পুতিনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্য সোমবার রাশিয়া যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

দিল্লি, ৭ জুলাই: ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেও রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ২২তম বার্ষিক ভারত-রাশিয়া শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে সোমবার রাশিয়া সফরে রওনা হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর মস্কো থেকে, প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। যা ৪১ বছর পরে কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ইউরোপীয় দেশে প্রথম সফর হবে। তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মোদি তাঁর প্রথম বিদেশ সফরে মস্কো সফর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যা ভারত ও রাশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে।

জানা গিয়েছে, মোদি সোমবার বিকেলে মস্কো পৌঁছবেন। প্রেসিডেন্ট পুতিনের আয়োজিত এক ব্যক্তিগত নৈশভোজে তাঁকে স্বাগত জানানো হবে। পরের দিন অন্যান্য ব্যস্ততার মধ্যে মোদি রাশিয়ায় প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে সমবেত হবেন। পাশাপাশি, তিনি ক্রেমলিনে অজ্ঞাত সৈন্যদের সমাধিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করবেন। মস্কোতে একটি প্রদর্শনী কর্মসূচিতেও অংশগ্রহণ করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এরপর প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তাঁর একটি গোপণ বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে দুই দেশের প্রতিনিধি বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন। গুরুত্ব দেওয়া হবে আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে। প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য সংযোগ, সংস্কৃতি, শিক্ষা, বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা, সংস্কৃতি এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ সহ বিভিন্ন বিষয় আলোচ্যসূচিতে থাকবে। তাঁরা বৈশ্বিক উন্নয়ন নিয়েও আলোচনা করবেন।

প্রসঙ্গত দুই নেতার মধ্যে ব্যক্তিগত রসায়নের পরিপ্রেক্ষিতে, বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব মোদি-পুতিন বৈঠকে গুরুত্ব পেতে পারে। এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, মোদি হয়তো আলোচনায় উত্থাপন করতে পারেন, এটি যুদ্ধের সময় নয়। বরং দুটি যুদ্ধরত দেশকে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে কূটনৈতিক সমস্যার সমাধান করার সময়।


এই বৈঠকে দুই দেশের প্রতিনিধির মধ্যে আলোচনার সময় মোদি পুতিনের সঙ্গে ভারতীয় নাগরিকদের বিষয়টিও তুলে ধরার সুযোগ পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। যাঁরা ইউক্রেনের সঙ্গে বর্তমান যুদ্ধে ভারতীয়দের রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল।

এপ্রসঙ্গে বলা প্রয়োজন, পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রার মতে, দশজন ভারতীয় যখন দেশে ফিরে এসেছেন, আনুমানিক ৩০-৪৫ জন ভারতীয় নাগরিক এখনও রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ভারত তাঁদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের বিষয়টি রাশিয়ান কর্তৃপক্ষের কাছে জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন মস্কো সফর ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সম্পৃক্ততার ধারাবাহিকতাকে চিহ্নিত করে। “শেষ বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন ২০২১ সালের ডিসেম্বরে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।” কোয়াত্রা বলেন, দুই নেতা গত সেপ্টেম্বরে সমরখন্দে এসসিও সম্মেলনের সাইডলাইনে একটি বৈঠক এবং একাধিক ফোনালাপ সহ বিভিন্ন উপায়ে যোগাযোগ বজায় রাখা হয়েছে।

অতএব ভারত-রাশিয়া শীর্ষ সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন ভারতের ওপর তার পশ্চিম দেশীয় মিত্রদের কাছ থেকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে “আগ্রাসনের” পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ কমানোর মতো তীব্র আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। মোদির মস্কো সফর শেষ করার পর, তিনি ৯ জুলাই বিকেলে অস্ট্রিয়া পৌঁছবেন।