ন্যায়বিচার চাই

বিচার চাই। কর্মবিরতিতে শামিল চিকিৎসকরা এই একটি দাবিতে এখন অনড়। আরজি কর হাসপাতালের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় চিকিৎসকদের আন্দোলন এখন রাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। অরজি কর, এনআরএস, মেডিকেল কলেজ, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ সহ রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন হাসপাতালে জরুরি পরিষেবা চালু রেখেই কর্মবিরতি পালন করেছেন জুনিয়র চিকিৎসক, ডাক্তারি পড়ুয়া থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা। আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও খুনের বীভৎস ঘটনায় প্রতিবাদ এবং বিক্ষোভে সরব হয়েছেন দেশজুড়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বড় অংশ। নির্যাতিতার জন্য ন্যায়ের দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখিয়েছে দিল্লির সরকারি হাসপাতালগুলির চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। ফেডারেশন অফ রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (ফোর্ড) আহ্বান জানিয়েছে, সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকাল সময় ধরে দেশজুড়ে সমস্ত পরিষেবা বন্ধ রাখার। পাঁচ দফা দাবিতে কেন্দ্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডাকে চিঠি দিয়েছে ‘ফোর্ড’।

চিকিৎসকদের দাবি, সমস্ত হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলির সর্বত্র সিসিটিভি ব্যবস্থা রাখতে হবে। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা চাই। ডাক্তারদের বক্তব্য, সরকারি হাসপাতালে এই ধরনের ঘটনায় যদি ব্যবস্থা না নেওয়া যায়, তাহলে দুষ্কৃতীরা ইন্ধন পাবে। ভবিষ্যতেও এইরকম ঘটনা ঘটতে পারে। দিল্লির একাধিক সরকারি হাসপাতালের তরফে আরজি কর হাসপাতালের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় বিবৃতি জারি করেছে স্থানীয় রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (আরডিএ)। দিল্লির মৌলনা আজাদ মেডিকেল কলেজ, আরএমএল হাসপাতাল, লেডি হার্ডিঞ্জ মেডিকেল কলেজ, ভিএনএমসি, সফদর জঙ হাসপাতাল, দীনদয়াল উপাধ্যায় হাসপাতাল ও জিটিআর হাসপাতালের আরডিএ নেতৃত্ব ওপিডি এবং অপারেশন থিয়েটার অনির্দিষ্টকালীন সময় ধরে বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছে।

‘ফোর্ড’-এর সভাপতি ডা. অবিরল মাথুর জানিয়েছেন, ‘সরকারের তরফে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা রক্ষার সম্পূর্ণ আশ্বাস দিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা কখনওই চুপ করে বসে থাকতে পারি না। তার জেরেই আমরা অনির্দিষ্টকালীন ধর্মঘট ঘোষণা করেছি। যদি আমাদেরই কাজের পরিবেশে কোনও সুরক্ষা না থাকে, আমরা মানুষের প্রাণ বাঁচাবো কী করে? ভিএনএমসি ও সফদর জঙ হাসপাতালের আরডিএ সভাপতি ডা। ভবানী কুমার বলেছেন, এই বীভৎস ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা এই ঘটনার স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করছি। যারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাদের কঠোরতম শাস্তির দাবি করছি।


সরকারকে চিকিৎসকদের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বিধি সংক্রান্ত আইন লাগু করতে হবে। প্রতিটি হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। হাই রিস্ক এলাকাগুলিতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাতে হবে। যে ঘটনা আজ বাংলায় ঘটেছে, কাল তা দিল্লি বা দেশের যে কোনও অঞ্চলে হতেপারে। দীনদয়াল উপাধ্যায় হাসপাতালের আরডিএ সভাপতি ডা. বিপিন কে মাধোগাড়িয়া বলেছেন, ‘আরজি কর হাসপাতালে আমাদের সহকর্মীদেরপ্রতি সংহতি জানিয়ে এই নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে আমরা আন্দোলনে নেমেছি। এটা না করলে কোনও সরকারই আমাদের বক্তব্যের তোয়াক্কা করবে না। এর জেরেই আমরা পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছি।’

ফোর্ডের মতোই রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে কেরলের সরকারি হাসপাতালগুলির চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংগঠন কেজিএমসিটিএ। এক বিবৃতিতে এই সংগঠনের তরফে বলা হয়েছে, ‘দেশজুড়েই মহিলা চিকিৎসকদের নিরাপত্তার হাল এই মুহূর্তে শোচনীয়। এই ঘটনার পর যে সমস্ত মহিলা চিকিৎসকরা নাইট ডিউটি, ইমার্জেন্সি ডিউটি ইত্যাদি করে থাকেন, তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা আশ্বস্ত হতে পারছি না। সরকারকেই এই নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।’

আরজি করের এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, প্রয়োজনে মৃতার বাবা-মা সিবিআই তদন্তের আশ্রয় নিতে পারেন। অভিযুক্তের চরম শাস্তিরও দাবি জানিয়েছেন তিনি।