নিজস্ব প্রতিনিধি: গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরদাস্ত নয়৷ কার্যত এই বার্তাই দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাময়িক বিরতির পর সাংগঠনিক দিকটা কড়া হাতে ফের নিজের নাগালের মধ্যে আনতে চাইছেন তিনি৷ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে রাশ টানতে নেওয়া হল পদক্ষেপ৷ তাঁর নির্দেশে সম্প্রতি দলের দুই কাউন্সিলরকে শোকজ করলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী৷ ইতিমধ্যেই ওই দুই কাউন্সিলরের হাতে পৌঁছে গিয়েছে শোকজের চিঠি৷ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকেও সেই চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে৷ মন্ত্রীকে চিঠি পাঠানোর কারণ হল ওই দুই কাউন্সিলর অরূপের এলাকারই নেতা৷ মমতা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, দলে থেকে পরস্পর বিরোধী মনোভাব একেবারেই মেনে নেবেন না তিনি ৷ তাই লোকসভা ভোট মিটতে না মিটতেই বিবাদ মেটাতে উদ্যোগী মমতা৷ রাজ্যে ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাই দলের ভিতরের ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে চান তিনি৷ কোনওভাবেই এই ইসু্য যেন ভোটের আগে কোনও বাড়তি সমস্যা তৈরি করতে না পারে৷
শুক্রবার যে দুই কাউন্সিলরকে শোকজ করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে একজন হলেন ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্বরাজ মণ্ডল৷ অপরজন হলেন ১০৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারকেশ্বর চক্রবর্তী৷ গত মঙ্গলবার মূলত পাটুলি এলাকায় একটি পার্টি অফিসে বসতে যাওয়া নিয়ে ঝগড়ার শুরু হয়৷ স্বরাজ পার্টি অফিসে বসতে গেলে কয়েকজন তৃণমূল কর্মী আপত্তি জানায়৷ এনিয়ে প্রথমে ধাক্কাধাক্কি, পরে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়৷ ঘুষি মেরে স্বরাজ মণ্ডলের কান ফাটিয়ে দেওয়া হয়৷ এই ঘটনার পিছনে ১০৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারকেশ্বর চক্রবর্তীর হাত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷
এই ঘটনার পাশাপাশি সম্প্রতি বীরভূমের পাড়ুইয়ের সাত্তোর অঞ্চলের বিষ্ণুখণ্ডা গ্রামে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷ এলাকায় বোমাবাজিও হয়৷ এই ঘটনায় উভয়পক্ষের ১২ জন জখম হয়েছেন৷ এছাড়াও মাথাভাঙা শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কার্যালয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ ঘিরে দলের গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে৷ কয়েকদিন আগে খাস কলকাতায় কসবা এলাকায় দলের দুই কাউন্সিলরে মধ্যে পাড়া দখলকে কেন্দ্র করে বিবাদের ঘটনাও চোখ এড়ায়নি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের৷ কলকাতা সর্বপরি রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় দলের কাউন্সিলর ও নেতাদের মধ্যে এই বিবাদ ভালোভাবে নিচ্ছেন না তাঁরা৷ দলের মধ্যে একাধিক গোষ্ঠীকোন্দলের ঘটনা প্রকাশ্যে আসা নিয়ে কার্যত বিরক্ত তৃণমূল সুপ্রিমো৷ তাই দুই কাউন্সিলরকে শোকজ নোটিশ ধরিয়ে সব স্তরের নেতাকর্মীদেরই বার্তা দিতে চেয়েছেন তিনি৷
উল্লেখ্য, লোকসভা ভোটের ফলাফল পর্যালোচনা করতে গিয়ে দেখা গেছে বহু ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে৷ বিশেষ করে যেখানে অবাঙালি ভোটারদের সংখ্যা বেশি সেখানে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ উল্টোডাঙার আবাসনে তৃণমূলের ‘তাণ্ডব’-র পর ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছিল খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আবাসনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য পাঠিয়েছিলেন দলের নেতাদের৷ মমতার সেই পদক্ষেপের পর দলের কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে তাঁর কড়া মনোভাব তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতক বিশেষজ্ঞরা৷