• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

রামনবমী বিজেপিকে ছাড়তে নারাজ তৃণমূল ও কংগ্রেস

ভোট-ময়দানে ধর্মীয় বিশ্বাস ও আবেগকে তুঙ্গে তোলার প্রয়াস খায়রুল আনাম: এবারের লোকসভা ভোট-ময়দানে রামনবমী পালনকে এককভাবে আর বিজেপিকে ছাড়তে নারাজ তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তৃণমূল কংগ্রেস৷ সে ক্ষেত্রে বসে নেই বামেদের সাথে জোটবেঁধে লোকসভা ভোট-ময়দানে নামা কংগ্রেসও৷ আর সে ক্ষেত্রে রামের সঙ্গে ভাই লক্ষ্মণ ও রামভক্ত হনুমান সমানভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে দামী দামী রঙিন ব্যানার, তোরণ, ভিনাইল দেওয়া

ভোট-ময়দানে ধর্মীয় বিশ্বাস ও আবেগকে তুঙ্গে তোলার প্রয়াস

খায়রুল আনাম: এবারের লোকসভা ভোট-ময়দানে রামনবমী পালনকে এককভাবে আর বিজেপিকে ছাড়তে নারাজ তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তৃণমূল কংগ্রেস৷ সে ক্ষেত্রে বসে নেই বামেদের সাথে জোটবেঁধে লোকসভা ভোট-ময়দানে নামা কংগ্রেসও৷ আর সে ক্ষেত্রে রামের সঙ্গে ভাই লক্ষ্মণ ও রামভক্ত হনুমান সমানভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে দামী দামী রঙিন ব্যানার, তোরণ, ভিনাইল দেওয়া কাট আউটে ছেয়ে গিয়েছে গোটা বীরভূম জেলা৷

কিছুদিন আগে পর্যন্ত রামনবমী ধর্মীয় আবেগে যখন পালিত হচ্ছিল তখন কিছু শোভাযাত্রা, লাড্ডু বিলি, খিচুড়ি বিতরণ, নামগান ইত্যাদির মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ ছিলো৷ এক সময় বিজেপির লালকৃষ্ণ আদবানীর দেশজুড়ে রথযাত্রা এবং পরবর্তী সময়ে অযোধ্যার বাবরি মসজিদের মতো প্রাচীন ‘স্থাপত্য ধ্বংসের’ মধ্যে দিয়ে দেশজুড়ে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তা পরবর্তী সময়ে আদালতে আইনী ঘেরাটোপে চলে যায়৷ পুরনো সেই ক্ষত নিয়ে সাধারণভাবে রাজ্যের মানুষ আর মাতোয়ারা হননি৷ কিন্ত্ত অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ ও রামলালা প্রতিষ্ঠার জন্য সারা দেশ থেকে প্রতিকী ইঁট নিয়ে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে নতুন করে রামের মহিমা প্রচারের কৌশলে বা ব’বকমে ধর্মীয় আবেগকে জাগিয়ে তোলার প্রচেষ্টা চালানো হয় বলে বলা হয়ে থাকে৷ এবার লোকসভা ভোট প্রচারের মধ্যে রামনবমী পড়ে যাওয়ায় সমগ্র বিষয়টি ভিন্ন মাত্রা পেয়ে গিয়েছে৷ বিজেপির পক্ষ থেকে স্পষ্টতই বলা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ বা আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার শতবর্ষ আগে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, রামের জন্মদিনটা একদিন সকলে সামাজিক উৎসব রূপে পালন করবে৷ তাঁর স্বপ্ন আজ সার্থক হচ্ছে৷ ভোট-ময়দানে রামনবমীর এই ভাবাবেগকে বিজেপি যাতে এককভাবে কাজে লাগাতে না পারে তার জন্য এবার সচেষ্ট হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ শনিবার ১৩ এপ্রিল বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে তৃণমূল কংগ্রেসের একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয় লোকসভা ভোটের রণকৌশল নিয়ে৷ সেখানে সিদ্ধাম্ত নেওয়া হয় যে, তৃণমূল কংগ্রেস বুধবার ১৭ এপ্রিল মহাসমারোহে জেলায় রামনবমী এবং মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল হনুমান জয়ন্তী পালন করবে৷ বিগত পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলের দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখা যাচ্ছে যে, জেলায় তৃণমূল কংগ্রেস একতরফা ভাবে ভালো ফল করলেও, যে কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূল কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়েছে, সেই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে অতীতে রামনবমী ও হনুমান জয়ন্তী মহাসমারোহে পালিত হয়েছে এবং বিজেপি সেই গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি দখল করেছে৷ আর ভোট সমীকরণের সেই অঙ্কেই লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল কংগ্রেস জেলায় এককভাবে বিজেপিকে ‘রাম ও রামভক্ত হনুমানের মহিমাকে হাতছাড়া’ না করতে চাওয়ায় রামনবমী ও হনুমান জয়ন্তী গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ইতিমধ্যেই জেলার শহরগুলির বিভিন্ন রাস্তার উপরে রাম ও হনুমানের বড় বড় ছবি দিয়ে তোরণ এবং অন্যত্র কাট আউট দিয়ে সাজানো শুরু হয়ে গিয়েছে৷ সর্বত্র ঝুলছে রাম আর বজরংবালীর মুখের ছাপ দেওয়া পতাকা৷ বসানো হচ্ছে ১৪ ফুটের বিশাল ভিনাইল দেওয়া কাট আউট৷ যার এক একটিতে খরচই পড়ছে ১০ হাজার টাকার বেশি৷ সাইকেল, মোটরবাইক থেকে শুরু করে যে কোনও যানবাহনে ৪০০–৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা বা সর্বনিম্ন ৫০ টাকার ঝলমলে গেরুয়া কাপড়ের উপরে ছাপা রাম আর বজরংবালীর ছবি পতপত করে উড়ছে৷ রামনবমী আর হনুমান জয়ন্তী পালনের এই ভাবাবেগকে লোকসভা ভোটের মরশুমে বিজেপি আর তৃণমূল কংগ্রেস যেভাবে কাজে লাগাতে শুরু করেছে তা থেকে আর মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারছে না কংগ্রেস৷ জেলায় সিপিএমের সঙ্গে লোকসভার আসন ভাগাভাগি করে নিয়ে হাত ধরাধরি করে লড়ছে কংগ্রেস৷ আর ভোট-বাজার ধরতে এবার রামনবমী ও হনুমান জয়ন্তী পালনের ছবি আঁকতে শুরু করেছে কংগ্রেসও৷ আর সেই কংগ্রেসের হাত ধরে সিপিএম হাঁটায় এখন জেলায় পরোক্ষে ভোট লোভী পতনমুখী সিপিএমকেও সাধারণ মানুষ ‘রাম-হনুমান ভক্ত’ বলে দেগে দিতে শুরু করেছেন৷