রাজনৈতিকভাবে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতেই মমতা ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে সমর্থনের কথা বলছেন: অধীর

মধুছন্দা চক্রবর্তী: হুগলির সভা থেকে বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, ‘ইন্ডিয়া’ জোটই এগিয়ে থাকবে৷ বাইরে থেকে জোটকে নেতৃত্ব দিয়ে সবরকম সাহায্য করে সরকার গড়ে দেবে তৃণমূল৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্যকে রাজনৈতিকভাবে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার, অস্তিত্বের সংকট থেকে তৃণমূল বাঁচানোর কৌশল হিসেবেই দেখছেন রাজ্যের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুূরী৷ বৃহস্পতিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবের সাংবাদিক সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন৷ তাই আবার ‘ইন্ডিয়া’ জোটের আশ্রয়ে থাকতে চাইছেন৷ চারদফা ভোটের পরে তিনি বুঝে গিয়েছে ভোটের হাওয়া ঘুরে গিয়েছে৷ তাই ‘হাওয়া মোরগ’-এর মতো ‘ইন্ডিয়া জোট’-এর দিকে ঘুরে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ক’দিন আগেও যিনি বলছিলেন, কংগ্রেস ৪২-এর মতো আসন পাবে, তিনিই এখন বলছেন ‘ইন্ডিয়া’ জোট ৩১৫ টা আসন পাবে৷ আগামী বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে তৃণমূল উৎখাত হয়ে যাবে বলে জানিয়ে দেন অধীর চৌধুরী৷

নিজের কেন্দ্র বহরমপুরে জেতার বিষয়ে একশো শতাংশ প্রত্যয়ী অধীর চৌধুরী৷ বললেন, জিততে না পারলে রাজনৈতিকভাবে ইস্তফ দিয়ে দেবেন৷ রাজ্যের বাম-কংগ্রেসের জোট ২০১৯ সালেও হয়েছে৷ কিন্ত্ত সেই জোট তেমন করে ফাটল ধরাতে পারেনি বিরোধী শিবিরে৷ শুধু তা-ই নয়, সেই জোটের পরে লোকসভা ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পরে বামদলের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, আমরা সংগঠিত পার্টি৷ জোটের শর্ত মেনে বাম সমর্থকরা কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছে, কিন্ত্ত কংগ্রেসরা বামদের ভোট দেয়নি৷ এই অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে অধীরবাবু জানিয়ে দেন, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না৷ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এদিন বলেন, গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের নীচুতলার কর্মীরা কংগ্রেস নেতাদের নির্দেশ পালন করেনি৷ অনেকেই বামদের ভোট দেয়নি৷ কারণ একটা ‘সাইকোলজিক্যাল বেরিয়ার’ ছিল৷ দীর্ঘদিন ধরে বামেদের হাতে অত্যাচারিত হওয়া কংগ্রেস সমর্থকরা বামেদের ভোট দেওয়ার বিষয়টি মন থেকে মেনে নিতে পারেনি৷ কিন্ত্ত এরপর সময় যত গড়িয়েছে মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে৷ এখন পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস উভয়েই অত্যাচারিত৷ তাই এবার লোকসভার ভোটে বাম-কংগ্রেস একযোগে বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করতেই একজোট হয়েছে৷

আসলে একুশের বিধানসভা ভোটে বাম-কংগ্রেসের একসঙ্গে শূন্য হয়ে যাওয়াই যে ‘শূন্যে শূন্য মিলাইছে’ তারই আভাস মিলল অধীর চৌধুরীর বক্তব্যে৷ এদিন অধীর চৌধুরী দাবি করেন, জাতীয় ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থে কংগ্রেসের এবং বামফ্রন্টের রাজনৈতিক মতাদর্শ এক৷ দুই দলই চায় দেশের সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে৷ সেই কারণেই তাদের জোটবদ্ধ হতে বাধা নেই, একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের সর্বাত্মক দুর্নীতির বিরুদ্ধেও সোচ্চার হন অধীর চৌধুরী৷ তিনি এদিন অভিযোগ করেন বিজেপি এবং তৃণমূল উভয়েই ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করে৷ এই প্রসঙ্গে সন্দেশখালির প্রসঙ্গ তোলেন অধীরবাবু৷ তৃণমূল সরকারের প্রচ্ছন্ন মদতেই সন্দেশখালিতে দুবৃত্তরা মা-বোনেদের যৌনলাঞ্ছনা করেছে৷ যা নিয়ে আবার ধর্মীয় রাজনীতি করছে বিজেপি নেতৃত্ব৷ দুটোই কাম্য নয়৷ কামদুনির পরে সন্দেশখালির মা-বোনেদের পাশেও কংগ্রেস পাশে রয়েছে বলে আশ্বাস দেন অধীর চৌধুরী৷ এদিন অধীর চৌধুরীর নিশানায় ছিল বিজেপি৷ অধীরবাবু বলেন, লোকসভা ভোটের সুবিধে পেতে নাগরিকত্ব আইনকে ব্যবহার করতে চাইছে৷