মধুছন্দা চক্রবর্তী: লোকসভা ভোটকে কেন্দ্র করে চুলোচুলি কম হচ্ছে না৷ তবে তা শুধু রাজনৈতিক বুলিতেই নয়, আক্ষরিক অর্থেই মাথার চুল নিয়েও কাটাকুটি চলছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের৷ আর সেই সব কাটছাঁটে পরোক্ষে রাজনৈতিক প্রচারে হাত লাগাচ্ছেন পাড়ার মোড়ের কিংবা রাস্তার ধারের সেলুনগুলো৷ রাজনৈতিক দলের সমর্থকরা তো বটেই হেভিওয়েট নেতারা পর্যন্ত সেলুনে পেঁৗছে যাচ্ছেন৷
এই তো সেদিন রায়বেরিলিতে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার পরে কাছাকাছি মোম্বাদেবী হেয়ার কাটিং সেলুনে সোজা ঢুকে প.ড়লেন কংগ্রেসের হেভিওয়েট প্রার্থী রাহুল গান্ধি৷ তাঁকে দেখে সেই সেলুনের মালিক মিঠুন কুমার তো হতভম্ব৷ বিভিন্ন ধরনের হেয়ার স্টাইল দেখে জিজ্ঞেস করলেন ‘ইয়ে সারি হেয়ার স্টাইল কাটে হো আপ?’ তারপর বসে পড়লেন মিঠুন কুমারের কাছে দাড়ি ট্রিম করতে৷ তারই ফাঁকে রাহুল গান্ধি জেনে নিলেন এই কাজে রোজগার কত হয়? সেলুনের মালিকও জানালেন, মোদি সরকারে আমলে সেনাবাহিনীতে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প নিয়ে ক্ষোভের কথা৷ রাহুল গান্ধিও আশ্বাস দিলেন তাঁরা সরকারে এলে এই প্রকল্প তুলে দেওয়া হবে৷ কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার জন্য অবশ্য মিঠুন কুমারের কাছে আবেদন রাখেননি রাহুল গান্ধি, বলেছেন যাঁকে পছন্দ তাঁকেই ভোট দিতে৷ আর ‘কংগ্রেসের গ্যারান্টি’র ফর্মটি তুলে দিয়ে এসেছেন ওই সেলুন মালিকের হাতে৷ তারপর, কংগ্রেসের এক্স হ্যান্ডেলে সেলুনে রাহুল গান্ধির ছবিসহ টুইট করা হয়েছে, ‘দ্য প্রিপারেশন অফ ইলেকশন মে এন্ডেড, বাট হেয়ারকাটিং ইজ অলসো নেসেসারি’৷
শুধু ভিনরাজ্য কেন, আমাদের রাজ্যের মধ্য হাওড়াতেই এমন সেলুন রয়েছে, যার মালিক রবিন দাস চুলের ছাঁটে মাথায় ফুটিয়ে তুলছেন কখনও পদ্ম, কখনও ঘাস ফুল৷ যাঁরা সেলুনে চুল কাটতে আসছেন, তাঁদের আর্জি মেনে৷ রবিন দাস নিজেকে হেয়ারকাট আর্টিস্টই বলতে পছন্দ করেন৷ কীভাবে করেন এইসব হেয়ারকাট?
মনের মধ্যে অাঁকা থাকে ছবিটা? তারপর ধৈর্য ধরে কাঁচি আর ক্ষুরের সূক্ষ্ম টানে সেই বিভিন্ন দলের প্রতীক মাথায় ফুটিয়ে তোলেন৷ তারপর রং-তুলির ব্যবহারে সেই ছবি আরও স্পষ্ট হয়৷ শুধু রাজনীতি ময়দানের ছবিই নয়, ওয়ার্ল্ড কাপের সময়ে মাঠের ছবিও তিনি তুলে ধরেন মাথায়৷ রোনাল্ডো থেকে সৌরভ গাঙ্গুলিকে চুলের ছাঁটে হুবহু ফুটিয়ে তোলেন মাথায়৷
শুরুটা হয়েছিল ২০০৩ সালে৷ ভ্যালেন্টাইন দিবসের সময়ে এই প্রজন্মের আবদারেই মাথায় চুলের ছাঁটে ফিুটয়ে তুলেছিলেন লাভ কিউপিড৷ তারপর থেকে একই কাজ করে চলেছেন৷ এবারেও লোকসভা ভোটের আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতীকের ছবি কাস্টমারদের মাথায় চুলের ছাঁটে বসিয়ে দিচ্ছেন মাথায়৷
ভোটের আগে স্থানীয় বাসিন্দারাই আসছেন চুলে নিজের নিজের নিজের দলের প্রতীক মাথায় বসাতে৷ না এখনও পর্যন্ত রাহুল গান্ধির মতো কোনও হেভিওয়েট নেতা অবশ্য তাঁর সেলুনে আসেননি? কিন্ত্ত স্বপ্ন দেখতে দোষ কী?
প্রথমে হেয়ার কাটিংয়ে ফুটে উঠছে মাথায় ঘাসফুল কিংবা পদ্ম ফুল অাঁকা হয়ে যাচ্ছে৷ ছবি অাঁকার ফাঁকে ফংাকে নাটক করেন, শর্ট ফিল্ম বানান, গিটার বাজান, সুর তৈরি করে করেন হেয়ার কাটিং আর্টিস্ট হাওড়ার রবিন দাস৷ এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে নিবেদন করেছেন ভোটের আবহে তৃণমূলের থিম সং — ‘তোমাকে মাতৃ রূপে দেখি’৷
সুকুমার রায় বলেছিলেন, ‘গোঁফের আমি, গোঁফের তুমি, গোঁফ দিয়ে যায় চেনা’৷ হাওড়ার রবিন দাসের কারিকুরিতে বলাই যায়, চুলের আমি চুলের তুমি চুল দিয়ে যায় চেনা! সত্যিই কে কোন দলের অনুগামী, তা দিব্যি বলে দেওয়া যাবে মাথার চুলের ছাঁটে পদ্ম কিংবা ঘাস ফুল দেখলে৷ তবে তিনি তো শিল্পী৷ তাই তাঁর কাছে সব ছবিই সমান গুরুত্ব পায়৷
এবারের লোকসভা ভোটে যে-ই জিতুক কিংবা যে-ই হারুক, হাওড়ার হেয়ারকাট আর্টিস্ট রবিন দাস কিন্ত্ত সবাইকেই মাথায় করে রাখেন, তাঁর হাতের কারসাজিতে৷