রাজনীতির রং বদলে জোড়াফুলে আস্থা রাখল জঙ্গলমহলের মানুষ

গোপেশ মাহাত, ঝাড়গ্রাম, ৪ জুন: মা মাটি মানুষের পক্ষে রায় দিল জঙ্গলমহল৷ ২০১৯ ছন্দপতন হলেও ২০১৪ জঙ্গলমহল আস্থা রাখল তৃণমূলে৷ এক সময়ের আতঙ্কের বধ্যভূমি জঙ্গলমহলে শান্তি প্রতিষ্ঠার অন্যতম কান্ডারী ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেই আশান্ত জঙ্গলমহলে শান্তি প্রতিষ্ঠার পর রাজ্য রাজনীতিতে নতুন সমিকরণ যোগ করেছিল জঙ্গলমহল৷ ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে ৩ লক্ষ্যের বেশি ভোটে জয়ী হয়ে ছিলেন ডা: উমা সরেন৷ ২০১৯ সালে তৃণমূলের গোষ্ঠী কন্দোল এবং তৃণমূল প্রার্থী বীরবাহা সরেন টুডুর বিরুদ্ধে একাংশের ক্ষোভ বিক্ষোভ থাকায় বিজেপি প্রার্থী কুনার হেম্ব্রম ১১৭৬৭ ভোটে জয় লাভ করেছিলেন৷ এবারে লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের রাজনৈতিক সমীকরণের ক্ষেত্রে কুড়মি ভোট যেমন একটি ফ্যাক্টর তেমনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিংক উন্নয়ন প্রকল্পের জেরে ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের বিপুর জয় বলে মনে করছেন তথ্যভিঞ্জ মহল৷

নির্বাচনের পাঁচ দিন আগে ঝাড়গ্রামের লোকসভা আসনের সদ্য প্রাক্তন বিজেপির সাংসদ কুনার হেমরমকে গোপীবল্লভপুরে তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভায় তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করে রাজ্য সরকার শিক্ষা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিপুল পরিমান কাজ করার কথা তুলে ধরেছিলেন৷ এর পাশাপাশি দুই কুড়মি সমর্থিত প্রার্থীর ভোট তলানিতে ঠেকে যাওয়ায় প্রমান করেছে কুড়মি মানুষ জন ভরসা রেখেছে রাজ্য সরকারের উপরেই৷ কুড়মিদের ভোট যে বিজেপিতে যায়নি তার প্রমান তৃণমূল প্রার্থীর বড় ব্যবধানে জয়৷ কার্যত কুড়মি ভোট বিজেপিকে শুয়িয়ে দিয়েছে৷

সিআরআই রিপোর্ট নিয়ে কেন্দ্রের দ্বিচারিতা তারা বুঝতে পেরেছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ গত পঞ্চায়েত ভোটে জেলায় ৭৯ টি গ্রামপঞ্চায়েতের মধ্যে সাতটা গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করে কিছুটা শক্তির প্রমান দিয়েছিল কুড়মি সংগঠন গুলু৷ কিন্ত্ত লোকসভার মতো নির্বাচনে কুড়মি সমাজের মানুষ ভরসা রেখেছে সেই তৃণমূলের উপর৷ অরাজনৈতিক জায়গা থেকে এসেও তৃণমূলের সাহিত্যিক প্রার্থী কালিপদ সোরেন কার্যত মাত করে দিলেন৷ উদ্ধার করলেন গত বারের হেরে যাওয়া আসন৷ সবুজ বিপ্লবে ধূলিসাৎ সব পক্ষ৷ লোকসভা নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর সবার আগে থেকে প্রচার শুরু করেছিল তৃণমূল প্রার্থী৷ প্রথম থেকেই বুথ ভিত্তিক বাড়ি বাড়ি প্রচারে ব্যাপক জোর দেওয়া হয়েছিল৷ একই বুথে বারে বারে প্রাচার চালিয়েছেন তৃণমূল নেতা, কর্মীরা৷ জেলার নেতা কর্মীদের নিরন্তর প্রচারে ফল মিলেছে হাতে নাতে৷ এর সাথে অবশ্যই রয়েছে লক্ষীর ভান্ডারের মতো প্রকল্প৷ এই প্রকল্প জঙ্গলমহলেও সব শ্রেনীর মহিলাদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়৷


ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনে সাতটি বিধানসভা এলাকায় প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মহিলা এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছেন৷ ফলে সবুজ আবিরে ঢাকা পড়ে গিয়েছে গেরুয়া রং৷ মোট ভোট পড়েছিল ১৪ লক্ষ ৮৫ হাজার ৫৯১৷ এর মধ্যে পুরুষ ও মহিলা ভোট প্রায় সমান সমান৷ তবে এবার সাহিত্যিক প্রার্থী কার্যত উড়িয়ে দিলেন বিজেপির চিকিৎসক প্রার্থী প্রণৎ টুডকে৷ জেলা বিজোপির নেতৃত্বদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আর বনিবনার অভাব এই হার আরো সামনে এনে দিয়েছে৷