আরজি করে তরুণ চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। এমনই এক আবহে আজ বুধবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কী বার্তা দেন, তা নিয়ে যথেষ্ট কৌতূহল রয়েছে। আরজি করের ঘটনাকে সামনে রেখে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে বিরোধীরা। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে এমন কোনও ইস্যু বিরোধীদের কাছে ছিল না, যা মমতা প্রশাসনকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে। কিন্তু আরজি করের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে সমাজের ভিত। রাস্তায় নেমে যেভাবে মহিলারা প্রতিবাদ করেছেন সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমবঙ্গে তা দেখা যায়নি। তাই স্বাভাবিকভাবে এদিনের মঞ্চ থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো কী বার্তা দেন, এখন সেটাই দেখার। মমতা-অভিষেক ছাড়াও দলের যুব সভানেত্রী তথা সাংসদ সায়নী ঘোষেরও বক্তব্য রাখার কথা। মেয়ো রোডে গান্ধি মূর্তির পাদদেশে এই সমাবেশ হবে অন্যান্য বারের মতো। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, সমাবেশ সফল করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
বুধবার মেয়ো রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের সমাবেশ পূর্ব ঘোষিতই ছিল৷ আরজি কর কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে ওই সমাবেশ ঘিরে তুমুল আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তৃণমূলের ঘোষিত সমাবেশ থাকা সত্ত্বেও বুধবারই ১২ ঘণ্টার বাংলা বনধের ডাক দিল বিজেপি৷ ফলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমাবেশ এবং বিজেপির বনধকে কেন্দ্র করে দুই দলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল৷ নবান্ন অভিযানের পর যা পুলিশ, প্রশাসনের চিন্তা অনেকটাই বাড়িয়ে দিল৷ তবে বিজেপি আচমকা বাংলা বন্ধ ডাকায় কড়া সমালোচনা করা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। যদিও বিজেপির ডাকা বন্ধ ব্যর্থ হবে বলে পাল্টা দাবি করেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ৷ বিজেপি বাংলায় অস্থিরতা সৃষ্টির চক্রান্ত করছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি৷ এই পরিস্থিতিতে বিজেপির ডাকা বনধকে কেন্দ্র করে নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায় কি না, সেটাই দেখার৷
এদিকে, অন্যান্য দিনের মতো রাজ্যকে সচল রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে নবান্ন। কলকাতা এবং দুই ২৪ পরগনা ছাড়াও রাজ্যের অন্যান্য জেলা থেকে শাসক দলের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচিতে যোগ দেবে, এমনটাই জানা যাচ্ছে। এবার প্রতিষ্ঠা দিবসের সমাবেশের প্রথম সারিতে ছাত্রীরা থাকবেন। কলকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ থেকে আসা ছাত্রীরা বক্তব্য রাখবেন এদিনের সমাবেশে। ইতিমধ্যে তাঁদের ভাষণের বিষয়বস্তু সংগঠনের তরফে ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস কর্মসূচিকে সামনে রেখে রাজ্যের দুই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে সংবর্ধিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে রাজ্যের শিক্ষা ক্ষেত্রের সাফল্যকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হবে। দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে মমতা এবং অভিষেকের মঞ্চে আসার কথা। প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশকিছু প্রয়োজনীয় নির্দেশ ও পরামর্শ দিয়েছেন বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় ও তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যকে। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দূরবর্তী জেলা থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য। ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গের প্রতিনিধিরা কলকাতায় এসে পৌঁছেছেন। এই সমাবেশে ‘সাথী’ নামে একটি বই প্রকাশ করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বইটির নামকরণ করেছেন। প্রচ্ছদের ভাবনাও তাঁর। এছাড়া ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে কলম ধরেছেন অশোক দেব, অরূপ বিশ্বাস, বিভাস চৌধুরি, সৌরভ চক্রবর্তীরা। বৃষ্টি হতে পারে, সেই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে সমাবেশস্থল শেড দিয়ে ঘেরা হয়েছে।
এদিকে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের উদ্যোগে মহাজাতি সদনে ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচি রয়েছে। এই সভায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি এবং কানাইয়া কুমার থাকতে পারেন বলে জানা গিয়েছে।