• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

বিক্ষিপ্ত অশান্তির মধ্যেই সম্পন্ন মুর্শিদাবাদের নির্বাচন

কুশলকুমার বাগচী, বহরমপুর, ৭ মে— মঙ্গলবার তাপমাত্রার পারদ নামলেও, মুর্শিদাবাদ জেলা জুডে় রাজনীতির পারদ কিন্ত্ত ছিল উঁচুতে৷ এদিন বিক্ষিপ্ত অশান্তির মধ্য দিয়ে তৃতীয় দফায় মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন সম্পন্ন হয়৷ এছাড়াও এদিন ছিল ভগবানগোলা বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন৷ বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পডে়ছে ৭২.১৩ শতাংশ, মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে ৭৬.৪৯ শতাংশ এবং ভগবানগোলা

কুশলকুমার বাগচী, বহরমপুর, ৭ মে— মঙ্গলবার তাপমাত্রার পারদ নামলেও, মুর্শিদাবাদ জেলা জুডে় রাজনীতির পারদ কিন্ত্ত ছিল উঁচুতে৷ এদিন বিক্ষিপ্ত অশান্তির মধ্য দিয়ে তৃতীয় দফায় মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন সম্পন্ন হয়৷ এছাড়াও এদিন ছিল ভগবানগোলা বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন৷ বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পডে়ছে ৭২.১৩ শতাংশ, মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে ৭৬.৪৯ শতাংশ এবং ভগবানগোলা বিধানসভা কেন্দ্রে ৭৩.৬৮ শতাংশ৷ তবে এই ভোটের হার আরো বাড়তে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ কারণ বিকাল পাঁচটার পরেও অনেক বুথে ছিল মানুষের লম্বা লাইন৷

মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রটিকে এবার প্রথম থেকেই হাই প্রোফাইল কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়৷ কারণ এখানে একদিকে তৃণমূলের বিদায়ী সাংসদ আবু তাহের খান এবং বিজেপির বিধায়ক গৌরীশংকর ঘোষের বিরুদ্ধে জোট প্রার্থী হিসেবে দাঁডি়য়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম৷ মুর্শিদাবাদের ১৯৩৬টি বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল৷ ১৪৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকলেও
সকাল থেকেই মুর্শিদাবাদের ডোমকল, রানিনগরের বিভিন্ন বুথ থেকে উত্তেজনার খবর আসতে শুরু করে৷ এদিন সকালেই বিভিন্ন বুথ পরিদর্শন করেন মুর্শিদাবাদের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী আবু তাহের খান৷

ডোমকলের রায়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কুপিলা গ্রামে সোমবার রাতে কংগ্রেস কর্মী রবিউল আলম বিশ্বাসের বাডি়র সামনে গুলি চলে এবং বোমাবাজি হয়৷ নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে তিনি যাতে বুথে পৌঁছাতে না পারেন সেই জন্যেই তৃণমূল এই কান্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ কংগ্রেসের৷ যদিও তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগ অস্বীকার করে৷

এই কেন্দ্রেরই গুধিয়ার কাঁকসা রাহিমিয়া হাই মাদ্রাসার ২৫৪ নাম্বার বুথে ভোট শুরুর আগেই সকাল ছটার দিকে সিপিএম এজেন্টকে মারধর ও বাইক ভাঙচুরের অভিযোগ আসে৷ অভিযোগ ঘটনার সময় পুলিশের কোনো দেখা পাওয়া যায়নি৷ ভেতরে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেও তাদের সামনেই বাম এজেন্টকে এবং আরও দুজন সিপিএম কর্মীকে তৃণমূল মারধর করে বলে অভিযোগ৷ পরে লালবাগ থানার পুলিশ ও বিএসএফ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়৷ এক্ষেত্রেও অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল৷

রানিনগরের লোচনপুরের ৩৬ নম্বর বুথ থেকে সিপিএম এজেন্ট মুস্তাকিম শেখকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সামনেই মারধর করে তাডি়য়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে৷ অভিযোগ রাজ্য পুলিশ নিস্ক্রিয় থাকায়, বাধ্য হয়ে দূরের কলা বাগানে আশ্রয় নেয় মুস্তাকিম৷ এই ঘটনা জানতে পেরে মহম্মদ সেলিম সেখানে আসেন৷ অভিযোগ, সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন যে সিপিএম এবং নির্দলের দুই এজেন্টের ফর্ম চুরি করে তৃণমূলের দুজন এজেন্ট সেখানে বসে আছেন৷ তিনি সেক্টর অফিসের কাছে এই দুজনকে গ্রেফতারের দাবি জানান৷ অভিযোগ, প্রথমে রাজি না হলেও, পরে একজন ভুয়ো এজেন্টকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ৷ এরপর তিনি সিপিএম এজেন্টকে বুথে বসিয়ে দিয়ে আসেন৷

ডোমকলের দক্ষিণনগর এলাকায় বাম-কংগ্রেস এজেন্টদের মারধর এবং রাতভর বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে৷ মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের হরিহরপাড়ায় সোমবার রাতে কংগ্রেসের এজেন্টকে ফোন করে প্রাণের হুমকি দেওয়া হয় বুথে না যাওয়ার জন্য এবং তার পরে গভীর রাতে কংগ্রেসের ধরমপুর অঞ্চল সভাপতি মহম্মদ মিকাইল হোসেনের বাডি় লক্ষ্য করে দুষ্কৃতীরা দুটি বোমা ছোডে় বলে অভিযোগ৷ খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ও সেক্টর অফিসার সেখানে এসে পৌঁছায়৷

মুর্শিদাবাদ লোকসভার করিমপুরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বুথ জ্যামের অভিযোগ করে বিজেপি৷
জিয়াগঞ্জ থানার আমডহরায় ভোট দিতে যাওয়ার পথে বাম কর্মীকে আক্রমণ করে মারধরের অভিযোগ ওঠে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে৷ আহত কর্মী হাসপাতালে ভর্তি৷ রানিনগর থানার নজরানা এলাকার ২২৪ নম্বর বুথে তৃণমূল কর্মীদের ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বাম-কংগ্রেস সমর্থকদের বিরুদ্ধে৷
মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের প্রার্থী গৌরীশংকর ঘোষ বেআইনিভাবে প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগের অভিযোগ করেন৷ তিনি বলেন, “আজিমগঞ্জ রায় বুধ সিং হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে এই স্কুলেরই প্রিসাইডিং অফিসার করা হয়েছে৷ এটা হতে পারে না৷ তিনি ভোটারদেরকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন৷ আমরা তার বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ করলেও এখনো পর্যন্ত কোনো স্টেপ নেওয়া হয়নি৷”

এরই মধ্যে এদিন শীতলকুচির প্রসঙ্গ টেনে চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেন জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী ধনঞ্জয় ঘোষ৷ এদিন তিনি রঘুনাথগঞ্জ ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি গৌতম ঘোষের সঙ্গে বাকবিতন্ডা এবং ধস্তাধস্তিতে জডি়য়ে পডে়ন৷ ভোট শুরুর কিছুক্ষণ পরেই রঘুনাথগঞ্জের ৬৪ নম্বর মীরেরগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে ঢুকে ধনঞ্জয় ঘোষ ভোটারদের প্রভাবিত করছে, এই অভিযোগ তুলে ভিডিও করছিলেন গৌতম ঘোষ৷ আর তারপরই তিনি গৌতম ঘোষকে হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ ওঠে৷ দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়৷ পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর তৎপরতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়৷ রঘুনাথগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ধনঞ্জয় ঘোষ৷ এরপর ধনঞ্জয় ঘোষ বলেন, “ভোটারদের মধ্যে ভয় সঞ্চার করার জন্য এরকম পরিস্থিতি তৈরি করেছেন গৌতম ঘোষ৷ প্রয়োজনে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের মতো শীতলকুচির অবস্থা তৈরি করতে পারে নির্বাচন কমিশনের নিরাপত্তা রক্ষীরা”৷ অন্যদিকে গৌতম ঘোষ বলেন সঞ্জয় ঘোষ বুথের মধ্যে ঢুকে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিলেন আমি জিজ্ঞাসা করায় আমাকে ধাক্কা দেন৷ শীতলকুচির প্রসঙ্গ টেনে ধনঞ্জয়ের করা মন্তব্যে শোরগোল শুরু হয়েছে জেলা তথা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে৷

বিভিন্ন জায়গায় অশান্তির মাঝেও জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের ৭ নং ওয়ার্ডের ১৪৩ নম্বর বুথে এক অন্য ছবি দেখা যায়৷ এই কেন্দ্রে মেশিন বিভ্রাট এর জন্য ভোট শুরু করতে অনেক দেরি হয়৷ সকাল আটটার দিকে প্রিসাইডিং অফিসার জানান ভিভিপ্যাট মেশিনে লাইট জ্বলছেনা দেখে তা সেক্টর অফিসারকে জানানো হয়েছে৷ ইঞ্জিনিয়ার এসে মেশিন চেঞ্জ করে নতুন মেশিন লাগালে ভোট গ্রহণ শুরু হবে৷ তখনো পর্যন্ত মক পোলও শুরু করা যায়নি৷ কিন্ত্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদেরকে অভয় দিয়ে বলেন, দেরিতে হলেও ভোট শুরু হবে৷ এক ঘন্টা পেডি়য়ে গেলেও সবাই ভোট দেওয়ার জন্য শান্তিপূর্ণভাবে লাইনে দাঁডি়য়ে অপেক্ষা করতে থাকেন৷ শহরের অন্যান্য বুথ গুলির লাইনে সকালের দিকে মহিলাদের সংখ্যাধিক্য লক্ষ্য করা যায়৷

জঙ্গিপুরের সেকেন্দ্রায় ভোর ৫:৩০ নাগাদ বিজেপির এজেন্টদেরকে বসতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ ওঠে এবং তাদেরকে প্রাণের হুমকিও দেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ৷ ৮টা১৫ নাগাদ পুলিশ এসে তাদেরকে ৫০০ মিটার দূরের দুর্গামন্দির থেকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসে৷ এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত খড়গ্রামের ৩৫নং সাহাপাড়া ২নং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথের সামনে বেআইনি জমায়েতের অভিযোগ ওঠে৷ কুইক রেসপন্স টিমের অফিসাররা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং রাজ্য ও কেন্দ্রীয় জওয়ানদের সহযোগিতায় জমায়েত সরিয়ে দেওয়া হয়৷