দিলীপের বিরুদ্ধে আজাদকে জেতাতে দুর্গাপুর-বর্ধমানে নয়া স্ট্রাটেজি
নিজস্ব প্রতিনিধি– ‘‘আমি মানুষের সর্বক্ষণের কর্মী’’, শুধু কথায় নয় কর্মের মাধ্যমে অক্ষরে অক্ষরে তার প্রমাণ দিয়ে চলেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়৷ নির্বাচনী নির্ঘন্ট প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই ভোটযুদ্ধের ময়দানে নেমে পড়েছেন যুবরাজ৷ তীব্র তাপপ্রবাহকে দেখিয়েছেন বুড়ো আঙ্গুল৷ লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় জোড়াফুল ফোটাতে কখনও অভিষেক ছুটে গিয়েছেন উত্তরবঙ্গে, কখনও পাড়ি দিয়েছেন বাংলার পূর্ব অথবা পশ্চিমে, আবার কখনও সামলেছেন দক্ষিণবঙ্গকে৷ কখনও করেছেন জনসভা, কখনও করেছেন অভ্যন্তরীন আলোচনাসভা আবার কখনও আশীর্বাদ নিতে পৌঁছে গেছেন মন্দিরে৷ বৃহস্পতিবারের ৪৩° তীব্র দাবদাহকে উপেক্ষা করেই পরিকল্পনামাফিক অভিষেক পৌঁছে গিয়েছিলেন বর্ধমান, আয়োজিত হয়েছিল অভ্যন্তরীন আলোচনাসভা৷ আজ অর্থাৎ শুক্রেও বোলপুর এবং রানীগঞ্জে রয়েছে অভিষেকের জোড়া জনসভা৷ সেই মতো অভিষেকের জনসভা ঘিরে এই দুই অঞ্চলের প্রস্তুতিও তুঙ্গে৷ বৃহস্পতিবার দুর্গাপুর – বর্ধমান কেন্দ্রের নির্বাচনী কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসেন অভিষেক৷ এদিন নিজ চপার থেকে নামতেই, হেলিপ্যাড চত্বরে এগিয়ে আসেন একাধিক তৃণমূল নেতৃত্ব৷ ফুল এবং উত্তরীয় পড়িয়ে বরণ করে নেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে৷ এদিন দুর্গাপুর – বর্ধমান কেন্দ্র জয়ের ব্লুপ্রিন্ট তৈরী করা হয় এই বৈঠক থেকেই৷
এই লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা আসন৷ প্রত্যেক বিধানসভাতেই গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ অভিষেকের৷ যেসকল কেন্দ্রগুলি ২০১৯ সালে তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছিল সেই কেন্দ্রগুলিতেই এবার অধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন অভিষেক৷ সেই সকল কেন্দ্রের একেবারে তৃণমূল স্তর অর্থাৎ পঞ্চায়েত স্তর অবধি গিয়ে প্রচারের নির্দেশ দিলেন দলীয় কর্মীদের৷ কেবল রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পের খতিয়ান তুলে ধরাই নয়, পাশাপাশি কেন্দ্র সরকারের প্রতিশ্রুতি যে বাস্তবে ‘জুমলা’ তাও জনসাধারণকে বোঝানোর নির্দেশ দিলেন৷ প্রয়োজনে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসংযোগ করার পরামর্শ অভিষেকের৷ ‘ফল ভালো না হলে পদ থেকে সরে যেতে হবে’, বেশ কিছু অভ্যন্তরীন বৈঠক থেকে দলীয় কর্মীদের এমন কড়া বার্তাও দিয়েছেন সেনাপতি৷ একশো দিনের কাজের টাকার মতোই আবাসের টাকাও দেবে রাজ্য সরকারই, তাও বোঝানোর পরামর্শ৷ মূলত ২০১৯ সালের দলীয় ভুলত্রুটি গুলি শুধরে দিতেই আলোচনাসভা করছেন অভিষেক৷
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে এই আসনটি তৃণমূলের দখলেই ছিল৷ সেই চিত্র বদলে যায় ২০১৯ সালে৷ ওই বছর এই কেন্দ্রে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়৷ বিজেপি এই আসনে প্রার্থী করে এস এস আহলুওয়ালিয়াকে৷ তিনি পান ৫ লক্ষ ৯৮ হাজার ৩৭৬ ভোট৷ তাঁর নিকটতম তৃণমূল প্রার্থী মমতাজ সঙ্ঘমিতা পান ৫ লক্ষ ৯৫ হাজার ৯৩৭ ভোট৷ ২ হাজার ৪৩৯ ভোটে জয়ী হন আহলুওয়ালিয়া৷ সুতরাং নিজেদের এই কেন্দ্রকে ফিরিয়ে আনতে মরিয়া তৃণমূল৷ সেই টার্গেটকে বাস্তবায়িত করতেই চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল এই আসনে প্রার্থী করেছে প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজাদকে৷ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজেপি প্রার্থী হয়ে নেমেছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷ দিলীপের কাছে দুর্গাপুর – বর্ধমান হলো একটি নতুন কেন্দ্র, এবার নিজ কেন্দ্র মেদিনীপুর হাতছাড়া হয়েছে দিলীপের৷ প্রার্থী নির্বাচিত হতেই এরমধ্যে একাধিকবার রাজনৈতিক বাকযুদ্ধে নেমেছেন কীর্তি আজাদ এবং দিলীপ৷ শেষপর্যন্ত এই কেন্দ্র থেকে জয়ের মুকুট কে পরেন, আজাদকে জেতাতে ‘অভিষেক স্ট্রাটেজি’ কতটা কার্যকরী হয়, সেই দিকেই তাকিয়ে বাংলা৷