নিজস্ব প্রতিনিধি— লোকসভা নির্বাচন আবহে সিএএ নিয়ে চাপা আতঙ্ক রয়েছে৷ সিএএ নিয়ে আতঙ্কের কারণে আত্মঘাতী হয়েছেন নেতাজিনগরের এক যুবক৷ এমনটাই অভিযোগ করেছে তৃণমূল৷ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তৃণমূলের এক প্রতিনিধি দল যায় নিহতের পরিবারের বাড়িতে৷ মৃত যুবকের নাম দেবাশিস সেনগুপ্ত (৩১)৷ তিনি সুভাষগ্রামে মামাবাডি়তে গিয়েছিলেন৷ গত বুধবার সেখান থেকে তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়৷ সোনারপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন৷
দেবাশিসের পরিবার দাবি করেছে, সিএএ আইন নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে আতঙ্কে ভুগছিলেন তিনি৷ সেই কারণেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তাঁদের অনুমান৷ মৃতের পরিবারের সদস্যেরা জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন ধরে সিএএ নিয়ে চিন্তায় ছিলেন দেবাশিস৷ তাঁর কাছে সিএএ-র জন্য প্রয়োজনীয় ‘কাগজ’ ছিল না৷ তাই নাগরিকত্ব হারানোর ভয় পাচ্ছিলেন তিনি৷ বার বার পরিবারের সদস্যদের বলছিলেন, তাঁকে দেশ থেকে বার করে দেওয়া হলে কোথায় যাবেন! এই ঘটনার পর কেন্দ্রের মোদি সরকারের সমালোচনা করেছে তৃণমূল৷ রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ”আমরা বার বার বলছিলাম সিএএ এবং এনআরসি দু’টি আইন দেশে বেআইনি ভাবে প্রবর্তনের চেষ্টা চলছে৷ আইনগুলি অগণতান্ত্রিক৷ জনমানসে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে এবং আতঙ্ক ছড়াবে৷ আমাদের চিন্তা যে অমূলক নয়, তা প্রমাণিত হল৷ ৩১ বছরের দেবাশিস আত্মহত্যা করলেন সিএএ-র ভয়ে৷ সোনারপুর গ্রামীণ হাসপাতালে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছে৷ তাঁর পরিবার স্পষ্ট করেছে, দেবাশিস সিএএ নিয়ে আতঙ্কিত ছিলেন৷ বার বার বলতেন, এনআরসি এবং সিএএ-র জন্য নাগরিকত্ব চলে যাবে না তো! এটাই তাঁর আত্মহত্যার কারণ৷ প্রধানমন্ত্রী কি এগুলো দেখছেন? এই রক্তপিপাসার কি শেষ নেই৷ বিবেকের সামনে দাঁডি়য়ে তিনি প্রশ্ন করুন নিজেকে৷”
এদিন সন্ধ্যায় তৃণমূলের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল নেতাজিনগরে যায়৷ মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তাঁরা৷ তৃণমূলের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে মোদি সরকারকে আক্রমণ করা হয়েছে৷ তারা লিখেছে, ”প্রধানমন্ত্রী মোদি রক্তের জন্য বেরিয়ে পডে়ছেন৷ কিছুতেই ওঁকে থামানো যাবে না৷” তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেব বলেন, ”এনআরসির সময়ে অসমে যা হয়েছিল, এ বার তা পশ্চিমবঙ্গেও হচ্ছে৷ সেখানেও এনআরসির ভয়ে বহু মানুষ আত্মহত্যা করেছিলেন৷ তাঁরা ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছিলেন না৷ একই কারণে দেবাশিস সেনগুপ্ত আত্মঘাতী হয়েছেন৷ এটা অমানবিক৷ আমার মনে হয় এই আইন অপ্রয়োজনীয়৷ এর সঙ্গে সাধারণ মানুষের কোনও স্বার্থ জডি়য়ে নেই৷ ভোটের কারণে এই আইন আনা হয়েছে৷” বিজেপি অবশ্য দেবাশিসের মৃতু্যর জন্য তৃণমূলের সিএএ-বিরোধী প্রচারকেই দায়ী করছে৷ বিজেপি নেতা প্রণয় রায় এ প্রসঙ্গে বলেন, ”মুখ্যমন্ত্রী দিনের পর দিন সিএএ নিয়ে মানুষকে প্ররোচিত করেছেন৷ ভয় দেখিয়েছেন৷ এই মৃতু্যর জন্য তিনিই দায়ী৷ অবিলম্বে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করা উচিত এবং তাঁকে গ্রেফতার করা উচিত৷” এই নিয়ে তীব্র চাপান উতর চলছে রাজনৈতিক মহলে৷