• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

কোচবিহারের মহারাজ, বিজেপি সাংসদ নগেন রায়ের সাথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একান্ত সাক্ষাৎ নিয়ে রাজনীতিতে জোর জল্পনা

সুভাষ মন্ডল, কোচবিহার – একেই বুঝি বলে রাজনীতির উলোট পুরান। কোচবিহারে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ নগেন রায়ের সাথে দেখা করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুপুরে কোচবিহার মদনমোহন মন্দিরে পুজো দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি চলে যান চকচকায় নগেন রায়ের বাড়িতে। বিজেপির নেতার বাড়িতে তৃণমূল কংগ্রেস দলের সুপ্রিমোর রুদ্ধদ্বার বৈঠক কোচবিহারের রাজনীতিতে নতুন জল্পনার সৃষ্টি করল। দুইজনের মধ্যে মিনিট

সুভাষ মন্ডল, কোচবিহার – একেই বুঝি বলে রাজনীতির উলোট পুরান। কোচবিহারে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ নগেন রায়ের সাথে দেখা করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুপুরে কোচবিহার মদনমোহন মন্দিরে পুজো দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি চলে যান চকচকায় নগেন রায়ের বাড়িতে। বিজেপির নেতার বাড়িতে তৃণমূল কংগ্রেস দলের সুপ্রিমোর রুদ্ধদ্বার বৈঠক কোচবিহারের রাজনীতিতে নতুন জল্পনার সৃষ্টি করল। দুইজনের মধ্যে মিনিট ত্রিশের একান্ত এই বৈঠকে কোন পক্ষেরই কোন নেতা বা সরকারি আধিকারিক হাজির ছিলেন না বলে সূত্র মারফত জানা যায়। রাজবংশী সমাজের প্রভাবশালী ব্যাক্তি বিজেপি সাংসদ তথা আধুনিক কোচবিহারের মহারাজের সাথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একান্ত সাক্ষাৎ আগামী দিনে কোচবিহারের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের বার্তা কি। এ প্রশ্ন উঠে এসেছে রাজনৈতিক মহলে। সোমবার রাত্রি সাড়ে নটা নাগাদ শিলিগুড়ি থেকে মুখ্যমন্ত্রী সড়কপথে বৃষ্টিস্নাত কোচবিহার আসেন।

কোচবিহার সার্কিট হাউসে রাত্রিযাপনের পর তিনি এদিন দুপুর ১২ টা নাগাদ মদনমোহন বাড়িতে যান পুজো দিতে। এরপর মুখ্যমন্ত্রী যান কোচবিহারের চকচকায় নগেন রায়ের বাড়িতে। সূত্র অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি সাংসদদের বাড়ি দেখে মুগ্ধ হন। অন্যদিকে, সাংসদ নগেন রায় উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান, রাজ্যের প্রশাসনিক শীর্ষব্যক্তি তার বাড়িতে দেখা করতে এলে তিনি রাজবংশী প্রথা অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে স্বভাবতই ভদ্রতা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীও তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং একটি শাল চাদর উপহার দিয়েছেন। সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সাংসদ নগেন রায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার বাড়িতে এসে তার বংশ পরিচয় জানতে চান।

মুখ্যমন্ত্রীকে তা অবগত‌ও করেন তিনি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বিজেপি সাংসদ  নগেন রায় বলেন, এমপি থেকে এমএলএ হওয়ার মত মতিভ্রম তার হয়নি। এই পরিসরে গোটা কোচবিহার এবং নিম্ন অসমে অনন্ত মহারাজ হিসেবে পরিচিত রাজ্যসভায় বিজেপি দলের মনোনীত সাংসদ নগেন রায়ের বর্তমান ভূমিকায় নানা প্রশ্ন উঠে এসেছে। বছর দুয়েক হলো কেন্দ্রের শাসক বিজেপি দল কোচবিহার থেকে তাকে রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে মনোনীত করে। কোচবিহারের রাজনীতিতে রাজবংশী সমাজের গুরুত্ব সকলেরই জানা। আধুনিক কোচবিহারের মহারাজ বলে পরিচিত রাজবংশী সমাজের নগেন রায়ের রাজনীতি নিয়ে কোচবিহারের রাজনীতিতে ধোঁয়াশা ছিল বহুদিন। ইতিপূর্বে কোচবিহারের চকচকায় নগেন রায়ের প্রাসাদোপম বাড়িতে কখনো রাজ্যের শাসক দলের নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, কখনো বা  মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাঠানো শুভেচ্ছা ও উপহার নিয়ে শাসকদলের নেতার উপস্থিতি রাজনৈতিক মহলের চর্চায় উঠে এসেছে। আবার ডেপুটি নিশীথ প্রামানিক থেকে শুরু করে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও দেখা গেছে চকচকায় আধুনিক কোচবিহারের মহারাজা নগেন রায়ের সকাশে আসতে। সকলেরই লক্ষ্য নিঃসন্দেহে কোচবিহারের রাজবংশী ভোট। কারণ রাজবংশী সমাজে নগেন রায়ের প্রভাব যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য। সালটা ২০০৫ । কোচবিহারের গ্রেটার আন্দোলন তখন গোটা রাজ্যের রাজনীতিতে ঝড় তুলেছে। বৃহত্তর কোচবিহার রাজ্যের দাবিতে বংশীবদন বর্মনের নেতৃত্বে গ্রেটার আন্দোলন কোচবিহারে তখন ঝড় তুলেছে। রক্তাক্ত হয়েছে কোচবিহারের মাটি। রাজ্যজুড়ে আছড়ে পড়েছে এই আন্দোলনের ঢেউ ।

রাজবংশী সমাজের কাছে সেই সময় নগেন রায় কোচবিহারের অনন্ত মহারাজ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। তার কথায় রাজবংশী সমাজের একটা বড় অংশ যথেষ্ট গুরুত্ব দিতো। খুব স্বাভাবিকভাবেই ভোটের বাজারেও তার গুরুত্ব বাড়তে থাকে ক্রমশ। শাসক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা বুঝে শুনেই তাকে কাছে টানতে সচেষ্ট হয়ে ওঠেন। বৃহত্তর কোচবিহারের আন্দোলনকে দূরে রেখে বংশীবদন বর্মনকে দেখা গেছে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঞ্চে। পৃথক কোচবিহার রাজ্যের স্বপক্ষে কোচবিহারের অনন্ত মহারাজের দাবিও প্রকাশ্যে আসে বিভিন্ন সভা সমাবেশে। কিছুদিন পূর্বে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর মুখে পৃথক রাজ্যের দাবির কথা গুরুত্ব না পাওয়ায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েন আধুনিক কোচবিহারের মহারাজ। এরই মধ্যে বিজেপি দলের মনোনীত রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে কোচবিহার থেকে তার নাম বিবেচিত হয়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, ভোটের ময়দানে অনেক আশা ভরসার স্থল হয়ে ওঠে সাংসদ নগেন রায়। কিন্তু এবছর লোকসভা নির্বাচনের সময় তার রাজনৈতিক অভিব্যক্তি নিয়ে বিজেপির অন্দরে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। অবশেষে লোকসভা নির্বাচনে পরাজয় ঘটে বিজেপির। সাংসদ নগেন রায়ের কৌশলী নীরবতা বিজেপির সাফল্য না পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম কারণ বলে মনে করেন রাজনীতি পর্যবেক্ষক মহল। তাদের মতে, পৃথক কোচবিহার রাজ্যের দাবির কথা অমিত শাহর মুখে আমল না পাওয়াতেই মহারাজের অন্তরে সম্ভবত ভাবনার পরিবর্তন ঘটেছে। যদিও তা নিয়ে সময়‌ই কথা বলবে।