• facebook
  • twitter
Sunday, 8 September, 2024

সম্পদ বেড়েছে কার?

এ বছর নির্বাচনী খরচের সীমা বেঁধে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ তাতে প্রতি লোকসভা কেন্দ্রের জন্য সর্বাধিক এক কোটি টাকা খরচের অনুমতি দেওয়া হয়েছে একজন প্রার্থীকে৷ কেন্দ্রের শাসক দলের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৫-১৬ থেকে ২০২২-২৩ সালের নির্বাচন পর্যন্ত দলের মোট খরচ হয়েছে ৫ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা৷ যদিও সেন্টার ফর মিডিয়া স্টাডিজ (সিএমএস) তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, শুধু

এ বছর নির্বাচনী খরচের সীমা বেঁধে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ তাতে প্রতি লোকসভা কেন্দ্রের জন্য সর্বাধিক এক কোটি টাকা খরচের অনুমতি দেওয়া হয়েছে একজন প্রার্থীকে৷ কেন্দ্রের শাসক দলের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৫-১৬ থেকে ২০২২-২৩ সালের নির্বাচন পর্যন্ত দলের মোট খরচ হয়েছে ৫ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা৷ যদিও সেন্টার ফর মিডিয়া স্টাডিজ (সিএমএস) তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, শুধু ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনেই মোদির দল খরচ করেছে ২৭ হাজার কোটি টাকা৷ বিজেপির এক সর্বভারতীয় নেতা জানিয়েছেন, দেশের ২৯০টি জেলায় ইতিমধ্যে দলের জেলা অফিস তৈরি হয়েছে, আরও ৯০০টি জেলা অফিস (এক জেলায় একাধিক অফিস) তৈরির প্রস্ত্ততি চলছে৷ এছাড়াও দলের রয়েছে একাধিক জমি ও বানি৷ এইসব সম্পত্তি শুধু রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই ২০২৩ সালে বিজেপিকে খরচ করতে হয়েছে ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা৷

মোদি জমানার শুরুতে ২০১৪-১৫ সালে দলের আয় ছিল ৯৭০ কোটি টাকা৷ ২০১৮-১৯ সালে তা বেড়ে হয় ২ হাজার ৪১০ কোটি টাকা৷ তার ঠিক পরের বছরই আয় আরও বেড়ে হয় ৩ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা৷ আগে দিল্লির অশোকা রোডে ছিল বিজেপির সদর দফতর৷ ২০২১ সালে সদর দফতরের ঠিকানা বদলে যায়৷ বর্তমানে দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে, এক লক্ষ ৭০ হাজার বর্গফুট এলাকাজুড়ে প্রাসাদোপম দলীয় কার্যালয় তৈরি হয়েছে৷ দিল্লি ছাড়া বিভিন্ন রাজ্যেও এই দলের রাজ্য দফতর তৈরি হয়েছে৷ যেমন অসমে এক লক্ষ বর্গফুট এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে রাজ্য দফতর৷ মধ্যপ্রদেশের ভোপালে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে সদর দফতর৷ তামিলনাড়ুতে বিজেপি একটিও লোকসভা আসন জিততে পারেনি৷ সেখানেও পাঁচতলা রাজ্য দফতর তৈরি হয়েছে৷ আবার বেঙ্গালুরু ও চেন্নাইয়ের মাঝে কৃষ্ণগিরি জেলায় গত বছর উদ্বোধন হয়েছে নতুন রাজ্যভবন৷ ওড়িশাতেও তৈরি হয়েছে রাজ্য ভবন৷ অফিস-বাড়ির নামে রাজ্যে রাজ্যে এই বিপুল সম্পদ তৈরির সব হিসাব অবশ্য এখনও জানা যায়নি৷

মাত্র দশ বছরে এই বিপুল ধনসম্পদ করায়ত্ত করেছে যে শাসক দল তাদের আমলে সাধারণ মানুষ কেমন আছেন? মোদির ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’-এর প্রকৃত অর্থ কী? ‘ফকির’ থেকে ‘ঈশ্বরের দূত’ হয়ে ওঠা প্রধানমন্ত্রী কাদের স্বার্থ দেখছেন? প্যারিস স্কুল অফ ইকোনমিক্স ‘ওয়ার্ল্ড ইন ইকুয়ালিটি ল্যাব’-এ গবেষণারত একদল প্রথম সারির অর্থনীতিবিদের মতে, মোদি জমানায় আর্থিক অসাম্য ভারতে ব্রিটিশ জমানাকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে৷ তাঁদের মতে, ভারতে এখন আধুনিক বুর্জোয়া শ্রেণির নেতৃত্বে ধনকুবেরদের রাজত্ব চলছে৷ তাঁদের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভারতের মোট সম্পদের ৪০ শতাংশ রয়েছে এক শতাংশ ব্যক্তির হাতে৷ দেশের মোট আয়ে তাদের ভাগ ২২ শতাংশের বেশি৷ আয়ের বিচারে পিছনে থাকা অর্ধেক মানুষের আয় মোট আয়ের ১৯ শতাংশ৷ সম্পদের বিচারে দেশের এক শতাংশ মানুষের আয় বছরে ৪৩ লক্ষ টাকা৷ আর সবচেয়ে ধনী ১০ হাজার ব্যক্তির গড় আয় বছরে ৪৮ কোটি টাকা৷ এর পাশাপাশি ওই নীচের দিকে থাকা ৫০ শতাংশের গড় আয় বছরে মাত্র ৭১ হাজার টাকা৷

শুধু প্যারিসের এই সংস্থাই নয়, অক্সফ্যাম সহ আরও কয়েকটি সংস্থার মূল্যায়নও প্রায় একই৷ সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন হয়নি মোদি জমানায়, উন্নয়ন হয়েছে শাসক দল বিজেপির৷ চোখ ধাঁধানো প্রতিশ্রুতি, মোহ, স্বপ্ন৷ অন্ধকার বাস্তবের ওপর গড়ে ওঠা ঝাঁ-চকচকে ইমারত৷ ৪০০ পারের স্লোগান৷
দিল্লির ভোটে কানহাইয়া কুমারকে বুথের বাইরে প্রশ্ন করা হয়েছিল, মোদির ৪০০ পার নিয়ে কী বলবেন? কানহাইয়ার উত্তর ছিল: ওটা বিজেপির আসন নয়, মোদিজি ওটা পেট্রোলের দাম বলছেন, বিজেপি জিতে এলে৷