অর্ণব সাহা, জলপাইগুড়ি: ফের সরকারি জমি দখল করে বিক্রি করার অভিযোগে গ্রেফতার হল আরও দু’জন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা। সোমবার শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ এবং এনজেপি থানার পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে দুই নেতাকে গ্রেফতার করে। ধৃতরা হলেন ফুলবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ফুলবাড়ি এক অঞ্চলের তৃণমূলের প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি মহম্মদ আহিদ। এছাড়া নাসির আহমেদ। মঙ্গলবার ধৃতদের জেলা আদালতের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে তোলা হয়।
কয়েকদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক সভা থেকেই ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি এলাকায় সরকারি জমি দখলের কথা ধরেন। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। তারপর থেকেই পুলিশের পক্ষ থেকে সরকারি জমি দখলদারদের গ্রেফতার শুরু করে। তৃণমূলে নেতা দেবাশিস প্রামাণিক, গৌতম গোস্বামী থেকে শুরু করে বিজেপি নেতাও গ্রেফতার হয়। আবার নতুন করে দুজন তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতদের জেলা আদালতে তুলে তদন্ত শুরু করল পুলিশ। এদিন আদালত চত্বরে গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল নেতাদের নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করলেন। তাঁদের উল্টো সাফাই সরকারি জমি বিক্রি করা হয়নি।
পুলিশের একটি সূত্রে খবর, শিলিগুড়ি পুরনিগমের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীমা সরণির বাসিন্দার আশিস দাসের অভিযোগের ভিত্তিতে আহিদ ওরফে চুটকিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপরদিকে, নাসির ফুলবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের চুনাভাটি-পশ্চিম ধনতলা এলাকার বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধেও জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে।
দীর্ঘদিন ফুলবাড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় দাপটের সঙ্গে তৃণমূল অঞ্চল সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন চুটকি। বিতর্কে জড়িয়েছেন বহুবার। বিরোধীরা তো বটেই, দলের অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধে বহুবার জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত সিপিএমের শ্রমিক সংগঠনের সদস্য ছিলেন তিনি। তখন থেকেই বিভিন্ন সময় বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএম তাঁকে টিকিট না দেওয়ায় নির্দল হয়ে পঞ্চায়েত সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তৃণমূলে যোগ দিয়ে অঞ্চল সভাপতি হন। এরপর কার্যত রকেটের গতিতে উত্থান হয় তাঁর। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলের সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় অঞ্চল সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন। এরপরও জমি সংক্রান্ত বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি।
এলাকার জমি দখল ও জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে অনেকদিন থেকেই ক্ষোভ জমছিল মানুষের মনে। ঘটনায় বিরক্তি প্রকাশ করে জমি মাফিয়াদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি ব্লক তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হন। ব্লক সভাপতি দেবাশিস প্রামাণিক এবং সহ সভাপতি গৌতম গোস্বামী এই মুহূর্তে আদালতের নির্দেশে জলপাইগুড়িতে জেল হেপাজতে রয়েছেন। গৌতমের গ্রেপ্তারির পর পুলিশি ধরপাকড় কিছুটা ঢিলে হতেই সবেমাত্র অনেকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে এদিন গ্রেপ্তার হলেন চুটকি। এরপর কে, এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে অনেক তৃণমূল নেতার মনে।