নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে ২০১৬ সালের স্কুল শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করে দেয়। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চের ওই রায়ের ফলে ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর চাকরি চলে যায়। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কয়েক দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। সেখানে মধ্যশিক্ষা পর্ষদও মামলা দায়ের করে থাকে । দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে যান চাকরিহারাদের একাংশও। সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন ৩ বিচারপতির বেঞ্চে শুরু হয় চাকরি বাতিল মামলার শুনানি। গত ৭ মে এই মামলার শুনানিতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়ার ২৫৭৫৩ জনের চাকরি বাতিলের যে নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট, তার ওপর অন্তর্বর্তিকালীন স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এদিনও সেই স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য হয়েছে ৩ সপ্তাহ পরে।এই মামলা যখন প্রথমবার শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টে উঠেছিল তখন দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছিলেন, ‘এখনই চাকরি বাতিল করা হচ্ছে না।
যদি যোগ্য এবং অযোগ্য আলাদা করা সম্ভব হয়, তা হলে গোটা প্যানেল বাতিল করা ন্যায্য হবে না।’ একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট আরও জানায়, -‘ আপাতত কাউকে বেতন ফেরত দিতে হবে না। স্কুল সার্ভিস কমিশনের ২০১৬ সালের প্যানেলে যারা চাকরি পেয়েছিলেন তাঁদের মুচলেকা দিতে হবে। পরে তাঁদের নিয়োগ ‘অবৈধ’ বলে প্রমাণিত হলে অযোগ্যদের টাকা ফেরত দিতে হবে’। সেই সময় সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে, -‘ সুপারনিউমেরারি পদ তৈরি নিয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তে স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে’। কিন্তু ওই নির্দেশ চূড়ান্ত নয়। তারপরেই ১৬ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি। সেই মতো এদিন সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি শুনানির জন্য উঠলে রাজ্যের তরফে হাজির থাকা আইনজীবী জানান, -‘ এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিতে চায় রাজ্য সরকার’।
তা শুনে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, -‘আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য এবং স্কুল সার্ভিস কমিশন-সহ সমস্ত পক্ষকে হলফনামা দিতে হবে। তার পরে কারও হলফনামা গ্রহণ করা হবে না’।সুপ্রিম কোর্ট এদিন জানিয়েছেন, এই মামলায় মূল ৫টি পক্ষের বক্তব্য শোনা হবে। এই পাঁচ পক্ষ হল- রাজ্য সরকার, স্কুল সার্ভিস কমিশন, মামলার মূল মামলাকারী, চাকরিহারা এবং সিবিআই। এছাড়া অন্য কোনও পক্ষ তাদের বক্তব্য জানাতে চাইলে লিখিত ভাবে সুপ্রিম কোর্টে জানাতে পারবে। তবে এই বক্তব্য সীমাবদ্ধ রাখতে হবে পাঁচ পাতার মধ্যেই। তার বেশি নয়। একই সঙ্গে এদিন রাজ্যের নোডাল কাউন্সিল হিসাবে আইনজীবী নিয়োগ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। অন্য পক্ষেরও নোডাল কাউন্সিলও নিয়োগ করা হবে। ওই নোডাল কাউন্সিলের কাছে এ বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট বক্তব্য জানাতে হবে।
তবে এদিনের সুপ্রিম সিদ্ধান্তের জেরে আপাতত ৩ সপ্তাহের স্বস্তিতে থাকবেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা। কেননা এখনই তাঁদের চাকরি যাচ্ছে না, আবার বেতনও বন্ধ হচ্ছে না। অগস্টের প্রথম সপ্তাহে এই মামলাটির পরবর্তী শুনানি হবে।গত এপ্রিল মাসে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশের মোট ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল। এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই সিবিআই চাকরিহারাদের মধ্যে যোগ্য-অযোগ্যদের বাছাইয়ের কাজ শুরু করে। সিবিআই সূত্রে।প্রকাশ , ইতিমধ্যে ২৫ হাজারের বেশি চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে যোগ্য-অযোগ্যদের বাছাইপর্ব হয়ে গেছে। ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থীদের সাক্ষাৎপর্ব ও তথ্য সংগ্রহের কাজও প্রায় শেষ করে এনেছেন সিবিআই আধিকারিকরা।আগামী আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে এই মামলার শুনানি রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে।