জয়ন্ত কাণ্ডে সৌগত রায় ও মদন মিত্রকে ফোনে খুনের হুমকি

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা:  মাঝরাতে দমদমের সাংসদ সৌগত রায়কে ফোন করে খুনের হুমকি। ফোনে বলা হয়, যত দ্রুত সম্ভব জয়ন্ত সিং-কে না ছাড়লে তাঁকে খুন করা হবে। এবিষয়ে সাংসদ সৌগত রায় বলেন,”আমি একটি অজানা নম্বর থেকে ফোন পায়। ফোনের অপার প্রান্ত থেকে বলা হয়, যদি আমি জয়ন্ত সিংকে ছাড়ার ব্যাপারে কোনও নিশ্চয়তা না দিই, তাহলে আমাকে হত্যা করা হবে। ফোনে ওই ব্যক্তি বলে, আমি আড়িয়াদহে গেলে আমাকে খুন করা হবে।’

গত কালের এই ঘটনার কথা জানিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন সাংসদ সৌগত রায়। পাশাপাশি, তিনি বারাকপুরের পুলিশ কমিশনারকে এই অজানা ফোন নম্বর ট্র্যাক করে হুমকি প্রদানকারীকে চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

প্রসঙ্গত আড়িয়াদহ গণপিটুনি কান্ডে মূল অভিযুক্ত জয়ন্ত সিং-কে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে বেলঘরিয়া থানার পুলিশ৷ পুলিশের হাতে পাকড়াও হয়েছে ঘটনার সঙ্গে যুক্ত আরও বেশ কয়েকজন৷ তবে এলাকার ‘ত্রাস’ জয়ন্তকে মুক্ত করতে মরিয়া তাঁর সঙ্গীরা৷ এবার জয়ন্তকে মুক্ত করার দাবিতে ‘হুমকি’ ফোন পেলেন খোদ সাংসদ! ভোর রাতে ফোনে ‘খুন’-এর হুমকি দেওয়া হয় সাংসদ সৌগত রায়কে৷ সূত্রের খবর, বুধবার রাত তিনটে নাগাদ একাধিকবার ফোন আসে দমদমের সাংসদ তথা বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা সৌগত রায়ের কাছে৷ ফোন ধরতেই সাংসদকে দেওয়া হয় ‘হুমকি’৷


জানা গিয়েছে, দমদম লোকসভার আড়িয়াদহ এলাকার একজন শক্তিশালী তৃণমূল নেতা জয়ন্ত সিং। সম্প্রতি গণপিটুনির ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ঘটনাটি ঘটে গত ৩০ জুন। সেই ঘটনায় জড়িত মূল অভিযুক্ত জয়ন্তকে গত সপ্তাহে পুলিশ গ্রেফতার করে। গত ৩০ জুন এক কলেজ পড়ুয়া ও তাঁর মাকে হেনস্থার ঘটনায় তাকে গ্রেফতার করে বেলঘরিয়া থানার পুলিশ। একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, একদল লোক মিলে দুইজনকে আটকে রেখে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছে। ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।

উল্লেখ্য, এর আগে দমদমের সাংসদ সৌগত রায় এবং কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রের সঙ্গে একাধিক মঞ্চে দেখা গিয়েছে আড়িয়াদহ কান্ডের মূল অভিযুক্ত জয়ন্তকে৷ তবে মঞ্চে একসঙ্গে থাকলেও কোনও ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল না বলেই দাবি দুই তৃণমূল নেতার৷ সম্প্রতি আড়িয়াদহে মা-ছেলেকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয়৷ সেই ঘটনায় নাম জড়ায় এলাকার ‘ডন’ বলে পরিচিত জয়ন্ত সিংয়ের৷ ঘটনায় তোলপাড় হয়েছে রাজ্য-রাজনীতি৷ তারপরেই বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়৷

গত বৃহস্পতিবার ডানলপের ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইন্টিটিউটের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয় ঘটনার মূলচক্রী জয়ন্ত সিংকে৷ তারপর থেকেই প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে একের পর এক ভিডিও৷ যেখানে বার বার উঠে আসে জয়ন্তর মুখ৷ শুধু তাই নয়, এর আগেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে জয়ন্তের নামে৷ বুধবার সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনটাই দাবি করেন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনার অলোক বাজোরিয়া৷

এদিকে সাংসদ সৌগত রায়কে হুমকি দেওয়ার পর একইভাবে প্রাণে মারার  হুমকি দিয়ে ফোন এসেছে কামারহাটি তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রের কাছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে এমনই দাবি করেছেন মদনবাবু। তিনি বলেন, ফোনে হুমকি দেওয়া ব্যক্তি ৪৬ সেকেন্ড পরিষ্কার বাংলা ভাষায় কথা বলে। তাঁকে  ফোন করে বলা হয়,’কামারহাটির কাণ্ডে মুখ খুলেছিস, তোকে রাখব না। গুলি করলে কে বাঁচাবে? এবার গুলি খাওয়ার জন্য তৈরি হও।’ এরপর সাংবাদিকদের সামনে দাবি করেন, যে নম্বর থেকে ফোন এসেছে, সেই ফোনের লোকেশন টাওয়ার ট্র্যাক করলেই ওই ব্যক্তির হদিশ পাওয়া যাবে। বিষয়টি নিয়ে তিনি অর্জুন সিং ও বিজেপি-কে নিশানা করেন।