নিয়োগ দুর্নীতিতে সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে অনুমতি কে দেবে? ফের প্রশ্ন হাইকোর্টের

মোল্লা জসিমউদ্দিন: চলতি সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে অনুমতি বিষয়ক মামলায় পুনরায় উঠলো প্রশ্নচিহ্ন৷ নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সরকারি আধিকারিকদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর অনুমতি কে দেবেন, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন৷ এই মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এ ব্যাপারে মুখ্যসচিব বিপি গোপালিকার অবস্থান জানতে চেয়েছেন৷ এ ব্যাপারে আইন কী বলছে? তা রাজ্যকে আদালতে জানাতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি৷

এসএসসি চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারির বিরুদ্ধে বিচারের অনুমতি কে দেবে, সেই নিয়ে চর্চা চলেছিল৷ রাজ্য সরকার না, রাজ্যপাল? কার নির্দেশ প্রয়োজন? চলতি সপ্তাহে এই মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর এজলাসে৷ সেখানেই রাজ্যের মুখ্য সচিবের মতামত চাইল হাইকোর্ট৷ আগামী ১১ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি৷ সেই দিনই রাজ্যের বক্তব্য জানাতে বলেছেন বিচারপতি৷ সিবিআইয়ের তরফে আইনজীবী বলেন, ‘চিফ সেক্রেটারির কাছেই তারা আবেদন পাঠাবেন৷ সেই আবেদন সেখান থেকে রাজ্যপালের কাছে যাবে৷ কারণ চেয়ারম্যান, সেক্রেটারি নিয়োগ করে স্ট্যাটুটরি কমিটি৷ বাকি অফিসারদের নিয়োগ করে সরকার৷ ফলে তাদের ক্ষেত্রে বিভাগীয় সচিব বা মুখ্যসচিব অনুমোদন দিতে পারেন’৷ বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি শুনানি পর্বে প্রশ্ন করেন রাজ্যের এজিকে৷ মুখ্যসচিব রাজ্যপালকে সুপারিশ করতে পারে? মুখ্যসচিবকে জানাতে হবে, তিনি তাদের অনুমোদন দিতে পারেন কী না? না কী অন্য কেউ অথরিটি? তিনি কে? আইন ঠিক কী বলছে৷ এটা রাজ্যের উত্তর দেওয়া দরকার’৷ নিয়োগ দুর্নীতিতে সুবীরেশ ভট্টাচার্য, শান্তিপ্রসাদ সিনহা, সৌমিত্র সরকার, অশোক সাহার মতো এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান, সেক্রেটারিদের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর অনুমোদন কে দেবেন? তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ধোঁয়াশা রয়েছে৷ আদালতের নির্দেশের পরেও নানা কারণ দেখিয়ে এদের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাননি মুখ্যসচিব বিপি গোপালিকা৷ এজন্য কলকাতা হাইকোর্টের কড়া মন্তব্যের মুখেও পড়তে হয় তাঁকে৷

কিন্ত্ত গত শুনানিতে অভিযুক্তদের এক আইনজীবী বলেন, ‘শান্তিপ্রসাদসহ বেশ কয়েকজনের নিয়োগকর্তা রাজ্যপাল৷ তাই তাঁদের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর অনুমতি দেওয়ার এক্তিয়ারই নেই মুখ্যসচিবের’৷ এরপর সিবিআইকে তুমুল ভৎর্‌সনা করেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী৷ তিনি বলেন, ‘আপনারা কেমন তদন্তকারী সংস্থা? ২ বছর ধরে অভিযোগ করছেন যে মুখ্যসচিব অনুমতি দিচ্ছেন না৷ অথচ জানেন না যে তাঁর অনুমতি দেওয়ার এক্তিয়ারই নেই? আর আপনাদের কথা শুনে আমরা মুখ্যসচিবকে কড়া কড়া কথা বলে চলেছি?’ চলতি সপ্তাহে এই মামলার শুনানিতে সিবিআইয়ের আইনজীবী দাবি করেন, ‘আইন অনুসারে সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর আবেদন মুখ্যসচিবের কাছেই পাঠাতে হবে৷ তিনি রাজ্যপালের কাছে সেই আবেদন পাঠাবেন৷’ এরপর রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তকে হাইকোর্ট বলে, ‘মুখ্যসচিব রাজ্যপালকে সুপারিশ করতে পারেন কি না? তা তাঁকে জানাতে হবে৷ এক্ষেত্রে আইন ঠিক কী বলছে তা আদালতকে জানাতে হবে রাজ্যকে৷’ বিচারপতি আরও বলেন, ‘এমনও হতে পারে, পদাধিকারবলে রাজ্যপাল এদের নিয়োগকর্তা হলেও বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর বিষয়টি মুখ্যসচিবের হাতে ন্যস্ত থাকতে পারে৷ এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন মুখ্যসচিবকে আদালতে তাঁর জবাব জানাতে হবে৷’