তৃণমূল ও বিজেপির আজ মূল এজেন্ডা সাধু আর মুসলমান : অধীর

বাংলার রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির উত্থান

কুশলকুমার বাগচী, বহরমপুর, ২১ মে— বাংলায় তৃতীয় শক্তির উত্থানে আজ হতাশাগ্রস্থ বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস৷ তাই এই দুই দলের এখন মূল এজেন্ডা হচ্ছে সাধুসন্ত আর মুসলমান৷ মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এই মন্তব্যই করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুর কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরী৷ নির্বাচনের দফা যত এগিয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেসের আক্রমণও তত বেডে়ছে বলে তিনি এদিন মন্তব্য করেন৷ রাজ্যে তৃতীয় শক্তি হিসাবে বাম-কংগ্রেসের দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলার কারণেই তৃণমূলের হতাশা এবং আক্রমণ বাড়ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন৷ বহরমপুর কেন্দ্রে নির্বাচনের আগে রামনবমীর মিছিল ঘিরে রেজিনগরে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, সেটা পরিকল্পিত ছিল বলেই অধীরবাবু এদিন উল্লেখ করেন৷ এ প্রসঙ্গে তিনি নাম না করে ভরতপুর কেন্দ্রের বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসের হুমায়ুন কবীরের বিতর্কিত মন্তব্য এবং তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর চুপ করে থাকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন৷

যাদবপুর কেন্দ্রে সি পি এম প্রার্থীর প্রচারের সময় তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে৷ এ নিয়ে সাংবাদিকরা অধীর চৌধুরীকে প্রশ্ন করলে, তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে যত দফা এগিয়ে যাচ্ছে, তৃণমূল বুঝতে পারছে যে তার জয়ের সম্ভবনা ক্রমশ কমছে, তখন তৃণমূল আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে৷ ভোটের প্রথম দু’দফায় তৃণমূলের এত আক্রমণ ছিল না৷ যত পর্যায় এগিয়ে যাচ্ছে, তৃণমূল তত বেশি করে করে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে৷ তার কারণ তৃণমূলের মধ্যে হতাশা বাড়ছে৷ হতাশা বাড়ার প্রবণতা থেকে তৃণমূল ভাবছে, এগুলো করে যদি আমরা আমাদের ঠেকাতে পারি৷ এটার একটা দিক যেমন তৃণমূলের হতাশা বাড়ছে৷ আরেকটা দিক হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস-বাম তৃতীয় শক্তি হিসাবে খুব জোর গতিতে এগিয়ে চলেছে৷’ সাধু-সন্তদের নিয়ে নির্বাচনী সভাগুলিতে যেভাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং দেশের প্রধানমন্ত্রীর বাগযুদ্ধ শুরু হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন করলে, অধীর চৌধুরী বলেন, ‘সাধুদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এমনি এমনি বলেনি৷ সাধুদেরকে গালাগালি করার মাধ্যমে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ওনার পায়ের তলা থেকে হারিয়ে যাওয়া তৃণমূল ভোটটাকে তিনি দখলে রাখতে চাইছেন৷ ভাবছেন, সাধু সন্তদের গালাগালি দিলে, সংখ্যালঘু মানুষ খুশি হবে৷ আমাকে ভোট দেবে৷ এই ধরনের নিকৃষ্ট রাজনীতি করতে উনি অভ্যস্ত৷ আমার একটাই বক্তব্য, না প্রধানমন্ত্রী, না মুখ্যমন্ত্রী ভোট যখন মানুষের সমস্যা নিয়ে মানুষের ভালো-মন্দ নিয়ে আলোচনা হোক৷ ভোটের সঙ্গে ধর্মকে মাখিয়ে দিয়ে, মিশিয়ে দিয়ে এ কি রাজনীতি হচ্ছে বাংলায়, আমরা তা দেখে অত্যন্ত চিন্তাগ্রস্থ হচ্ছি৷ কারণ বাংলার মানুষ এই ধরণের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সঙ্গে এর আগে পরিচিত ছিল না৷ যেদিন থেকে পশ্চিমবঙ্গে বি জে পি পার্টির প্রবেশ শুরু হয়েছে, বি জে পি পার্টির প্রবেশ এই বাংলায় সম্ভব হয়েছে মমতা ব্যানার্জীর পৃষ্ঠপোষকতায়, মমতা ব্যানার্জীর সৌজন্যে৷ সেদিন থেকে এই বাংলার রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতা মাথা চাড়া দিচ্ছে৷ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এবং বাংলার প্রধানমন্ত্রী উভয়ই এই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির দুটো মেরু হতে চাইছে৷ দুটো পোল হতে চাইছে৷ দুটো পোলে দাঁডি়য়ে এ সাধুদের কথা বলবে৷ আরেকজন সাধুদের বিরুদ্ধে কথা বলবে৷ সাধুর কথা বলে হিন্দু ভোট নেবে, সাধুর বিরোধিতা করে মুসলমান ভোট নেবে৷ একটা অদ্ভুত এবং ঘৃণ্য রাজনৈতিক খেলা বাংলায় চলছে৷’


বহরমপুর কেন্দ্রে নির্বাচনের আগে রেজিনগরে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে যে তুমুল সংঘর্ষ হয়, সেই সংঘর্ষের পিছনে বেলডাঙ্গা ভারত সেবাশ্রম সংঘের প্রধান স্বামী প্রদীপ্তানন্দজী মহারাজের যুক্ত থাকার কথা নির্বাচনী সভা থেকে উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এ নিয়ে অধীর চৌধুরীকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, ‘রেজিনগরের দাঙ্গা তো পরিকল্পিত৷ যদি পরিকল্পিত না হত, তাহলে মুখ্যমন্ত্রী যেদিন মুকেশকুমারকে সরানো হল, সেদিন উত্তরবঙ্গ না রায়গঞ্জ কোথা থেকে তিনি কি করে বললেন, আগামী দিনে দাঙ্গা হলে ঠেকানোর কেউ নেই৷ তার মানে উনি জানতেন দাঙ্গা হবে৷ দাঙ্গার সময় ওখানকার ওসি নির্লিপ্ত ছিল৷ উদাসীন ছিল৷ বার বার তাকে সতর্ক করা সত্ত্বেও, সে সেটাকে প্রশ্রয় দিয়েছিল৷ ফলে দাঙ্গাটা পুলিশের প্রচ্ছন্ন মদতে হয়েছে৷ সেই পুলিশ কার মদতে চলে, সেটা আমরা সবাই জানি৷ স্বাভাবিকভাবে আমি প্রথম দিনই অভিযোগ করেছিলাম, এই দাঙ্গা তৃণমূল এবং বিজেপি-উভয়ের স্বার্থে করা হয়েছে৷ কারণ সেদিনই আমি বহরমপুরে হাসপাতালে গিয়েছিলাম আহত মানুষগুলোকে দেখার জন্য৷ বিজেপি সেদিন সেখানে শ্লোগান তোলে, হিন্দু মার খাচ্ছে কেন অধীর চৌধুরী জবাব দাও৷ স্বাভাবিকভাবেই আমরা এখানে স্পষ্ট মেরুকরণের বার্তা দেখতে পেলাম৷ তৃণমূলের বিধায়ক বলছে, সত্তর শতাংশ মুসলমান, ত্রিশ শতাংশ হিন্দু৷ তাদেরকে যা খুশি তাই করা যায়৷ দিদি সেখানে চুপ করে আছে৷ তার মানেটা কি? মুসলমান দেখো, আমি তোমাদের কতরকমভাবে সাহায্য করছি৷ হিন্দুদের মারতে গেলেও, আমরা তোমাদেরকে সমর্থন করবো৷ একথাই তো স্পষ্ট হচ্ছে৷ তাই দিদি ও মোদি উভয়েই এই বাংলার রাজনীতিতে ক্রমশ তৃতীয় শক্তির উত্থান দেখে তারা আজ হতাশাগ্রস্থ৷ কংগ্রেস এবং বামের যে উদয় হচ্ছে, তারা যে যৌথভাবে নতুন করে বাংলায় তাদের অস্তিত্বের প্রমাণ দিচ্ছে, তাতে মোদি আর দিদি উভয়ই আতঙ্কিত৷ উভয় দল আতঙ্কিত হয়ে, তাদের সুবিধা হয়, মন মতো হয় এমন এজেন্ডা তারা বের করছে৷ খালি হিন্দু আর মুসলমান৷ সাধুসন্ত আর মুসলমান৷’