‘ভোটাভুটির অনুমতি দেওয়া হয়নি’, স্পিকার নির্বাচন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ অভিষেকের

‘অনৈতিকভাবে তাঁরা এই সরকার চালাচ্ছে’

নিজস্ব প্রতিনিধি, দিল্লি, ২৬ জুন: লোকসভার স্পিকার নির্বাচন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করল বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দল তৃণমূল কংগ্রেস। বিরোধীদের সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে একতরফাভাবেই লোকসভার স্পিকার হিসাবে নির্বাচিত করা হয়েছে ওম বিড়লাকে। এমনই অভিযোগ তৃণমূলের। বুধবার লোকসভার অধিবেশন শেষে সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়েই স্পিকার নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। “যা হয়েছে, তা নিয়মবিরুদ্ধ”, স্পিকার নির্বাচন নিয়ে একেবারে স্পষ্টভাষী তৃণমূল সাংসদ অভিষেক। কোনও রাখঢাক না রেখেই প্রোটেম স্পিকারের কার্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অভিষেক। নিজের যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, “সংসদের নিয়ম হল, ৫০০ জনের মধ্যে একজন সাংসদও ভোটাভুটি চাইলে সেই প্রস্তাবে সাড়া দিতে হবে। কিন্তু প্রোটেম স্পিকার তা করেননি। বিজেপি একাই দুরমুশ করেছে এই নির্বাচন।” অভিষেকের আরও সংযোজন, “সংসদের ফুটেজ দেখলেই বুঝতে পারবেন, বহু বিরোধী সাংসদ এদিন ডিভিশন চেয়ে ভোটাভুটির আর্জি জানান। তবে ভোটাভুটি ছাড়াই স্পিকার বেছে নেওয়ার প্রস্তাব গৃহীত হয় কক্ষে। প্রোটেম স্পিকার বিরোধী শিবিরের বহু সাংসদের আবেদন গ্রাহ্য করেননি।”

এই প্রথম বেনজির ঘটনার সাক্ষী রইল দেশ। স্বাধীন ভারতে এই প্রথমবার ভোটাভুটির মাধ্যমে লোকসভার স্পিকার নির্বাচন হল। তবে তা হল ধ্বনিভোটে। এনডিএ-র স্পিকার প্রার্থী ওম বিড়লার বিরুদ্ধে কংগ্রেস প্রার্থী করেছিল কেরলের সাংসদ কে.সুরেশকে। বুধবার সকাল ১১টা নাগাদ নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়। একে একে এনডিএ-র শরিক দলগুলির প্রধানরা রাজস্থানের সাংসদ ওমের নাম প্রস্তাব করেন স্পিকার হিসাবে। পাল্টা কংগ্রেস, তৃণমূল সহ বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার শরিকরা প্রস্তাব করেন সুরেশের নাম। এরপরেই ধ্বনিভোটের প্রস্তাব দেন লোকসভার প্রোটেম স্পিকার ভতৃহরি মহতাব। ধ্বনিভোটে প্রায় সমান-সমান আওয়াজ ওঠে শাসক এবং বিরোধী শিবির থেকে। কিন্তু প্রোটেম স্পিকার তথা বিজেপির ওড়িশার সাংসদ বিরোধীদের স্বর গ্রাহ্য না করে জানিয়ে দেন, বিড়লার পক্ষে মতামত বেশি। ওই ঘোষণার পর বিরোধী শিবির আপত্তি তোলে। কিন্তু সেই আপত্তি অগ্রাহ্য করেন মহতাব। এরপরেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া।


প্রসঙ্গত, সংসদের নিয়মানুযায়ী ধ্বনিভোটে দুই শিবিরের ধ্বনি সমান জোরাল হলে ডিভিশন বা ভোটাভুটির পথে যাওয়া যেতে পারে। অভিষেকের প্রশ্ন এখানেই। বহু সাংসদ ভোটাভুটি চাইলেও কেন প্রোটেম স্পিকার তা হতে দিলেন না? বিরোধীরা চাইলেও ধ্বনিভোটেই কেন স্পিকার বাছাই করা হল? এই প্রশ্নের মুখে অভিষেক বলেন, “এ ব্যাপারে প্রোটেম স্পিকারকে প্রশ্ন করুন। উনি চেয়ারে বসেছিলেন, উনিই উত্তর দিতে পারবেন।”

রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, ইন্ডিয়া জোটের ভয়েই কি স্পিকার নির্বাচনে ভোটাভুটি প্রক্রিয়া এড়িয়ে গেল বিজেপি? সংশ্লিষ্ট ঘটনায় তৃণমূল কাঠগড়ায় তুলেছে এনডিএ সরকারকেই। বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে এদিন অভিষেক বলেন, “যা প্রমাণ করে বিজেপির হাতে এখন আর সংখ্যাধিক্যের আত্মবিশ্বাস নেই। অন্যায়ভাবে, অনৈতিকভাবে, অসাংবিধানিকভাবে তাঁরা এই সরকার চালাচ্ছেন।” তাঁর মতে, নইলে এই ‘চ্যালেঞ্জ’ তাঁরা এড়িয়ে যেত না।

উল্লেখ্য, ধ্বনিভোটে ওম বিড়লা স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার পরে তাঁকে স্পিকারের আসনে নিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী। স্পিকারের সঙ্গে সৌহাদ্যপূর্ণ ভঙ্গিতে হাতও মেলান তাঁরা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও সৌজন্য বিনিময় করতে দেখা যায় রাহুল গান্ধীকে। তবে স্পিকার পদ নিয়ে জল্পনা শুরু হয় মঙ্গলবার।

এদিকে স্পিকার নির্বাচনে ওম বিড়লার বিপক্ষে কংগ্রেসের প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে প্রকাশ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল তৃণমূল। অভিষেক জানিয়েছিলেন, কে.সুরেশকে স্পিকার পদপ্রার্থী ঘোষণার আগে ‘ইন্ডিয়া’য় কোনও আলোচনা করেনি কংগ্রেস। সিদ্ধান্তটি একতরফাভাবে নেওয়া হয়েছে। যা ‘দুর্ভাগ্যজনক’। পরে অবশ্য রাহুল লোকসভার ভিতরেই কথা বলেন অভিষেকের সঙ্গে। পাশাপাশি বসে তাঁদের অর্থাৎ রাহুল-অভিষেককে আলোচনা করতেও দেখা গিয়েছিল। রাহুল ফোনে কথা বলেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। এরপর ঘরোয়া আলোচনায় বিষয়টি মিটে যায়। স্পিকার নির্বাচনের সময় তৃণমূল সুরেশকে শেষ পর্যন্ত সমর্থনও করে। কিন্তু তারপরেই প্রোটেম স্পিকারের কার্যে ক্ষুব্ধ হয় বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার শরিক তৃণমূল কংগ্রেস।