ওয়াকফ : চাপের মুখে কেন্দ্র

ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে এবারে ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়েছে কেন্দ্র। বিজেপি দলের সংখ্যালঘু মোর্চার নেতারা চেপে ধরেছেন মন্ত্রী কিরেণ রিজিজুকে। সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের মন্ত্রীর সঙ্গে সম্প্রতি মোর্চা নেতাদের একটি বৈঠক হয়। সেখানে মোর্চার নেতারা বলেন, ওয়াকফ নিয়ে আমরা মুসলিমদের কাছে যেতে পারছি না। দল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মুসলিমদের মধ্যে সমর্থন বাড়াতে হবে। কিন্তু ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এখন তাতে মুসলিমদের সামনে যাওয়াই মুশকিল হয়ে পড়েছে। মোর্চার নেতাদের আক্ষেপ, এই বিল লোকসভায় পেশের আগে তাঁদের সঙ্গে কোনও আলোচনা বা পরামর্শ করা হয়নি। আমাদের সঙ্গে আলোচনা হলে ভালো পরামর্শ দেওয়া যেতে পারত। ওয়াকফ নিয়ে বহু দুর্নীতির খবর রয়েছে, যেসব বন্ধ হওয়া দরকার। বর্তমানে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে এইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলা আর সম্ভব হবে না।

উল্লেখ্য, সংখ্যালঘু মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু বাজেট অধিবেশনে সংসদে এই বিল পেশ করলে ঘিয়ে আগুন পড়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়। চাপে পড়ে যৌথ সংসদীয় কমিটিতে (জেপিসি) পাঠানো হয় বিলটি পর্যালোচনার জন্য। এখন সবকিছু নির্ভর করছে জেপিসি’র উপর। তবুও বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চা মন্ত্রী রিজিজুকে সামনে পেয়ে তাদের ক্ষোভ উগরে দিলেন। মোর্চা একটি ওয়ার্কশপ করেছিল, যেখানে মন্ত্রীকে আহ্বান জানানো হয়। মন্ত্রীকে জানানো হয় সংখ্যালঘুরা ওয়াকফ বিল নিয়ে যেসব প্রশ্ন তুলেছেন তার সঠিক জবাব দেওয়া দরকার। না হলে তাদের সদস্য বৃদ্ধি কর্মসূচি মার খেয়ে যাবে। বিল নিয়ে ওঠা ক্ষোভ প্রশমিত করার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকেই।

বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার যেমন ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কেন্দ্রে বিজেপির তিন শরিক টিডিপি, জেডিইউ এবং এলজেপি, তেমনই সরকারের পক্ষ সমর্থন করেনি।


এদিকে তেলেঙ্গানা ওয়াকফ বোর্ড সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াকফ সংশোধনী বিল মানা হবে না। তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার ও সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডকে। তারা জেপিসি’কে কোনও তথ্য না দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবার কর্নাটক ওয়াকফ বোর্ডও একই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তারা মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়ের কাছে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করে বিধানসভায় প্রস্তাব গ্রহণের আর্জি জানিয়ে কেন্দ্রের ওপর আরও চাপ বাড়াতে চায়। কর্নাটক ওয়াকফ বোর্ডও জেপিসি’কে কোনও তথ্য সরবরাহ করবে না বলে জানিয়েছে। বোর্ড মনে করে তারা একটি স্বশাসিত বা অটোনমাস সংস্থা, তাই তারা বোর্ডের কাছে যেতে বাধ্য নয়। এই বিল মুসলিম স্বার্থবিরোধী এবং এই বিল আইনে পরিণত হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মুসলিমরাই।

কর্নাটকের মতো তেলেঙ্গানা ওয়াকফ বোর্ডও একই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জানিয়েছে, এই বিল আনা হয়েছে তেলেঙ্গানার বহু মূল্যবান ওয়াকফ সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণকারী বোর্ডের ক্ষমতা খর্ব করার উদ্দেশ্য নিয়েই। কালেক্টরেট ও সরকারি অফিসারদের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা তুলে দেওয়ার চক্রান্ত করা হয়েছে। তেলেঙ্গানা দেশের প্রথম ওয়াকফ বোর্ড যারা এই বিলটির বিরোধিতা করেছিল। এখন তাদের সঙ্গে যোগ দিল কর্নাটক। অন্য রাজ্যগুলিও, বিশেষ করে অবিজেপি-শাসিত রাজ্য, একই সুরে ভাবনা-চিন্তা করছে বলে জানা গিয়েছে।