ভোট পরবর্তী হিংসার জেরে বিজেপি-র দ্বারা আক্রান্ত তৃণমূল কর্মী, খেজুরি যাচ্ছেন কুণাল, বীরবাহা

নিজস্ব প্রতিনিধি, ১৩ জুন– ভোট পরবর্তী পরিস্থিতিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলার বিক্ষিপ্ত অঞ্চল। নজরে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর। ভোট মিটতেই পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে। বেশিরভাগ জায়গায় শাসকদলের কর্মীদের বাড়িতে হামলা, দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠছে। তৃণমূলের দাবি, লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির ভরাডুবি হতেই এহেন হিংসাত্মক কার্যকলাপ করছে বিজেপি। যদিও এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়েছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বগণ। পরিস্থিতি সামাল দিতেই এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নির্দেশে শুক্রবার খেজুরি পাড়ি দিচ্ছেন প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ, মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা এবং কেশপুরের বিধায়ক শিউলি সাহা। এই তিন প্রতিনিধি ওই এলাকায় গিয়ে আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলবেন। পাশাপাশি গেরুয়া শিবিরের অত্যাচারের কথা তুলে ধরতে জনসভাও করবেন বলে সূত্রের খবর।

তবে কি হয়েছিল খেজুরিতে? বুধবার রাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এই খেজুর। খেজুরির ১ নং ব্লকের অন্তর্গত হেঁড়িয়া বাজারে আক্রান্ত হন তৃণমূল কর্মী জ্যোতির্ময় বারিক। অভিযোগ বিজেপির দিকেই। বিজেপির দুষ্কৃতীরা তৃণমূল কর্মীদের তাঁদের উপর পাশবিক অত্যাচার করে। এদিন আহত অবস্থায় জ্যোতির্ময় কে ভর্তি করানো হয় স্থানীয় হাসপাতালে। খবর পাওয়ামাত্র তাঁকে দেখতে যান কাঁথির পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক। তিনি জানান, “আক্রান্ত কর্মীর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিলাম ও ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত শুনলাম। বিজেপির এই নির্মম কর্মকাণ্ডকে ধিক্কার জানাই। বিজেপির এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেসের লড়াই চলছে, চলবে।”

প্রসঙ্গত পূর্ব মেদিনীপুরের অন্তর্গত কাঁথি এবং তমলুক দুই লোকসভা কেন্দ্রেই এবার ফুটেছে পদ্মফুল। কাঁথি থেকে খুব কম ভোটে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী সৌমেন্দু অধিকারী, অন্যদিকে তমলুক থেকে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী তথা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আর এরপর থেকেই পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ। অভিযোগের তীর রয়েছে বিজেপির দিকেই। ভোট মেটার পর থেকেই লাগাতার খেজুরি-সহ এই জেলার নানা প্রান্তে তৃণমূল কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এবার এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতেই খেজুরি যাচ্ছে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল, যেখানে থাকছেন কুনাল থেকে বীরবাহা। মূলত মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই এই গুরুদায়িত্ব পালন করছেন তাঁরা। কেবল আহতদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেওয়াই নয়, পাশাপাশি কুনাল, বীরবাহারা করবেন একটি জনসভাও। বিজেপির অত্যাচারী রূপকেই তাঁরা তুলে ধরে জনসাধারণকে সতর্ক করবেন।


উল্লেখ্য, ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনা বঙ্গে নতুন নয়। তাই আগে থেকেই সেই সাবধানতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বাংলায় ভোট পরবর্তী পরিস্থিতিতেও কেন্দ্রীয় বাহিনী রেখে দেওয়ার আর্জি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছিল বঙ্গের রাজনৈতিক দলগুলি। সেই মতো নির্বাচন কমিশনও ১৯ জুন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যদিও সেই সময় বেড়ে যায়। বুধবার উচ্চ আদালতের তরফ থেকে জানানো হয়, আগামী ২১ জুন পর্যন্ত রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে। কেন্দ্রীয় বাহিনী বঙ্গে থাকাকালীনও কেন রাজনৈতিক সংঘর্ষ হচ্ছে এবং তৃণমূল কর্মীদের আক্রান্ত হতে হচ্ছে, এবার সেই প্রশ্নই উত্থাপিত হয়েছে।