঁকে।