নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাংলা থেকে অনেক আশা নিয়ে এবারে লোকসভা ভোটের ময়দানে নেমেছিল বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব৷ শুভেন্দু অধিকারীকে সামনের সারিতে রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের৷ কিন্ত্ত কোথায় কী ? বাংলা থেকে ৩০টির বেশি আসন পাওয়ার স্বপ্ন রীতিমতো স্বপ্নই থেকে গেল৷ উপরন্ত্ত শুভেন্দুকে সামনের সারিতে এগিয়ে দেওয়ার জন্য পোহাতে হল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঝক্কি৷ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের থেকেও ৬টি আসন কমে গিয়ে বাংলা থেকে এবার মাত্র ১২টি আসন পেয়ে খুশি থাকতে হল বিজেপিকে৷
পাশাপাশি গোটা ভারতের ফলাফলের দিকে নজর দিলেও দেখা যায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি৷ সরকার গঠন করতে মোদিকে নিতে হয়েছে শরিকদের সাহায্য৷ উত্তরপ্রদেশ, বাংলার মতো তুলনামূলক বেশি আসন বিশিষ্ট রাজ্যে বিজেপির খারাপ ফলই এর অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ৷
বাংলায় বিজেপির খারাপ ফল হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আরএসএস-এর পত্রিকা স্বস্তিকায় একাধিক কারণ তুলে ধরা হয়েছে৷ এর মধ্যে প্রধান কারণটিই হল বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প না থাকা৷ তাঁদের যুক্তি, বাংলায় বিজেপি এখনও মমতার বিরুদ্ধে কোনও গ্রহণযোগ্য মুখ সামনে আনতে পারেনি৷ তাই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়েছে তাঁরা৷ ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম আসনে মমতাকে হারানোর পর বিজেপিতে আলাদা মর্যাদা পেয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী৷ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছেও তিনিই হয়ে উঠেছিলেন ১ নম্বর পছন্দ৷ বিজেপিতে ‘নবাগত’ এই নেতাকে নিয়ে মাতামাতি একেবারেই পছন্দ হয়নি বঙ্গ নেতৃত্বের একাংশের৷ ক্রমাগত কোণঠাসা হয়েছেন তাঁরা৷
এবারের লোকসভা নির্বাচনেও তার প্রভাব অব্যাহত৷ নির্বাচনে বাংলায় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে শুভেন্দুর মন্তব্যকে৷ দিলীপ ঘোষকে মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বর্ধমান -দুর্গাপুর আসন৷ শুভেন্দুর পরামর্শেই মেদিনীপুর আসনে অগ্নিমিত্রা পালকে প্রার্থী করা হয়েছে বলে মত একাংশের৷ তবে কাজ করেনি শুভেন্দুর এই ‘পরামর্শ’৷ মেদিনীপুর ও বর্ধমান-দুর্গাপুর দুটি আসনেই হারতে হয়েছে বিজেপিকে৷ হারার পরই দলের একাংশের বিরুদ্ধে কাঠিবাজি’র অভিযোগ তুলেছেন দিলীপ ঘোষ৷ দিলীপ ছাড়াও একাধিক বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব সরব হয়েছেন শুভেন্দুর বিরুদ্ধে৷ একাধিক আসনে প্রার্থী নির্বাচনে ভুল হওয়ায় বাংলায় আসন সংখ্যা কমেছে বিজেপির- এমনই মত আরএসএস-এর৷ পাশাপাশি নিজের দলেই ‘বহিরাগত’ তকমা পাওয়া শুভেন্দু বাংলার জনগণের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন৷ এখনও তাঁকে মমতার বিরুদ্ধে জোরদার মুখ বলা যায় না বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের৷
দলের মধ্যে ক্রমাগত বাড়তে থাকা গোষ্ঠীকোন্দল, ক্ষোভ বিক্ষোভও বিজেপির ভরাডুবির পরোক্ষ কারণ বলে দাবি করা হয়েছে ‘স্বস্তিকা’য়৷ এছাড়াও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের একাধিক জনহিতকর প্রকল্প মানুষকে আরও তৃণমূল ঘেষা করেছে বলে মনে করছে আরএসএস৷ স্বস্তিকার এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজেদের দোষ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করতে তা ভবিষ্যতের পক্ষে ভালো হবে৷