উপযুক্ত কারণ ছাড়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার সামিল: হাইকোর্ট

মোল্লা জসিমউদ্দিন: বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ এর এজলাসে উঠে নিম্ন আদালতের এক নির্দেশ কে চ্যালেঞ্জ সংক্রান্ত মামলা।পুলিশের পাশাপাশি নিম্ন আদালতের নির্দেশ নিয়েও এবার বড় প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট। এদিন ঝাড়গ্রামের একটি মামলায় নিম্ন আদালতের নির্দেশ খারিজ করে কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, -‘এব্যাপারে রায়দানের আগে আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল’। কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, -‘উপযুক্ত কারণ ছাড়া জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা মানে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা। এই সব ক্ষেত্রে গ্রেফতার বা কারাদণ্ডের অর্থ এক জন ব্যক্তির সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অধিকারে হাত দেওয়া।’ এর পাশাপাশি বিচারপতি এও জানিয়ে দেন, -‘ কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হলে কিংবা তাঁকে সমন পাঠানোর পরও তিনি হাজির না হলে, সে ক্ষেত্রে অভিযুক্তর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা যেতে পারে’।আদালত সূত্রে জানা গেছে, ঝাড়গ্রাম আদালতে মামলাটি ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বরের।

আদালতে আবেদনকারী জানিয়েছেন, -‘ ওই মামলায় পুলিশের প্রথম এফআইআর বা অতিরিক্ত এফআইআরে তাঁর নাম ছিল না। কিন্তু আচমকা তাঁর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা তাঁর ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের শামিল’।কারও বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার জন্য যথার্থ কারণ প্রয়োজন। উপযুক্ত কারণ ছাড়া গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার অর্থ, কারও ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা। বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানিতে এই মন্তব্য কলকাতা হাইকোর্টের।পুরনো এক মামলায় ঝাড়গ্রাম আদালত থেকে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল।সেই গ্রেফতারি পরোয়ানার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি শুভ্রা ঘোষের এজলাসে মামলাটির শুনানি হয়।

সেখানেই নিম্ন আদালতের বিচারকের নির্দেশের আপত্তি জানান বিচারপতি। খারিজ করে দেওয়া হয় নিম্ন আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ।বিচারপতি ঘোষের সিঙ্গেল বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘উপযুক্ত কারণ ছাড়া জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা মানে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা। এই সব ক্ষেত্রে গ্রেফতার বা কারাদণ্ডের অর্থ এক জন ব্যক্তির সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অধিকারে হাত দেওয়া।’ নিম্ন আদালতের বিচারক নিজের বিচারবুদ্ধির প্রয়োগ করেননি বলেও মন্তব্য করে হাইকোর্ট।কোন ক্ষেত্রে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা যেতে পারে, সেটাও বৃহস্পতিবারের শুনানিতে স্পষ্ট করেছে আদালত। হাইকোর্ট জানিয়েছে, -‘কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হলে কিংবা তাঁকে সমন পাঠানো হলে, যদি তিনি তাতে গুরুত্ব না দেন, সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে আদালতে টেনে আনার জন্য জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা যেতে পারে’।


বৃহস্পতিবার বিচারপতি শুভ্রা ঘোষের বেঞ্চে যে মামলাটি উঠেছিল, সেটি ঝাড়গ্রাম থানায় ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর দায়ের হওয়া একটি মামলা সংক্রান্ত। অথচ যাঁর বিরুদ্ধে ঝাড়গ্রাম আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল, সেই ব্যক্তির প্রথম এফআইআরে নাম ছিল না। পরে অতিরিক্ত এফআইআরে নাম যুক্ত হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য কিছু ধারা এনেছিল পুলিশ। পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালে যখন পুলিশ ওই মামলায় চার্জশিট জমা দেয়, তাতেও নাম ছিল না ওই ব্যক্তির। কিন্তু সম্প্রতি হাইকোর্টে আবেদনকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ওই মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছিল নিম্ন আদালত। বৃহস্পতিবার সেই নির্দেশ খারিজ করে হাইকোর্ট জানিয়েছে , -‘আইন মেনেই কাজ করতে হবে নিম্ন আদালতকে’।