নিজস্ব প্রতিনিধি— সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট শিক্ষক দুর্নীতি মামলায় এক যুগান্তকারী রায় ঘোষণা করেছে৷ শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী মিলিয়ে প্রায় ২৬ হাজার কর্মীদের চাকরি বাতিল করেছে হাইকোর্ট৷ এই তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে শুধুমাত্র একজনের নাম৷ বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে ক্যানসার আক্রান্ত সোমা দাসের চাকরি বহালই থাকছে৷ তবে চাকরি বজায় থাকলেও মন থেকে খুশি হতে পারছেন না সোমা৷ তিনি বলেন,‘হেরেও জিতে আছি, নাকি জিতেও হেরে আছি, জানি না!’
২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে দেওয়া হয়েছে৷ উচ্চ আদালত অবশ্য জানিয়েছে, সোমা ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার জন্য মানবিক কারণেই তাঁর চাকরি বহাল থাকবে৷ যদিও সোমার বক্তব্য,‘আমাদের মঞ্চের দাবি কখনই আমার একার চাকরির জন্য ছিল না৷ আমাদের দাবি ছিল, যোগ্য প্রার্থীরা যেন তাঁদের অধিকার পান৷ দীর্ঘ দিনের দুর্নীতির কারণেই আমরা চাকরি পায়নি৷’ এরপরই সোমা বলেন, হাইকোর্টের আজকের রায়ে এটা প্রমাণিত যে, নিয়োগ পদ্ধতিতে দুর্নীতি ছিল৷ আমরা চাকরির যোগ্য দাবিদার৷ এই রায়ের পর চাকরি প্রাপকের প্রশ্ন, তাঁরা কী পেলেন? সত্যিই তো! সুবিচারের মাধ্যমে যতক্ষণ না তাঁরা চাকরি পাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বলা বিচার সম্পন্ন হয়েছে এটা বলব কী করে!’ একই সঙ্গে তিনি আরও জানান, ‘বাতিল হওয়া প্যানেলেও অনেক শিক্ষক শিক্ষিকা রয়েছে, তাঁদের চাকরিও প্রশ্নের মুখে৷ তাঁরাও যেন সসম্মানে আবার পুরনো চাকরিতে ফিরে যেতে পারেন সেটা দেখার জন্য বিচারপতিদের কাছে অনুরোধ করছি৷’
ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার কারণেই চাকরি থেকে গেল সোমার৷ হাইকোর্টের রায়ের পর পর বার বার এই কথাই শুনতে হচ্ছে সোমাকে৷ কিন্ত্ত তিনি জানিয়েছেন, যে যখন তিনি এসএসএসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন তখন তিনি ক্যানসার আক্রান্ত ছিলেন না৷ এমনকি তিনি এই আন্দোলনেও একজন আন্দোলনকারী হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন৷
কথা বলতে বলতে আবেগপ্রবন হয়ে পড়েন তিনি৷ কিছুটা আফসোসের সুরে তিনি বলেন, ‘আমি চাকরি হয়তো করব৷ কিন্ত্ত আমার মতো অনেকের মনেই থেকে যাবে যে ক্যানসারে জন্যই চাকরিটা থেকে গেল৷ আমার থেকে অভাগা এই দুনিয়ায় কেউ নেই৷ আমার যোগ্যতা যেন দুর্নীতির তলায় কোথাও হারিয়ে গেল৷ দুর্নীতিই আমার এই পরিণতির জন্য দায়ী৷ এত দিনের কষ্ট, পরিশ্রমের বদলে বড় হয়ে উঠল আমার ক্যানসার আক্রাম্তের পরিচয়৷ আদালতের কাছে আমি কোনও বিশেষ সুবিধা পায়নি৷ তবে আমাকে দেওয়া হয়েছে৷ আমি একদমই খুশি নই৷’
২০১৬ সালে নবম- দশম শ্রেণীর শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসেছিলেন সোমা৷ তবে মেধাতালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও তাঁকে চাকরি দেওয়া হয়নি৷ সেই অভিযোগে তিনি বাকি সকলের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধর্না, আন্দোলন করেছেন৷ সেই সময়ই তিনি জানতে পারেন তিনি ক্যানসার আক্রান্ত৷ কিন্ত্ত লড়াইয়ের ময়দান থেকে পালিয়ে যাননি তিনি৷ রোদ, বৃষ্টিমাথায় নিয়ে অসুস্থ সোমা দিনের পর দিন লড়াই করে গিয়েছেন৷ সেই সোমাকে চাকরি দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানান বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়৷ সেই অনুরোধ মেনে ক্যানসার আক্রান্ত সোমাকে চাকরির সুপারিশপত্র দেয় কমিশন৷ বীরভূমে, নিজের গ্রামে এক স্কুলে বাংলা শিক্ষিকা হিসাবে চাকরি পান তিনি৷