লক্ষ্মীর ভান্ডার সহ রাজ্য সরকারের অন্যান্য প্রকল্প যারা বর্জন করতে চাইছেন, তাঁদের জন্য একটি ফর্ম দেওয়ার ব্যবস্থা করুক রাজ্য সরকার। এমনই চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। আর জি কর কাণ্ডের জেরে বিপুল সংখ্যক মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ দেখেছে বাংলা। আর জি করে চিকিৎসক খুন ও ধর্ষণের প্রতিবাদে প্রথম থেকেই সাধারণ মানুষ এবং বিরোধী দলের নিশানায় শাসকদল।
বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহিলা জনভিত্তিতে ফাটল ধরাতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পকে বর্জনের ডাকও সোশ্যাল মিডিয়ায় দিচ্ছেন কেউ কেউ। আরজি করের অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরে সন্দীপ ঘোষকে অন্য হাসপাতালে নিয়োগের যে সিদ্ধান্ত রাজ্য নিয়েছিল, তা-ও বিস্তর সমালোচিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাল্টা আক্রমণের পথে হাঁটতে চাইছে তৃণমূল। কুণালের মন্তব্যেও সেই ইঙ্গিত রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
এ হেন পরিস্থিতিতে শুক্রবার দুপুরে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ”যাঁরা লক্ষ্মীর ভান্ডার এবং রাজ্য সরকারের অন্যান্য স্কিমগুলিতে থাকতে চান না, তাঁদের জন্য ফেরত দেওয়ার একটি ফর্ম দিক রাজ্য সরকার। দুয়ারে সরকার শিবিরে ফেরত কাউন্টার থাকুক।” কুণালের সংযোজন, ”ফেসবুকে বিকৃত বিপ্লবী না সেজে, ফেরত ফর্ম ফিল আপ করুন। আমরাও দোষীদের ফাঁসি চাই। কুরাজনীতি নয়।”
আরজি করের ঘটনার পর থেকেই রাজ্যে মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সকলে। সমাজমাধ্যমে সরকারের সমালোচনা করে অনেকেই লিখেছেন, যে রাজ্যে মেয়েরা কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষিত নয়, সেখানে কন্যাশ্রী, লক্ষীর ভান্ডারের মতো প্রকল্প অর্থহীন। এমনকি দুর্গাপুজোর সময়ে সরকারের তরফে যে অনুদান দেওয়া হয়, সেই অনুদান ইতিমধ্যেই না গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে কয়েকটি ক্লাব।
এ প্রসঙ্গে প্রথম নির্যাতিতা চিকিৎসকের মা একটি সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, ”যাঁরা কন্যাশ্রী বা লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের সুবিধা নেন, তাঁরা তা নেওয়ার আগে তাঁদের ঘরের লক্ষ্মী সুরক্ষিত কি না, একবার ভাববেন। রাজ্য এবং দেশবাসীর কাছে এই অনুরোধ রইল।”
কুণালের এই পোস্ট নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ”মানুষের ভাবাবেগ যে শাসকদল বুঝতে পারছে না, তা এই সব কথাতেই পরিষ্কার। ন্যূনতম স্পর্শকাতরতা দেখাতে পারছে না তৃণমূল। তা ছাড়া ফর্ম বিলির যে কথা বলা হয়েছে, তাতে সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতাও প্রকাশ পাচ্ছে।”
আবার বিজেপি নেতা সজল ঘোষ এ ব্যাপারে বলেন,”এই কথার মধ্যে চরম দম্ভ রয়েছে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা তৃণমূল ঘর থেকে দেয় না। তা বাংলার মানুষেরই করের টাকা। যে বাংলার ঘরের মেয়েদের জীবন ও সম্ভ্রম এখন বিপন্ন।”
যদিও বিরোধীদের এই বক্তব্যকে ‘কুরাজনীতি’ বলে উল্লেখ করেছেন কুণাল। তাঁর মতে, যাঁরা সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নিতে চাইছেন না, তাঁরা যাতে তা ফেরত দিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা দরকার।
সদ্য লোকসভা ভোটে বাংলায় যে ফলাফল হয়েছে তা রাজনৈতিক ভাবে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্লেষকদের অনেকের ধারণা, গত লোকসভা ভোটে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল গ্রামাঞ্চলে। সেই কারণে গ্রাম বাংলার মহিলাদের বড় অংশ ভোট দিয়েছে তৃণমূলকে। আবার ঘরোয়া আলোচনায় বিজেপি ও বাম নেতারা খোলাখুলি স্বীকার করে নিচ্ছিলেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প যে প্রভাব ফেলছে ভোটে তাকে ঠেকানো বড় চ্যালেঞ্জ।