গঙ্গা-তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে বিধানসভায় আলোচনা চায় তৃণমূল

কেন্দ্র কর্তৃক উপেক্ষিত হতে নারাজ বাংলা 

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ভারত ও বাংলাদেশের ফারাক্কা-গঙ্গা চুক্তির নবীকরণ হয়েছে বাংলাকে না জানিয়েই, এমনই অভিযোগ ছিল বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের। এবার গঙ্গা-তিস্তা জলবণ্টন চুক্তির ক্ষেত্রেও একই পথে হাঁটতে চাইছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকার। পশ্চিমবঙ্গকে এড়িয়ে অর্থাৎ রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করেই এই চুক্তি কার্যকর করতে উদ্যত হয়েছে কেন্দ্র, এমনটাই অভিযোগ রাজ্যের। তাই সেই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বিধানসভায় প্রস্তাব এনে তার উপর আলোচনা করতে চায় তৃণমূল পরিষদীয় দল। তবে এই সংক্রান্ত বিষয়ে নিজেদের রণনীতি এখনই খোলসা করতে নারাজ তৃণমূল। তবে প্রশ্ন হলো, কবে বিধানসভায় আনা হবে এই প্রস্তাব?

শাসকদলের পরিষদীয় দল সূত্রে খবর, চলতি বিধানসভা অধিবেশনে এই প্রস্তাবটি আনা হবে। আগামী বুধবার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে আবারও বসবে বিধানসভার কার্যবিবরণী কমিটির বৈঠক। ২ এবং ৫ অগস্টের সেই বৈঠকে বিধানসভায় কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, তা স্থির হবে। মনে করা হচ্ছে, ওই দিনই গঙ্গা-তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি-সহ বাংলার নদী সংস্কার, জল বিভাজন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বঞ্চনার অভিযোগ এনে প্রস্তাব আনা হবে। বিধানসভায় এই বিষয়ক প্রস্তাব এনে মোদী সরকারকে বার্তা পাঠাতে চাইছে মমতার দল।


গঙ্গা-তিস্তা জলবণ্টন চুক্তির ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদ্বয়ের পারস্পরিক আলোচনার পাশাপাশি তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হলো পশ্চিমবঙ্গ। সেই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র কর্তৃক বাংলা কেবল উপেক্ষার শিকার, অভিযোগ তৃণমূলের। নবান্ন সূত্রে খবর, জলচুক্তি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশে এখনই যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি দলের পক্ষে। ঢাকা থেকে বাংলাদেশ সরকার ভারতের প্রতিনিধি দল পাঠানোর বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিলেই আলোচনার জন্য তাদের পাঠানো হবে। এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও আলোচনা করেনি বলেই নবান্ন সূত্রে খবর।

এভাবে রাজ্যের স্বার্থকে ‘উপেক্ষা’ করে কেন্দ্রীয় সরকারের একতরফা নীতি মেনে নিতে নারাজ রাজ্য। তাই বিধানসভায় এই বিষয়ে আলোচনা চায় তৃণমূল। তবে এই বিষয়ক আলোচনার দিনক্ষণ কবে ধার্য হবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়, এমনটাই জানিয়েছে শাসকদলের কার্যবিবরণী কমিটি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে বরাবর নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার মমতা দিল্লিতে আয়োজিত নীতি আয়োগের বৈঠক থেকে ওয়াক আউট করে কলকাতায় ফিরে এসেছিলেন। সে সময় কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে তোপ দেগে গঙ্গা-তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি এবং ফারাক্কা-গঙ্গা চুক্তির প্রসঙ্গ তুলেছিলেন।

ক্ষুব্ধ মমতা বলেছিলেন, “তিস্তার জল চলে গেলে উত্তরবঙ্গের পানীয় জল পেতেই সমস্যা হবে। বর্ষাতে উত্তরবঙ্গ প্লাবিত হলেও গরমকালে তিস্তা শুকিয়ে যায়। এই বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে। বছরের পর ডিভিসি, ফারাক্কা ড্রেজিং না হওয়ায় বর্ধমান, বাঁকুড়া সহ একাধিক জেলা প্লাবিত হচ্ছে। এগুলো দেখতে হবে না?” পাশাপাশি ফারাক্কা-গঙ্গা চুক্তির নবীকরণের ক্ষেত্রে কেন বাংলাকে জানানো হলো না, সে বিষয়েও সরব হয়েছিলেন মমতা।

সুতরাং, এটি স্পষ্ট যে ফারাক্কা-গঙ্গা চুক্তির নবীকরণে বাংলাকে উপেক্ষা করা হলেও গঙ্গা-তিস্তা জলবণ্টন চুক্তির ক্ষেত্রে কোনোভাবেই কেন্দ্র কর্তৃক বাংলা উপেক্ষিত হতে চায়না। উল্লেখ্য, বর্তমানে বিধানসভায় ‘ইন্দো-ভুটান জয়েন্ট রিভার কমিশন অফ মনিটরিং অ্যান্ড কন্ট্রোলিং ফ্লাড সিচুয়েশন’ নিয়ে আলোচনা চলছে। মমতা নিজেও শনিবারের নীতি আয়োগের বৈঠকে নিজ বক্তব্যে এই প্রকল্পের কথা কেন্দ্র সরকারকে জানিয়েছিলেন এবং বক্তব্য রেকর্ডও করেছিলেন। গঙ্গা-তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি বিষয়ে বিধানসভায় আলোচনা চায় তৃণমূল, তবে কবে সেই আলোচনা হবে তার দিনক্ষণ নির্ধারিত নয় এখনও। বিধানসভায় প্রস্তাব এনে মোদী সরকারকে বার্তা পাঠাতে তৎপর হচ্ছে রাজ্যের শাসকদল।