যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিল রাজ্যের খাদ্য দফতর। রেশন অফিস মানেই ঘন্টার পর ঘন্টা লাইন এবং সমস্যা সমাধানে জটিলতা। এবার এই সমস্যা থেকে বেড়োনোর স্থায়ী সমাধান খুঁজলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ। মূলত রেশন অফিসে গিয়ে যাতে হয়রানির শিকার না হতে হয় জনসাধারণকে, তার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিল রাজ্যের খাদ্য দফতর। রেশন কার্ডে থাকা ঠিকানা বা দোকান বদল করতে চাইলে, কিংবা রেশন কার্ডে থাকা মোবাইল নম্বর বদল করতে চাইলে আর রেশন অফিসে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই। সেই মুশকিল আসান করল রাজ্যের খাদ্য দফতর। সরাসরি বাড়িতে বসে সেই সুবিধা পাওয়া যাবে। জেলাশাসকদের নির্দেশ দিয়ে রাজ্যের খাদ্য দফতর জানিয়েছে, এই ব্যবস্থাকে যত দ্রুত সম্ভব জনসাধারণের কাছে প্রচার করতে হবে। যাতে সাধারণ মানুষ গোটা বিষয়টি জানতে পারেন এবং যেকোনো ছোট কাজে রেশন অফিসের দ্বারস্থ না হতে হয়।
তবে কিভাবে হবে এই মুশকিল আসান? বাড়িতে থাকা কম্পিউটার, ল্যাপটপ কিংবা স্মার্ট ফোনেই রেশন সংক্রান্ত একাধিক সমস্যার সমাধান করা যাবে। তবে এই কাজের জন্য প্রয়োজন ইন্টারনেট সংযোগ এবং একটি স্মার্ট ফোন। অবশ্যই নির্দিষ্ট ফোন নম্বরটি আধার লিঙ্ক হওয়া চাই। মুঠোফোনেই ডাউনলোড করে নিতে হবে নিজেদের ই-রেশন কার্ড। খাদ্য দফতরের নিজস্ব পোর্টালে লগ-ইন করে ‘সেল্ফ সার্ভিস ফর রেশন কার্ড’ -এ ক্লিক করতে হবে। এরপরই আধার লিঙ্ক মোবাইলে আসবে একটি ওটিপি, যা আবেদনকারীকে যাচাই করে নেবে সঠিক ব্যক্তি কিনা। এরপরই আবেদনকারী অথবা ব্যবহারকারী রেশন কার্ডের তথ্য সংশোধন ও সংযোজন করে নিতে পারবেন। খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ জেলাগুলিতে এই বিষয়টি নিয়ে প্রচার চালানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করার পরমার্শ দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই সেই নির্দেশ জেলাশাসকদেরও দিয়েছেন তিনি।
এবার প্রশ্ন হলো, কি কি পরিষেবা পাওয়া যাবে? রথীন ঘোষ জানিয়েছেন, “রেশন কার্ডের সাথে মোবাইল নম্বর সংযোজন বা বিয়োজন থেকে আধার নম্বর যুক্ত করা সবই করা যাবে অনলাইনে বাড়িতে বসে।” পরিষেবা গুলো হলো – রেশন কার্ডের সাথে মোবাইল নম্বর সংযোজন বা বিয়োজন, রেশন কার্ডের ঠিকানা সংশোধন, আধার অনুযায়ী নাম সংশোধন, অভিভাবকের নাম সংশোধন, রেশন দোকান পরিবর্তন, প্রয়োজনে পরিবার বিভাজন, ভর্তুকি থেকে ভর্তুকি বিহীন রেশন কার্ড রূপান্তর, মৃত্যুর কারণে বা স্বেচ্ছায় রেশন কার্ড সমর্পন, আধার নম্বর যুক্তিকরণ এবং ই-রেশন কার্ড ডাউনলোড ইত্যাদি কার্য ঘরে বসে অনলাইনে করা সম্ভব হবে। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় এবং রথীন ঘোষের উদ্যোগে গৃহীত এই যুগান্তকারী পদক্ষেপের ফলে রেশন কার্ড সংক্রান্ত সমস্যা মেটানোর জন্য কোথাও কোনও আবেদন পত্র জমা দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না, যেকোনও জায়গায় – যেকোনো সময়ে রেশন কার্ডের এই পরিবর্তনগুলো করা যাবে। কোনও রেশন অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। রেশন অফিস থেকে কোনও যাচাই বা অনুমোদনের প্রয়োজন নেই এবং জরুরি পরিষেবা তৎক্ষণাৎ পাওয়া যাবে বিনা বাধায়। খাদ্য দফতরের এই উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে বাংলার জনসাধারণের কাছে।
রথীন ঘোষ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “রেশন কার্ড সংক্রান্ত সমস্যা বর্তমানে ঘরে-ঘরে। এর মধ্যে রেশন কার্ড সংশোধন হলো জনসাধারণের সবচেয়ে বড়ো সমস্যা। রেশন অফিসে যাওয়া মানেই লম্বা লাইন, আবার অনেক ক্ষেত্রে একদিনে সমস্যার সমাধান হয়ও না। কর্মরত এবং অসুস্থ মানুষের পক্ষে বারংবার রেশন অফিসে ছুটে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই আপামর রাজ্যের মানুষের কথা ভেবে এবং মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় আমরা এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছি। অনলাইন পরিষেবার ফলে অগণিত মানুষের মুশকিল আসান হলো। ইতিমধ্যেই জেলাশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই বার্তাটি জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। আশা করি, রেশন কার্ড সংক্রান্ত সমস্যার পরিমান কমবে।”