নিজস্ব প্রতিনিধি– লোকসভা নির্বাচনে প্রচারে এসে মালদহ উত্তরের সভা থেকে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ তিনি বললেন, ‘যুবপ্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছেলেখেলা করেছে তৃণমূল৷ ২৬ হাজার পরিবারের রুজিরুটি শেষ করে দিয়েছে৷’ নিয়োগ থেকে রেশন, ভোটের বাজারে রাজ্যের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগকেই হাতিয়ার করেছে বিজেপি৷ এসবের মাঝে ২০১৬ সালের প্যানেলের ২৬ হাজার চাকরি বাতিল বিজেপির কাছে নতুন ‘অস্ত্র’৷ শুক্রবার মালদহের সভা থেকে সেই ‘অস্ত্রে’ই শাসকদলকে বিঁধলেন প্রধানমন্ত্রী৷ চাকরি বাতিল ও যুবপ্রজন্মের ভবিষ্যৎ নষ্টের জন্য তৃণমূলকেই দায়ী করলেন তিনি৷ বললেন, ‘যুবপ্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছেলেখেলা করেছে তৃণমূল৷ ২৬ হাজার পরিবারের রুজিরুটি শেষ করে দিয়েছে৷ এত গুলো পরিবার অন্ধকারে৷’ মোদির কথায়, ‘একদল চাকরি পেতে ধার করে তৃণমূলকে টাকা দিয়েছে৷ আজ পরিবারগুলোর ভবিষ্যৎ অন্ধকারে৷’ তবে শুধু চাকরি দুর্নীতি নয়৷ আরও একাধিক দুর্নীতির ইসু্যতে এদিন রাজ্য সরকার তথা তৃণমূলকে দুষেছেন মোদি৷ উল্লেখ্য, নিয়োগ দু্র্নীতি নিয়ে গত কয়েকবছর ধরে সরগরম রাজ্য-রাজনীতি৷ দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে চলতি সপ্তাহে প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল করেছে কলকাতা হাইকোর্ট৷ বেতন ফেরতের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে৷ ঘটনাচক্রে যোগ্যরাও শাস্তির কোপে পডে়ছেন৷ যা নিয়ে চর্চা চলছে সর্বত্র৷ বাংলায় এসে গোটা ঘটনার দায় তৃণমূলের কাঁধেই চাপালেন মোদি৷ ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হয়েছে রাজ্য সরকার৷
শুক্রবার দেশে দ্বিতীয় দফার লোকসভা নির্বাচন৷ এই দ্বিতীয় দফায় এরাজ্যেও তিন কেন্দ্রে রয়েছে লোকসভা নির্বাচন৷ যার মধ্যে দার্জিলিং, রায়গঞ্জ ও বালুরঘাটে নির্বাচন প্রক্রিয়া চলছে৷ আর এই দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের দিনেই রাজ্যে ভোট প্রচার করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ আজ মোদিকে ঘিরে মালদহের নির্বাচনী জনসভায় প্রচুর মানুষের জমায়েত হয়৷ সেই বিপুল মানুষের সমাবেশের মধ্যে থেকে স্লোগান ওঠে ‘মোদি, মোদি, মোদি’ বলে৷ সভায় অভাবনীয় সাড়া পেয়ে আনন্দে আপ্লুত মোদি বলে ওঠেন, ‘এত ভালোবাসা কপালে জোটে না৷ মনে হচ্ছে, আমি হয় গত জন্মে বাংলায় জন্মেছিলাম৷ নয়তো পরের জন্মে আমি বাংলার মায়ের গর্ভে জন্ম নিতে চলেছি৷ আমার বাংলাকে এভাবে ভেঙে পড়তে দেব না৷ আপনাদের ভালোবাসা ব্যর্থ হতে দেব না৷ এই ভালোবাসা ফিরিয়ে দেব৷’
আর সেই বক্তৃতা শুনে উদ্বেল জনতা কলরব শুরু করতেই মোদি ভাষণ থামিয়ে দেন৷ মোদির ভাষণে আপ্লুত জনতাকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটু শান্ত হয়ে বসুন, আমার কথা শুনুন৷’ এরপর তিনি বলেন, ‘আপনাদের এই উৎসাহ, ভালোবাসা আমি মাথায় করে রাখব৷’ বক্তৃতার মাঝে মোদি বলেন, বাংলার শিল্প, সংস্কৃতি, দর্শন, প্রগতি, সবেতেই এগিয়ে ছিল বাংলা৷ সেই বাংলা আজ ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে৷
তবে মোদির এই বক্তৃতার মধ্যে আবেগ ও সত্যের চেয়ে রাজনৈতিক কৌশল দেখছে রাজনৈতিক মহল৷ কারণ এবার লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের স্লোগান, ‘তৃণমূলের গর্জন, বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন৷’ মোদি তৃণমূলের এই স্লোগানের পাল্টা দিতেই তিনি নিজেকে বাংলার খুব কাছের মানুষ বলে প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন৷