বিধানসভা নির্বাচনে মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন মহাবিকাশ আঘাড়ি মাথা তুলতে পারেনি। তবে ঝাড়খণ্ডে আবার মসনদে কংগ্রেস, জেএমএম ও আরজেডি জোট। এদিকে পশ্চিমবঙ্গের ৬টি বিধানসভার আসনের উপনির্বাচনে সবগুলোতেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। নির্বাচনের ফল বেরোনোর পরই বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’য় কংগ্রেসের গুরুত্ব হ্রাস এবং তৃণমূলের গুরুত্ব বৃদ্ধি নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। তৃণমূল নেতৃত্বেরও দাবি, মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস এবং উদ্ধবের শিবসেনার শোচনীয় হারের পর জোটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।
২০২৪-এর লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ৯৯-এ পৌঁছনোর পর স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্ব বেড়েছিল কংগ্রেসের । ‘ইন্ডিয়া’তে দাপট বেড়েছিল তাদের। এবার ‘ইন্ডিয়া’ জোটে তৃণমূল কংগ্রেসের গুরুত্ব বাড়ল। বিপরীতে গুরুত্ব কমল কংগ্রেসের। জোটে অন্যতম দুই শরিক কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস। জোটে থাকলেও ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে বিভিন্ন রাজ্যে আসন বন্টন নিয়ে মতপার্থক্য প্রকট হয়ে ওঠে। বিরোধী জোটে থেকেও বাংলায় আসন নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের। এদিকে জোটে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দাদাগিরির অভিযোগ তোলে ইন্ডিয়ার শরিকরা। লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস সভাপতি খাড়গের ডাকা ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে গরহাজির ছিল তৃণমূল। আবার বাংলায় রাহুল গান্ধীর ন্যায়যাত্রা নিয়েও নানা বিতর্ক তৈরী হয়েছিল।
কিন্তু বিধানসভার উপনির্বাচনের ফলাফলের পর রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন, ইন্ডিয়া জোটে কংগ্রেসের দাপট এবার কমল। বিরোধী জোটে শেষ কথা বলার জায়গায় আর নেই মল্লিকার্জুন খাড়গে কিংবা রাহুল গান্ধীরা। অন্যদিকে তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রে ব্যর্থ হওয়ায় কংগ্রেসের পরিস্থিতি এখন ‘পুনর্মূষিক ভব’। তৃণমূলের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, ‘তৃণমূল মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ড কোনও জায়গাতেই লড়েনি। ফলে এই বিষয় নিয়ে এখন নয় , পরে কথা বলব।’
তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনকে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘তৃণমূল বাংলার উপনির্বাচনে ৬টি আসন জিতেছে। বিজেপি ছাড়াও আমরা লড়াই করেছি কংগ্রেস এবং সিপিএমের সঙ্গে। এই দুই দল প্রত্যেকটি আসনেই প্রার্থী দিয়েছিল। এটা মনে রাখা দরকার, ‘ইন্ডিয়া’ য় কোনও দলের সঙ্গে আমাদের কোনও নির্বাচনী জোট নেই। ফলে ‘ইন্ডিয়া’ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়োজনও নেই।’
রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপি-বিরোধিতার প্রশ্নে কংগ্রেসকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। তৃণমূল যে বারবার একার লড়াইয়ে বিজেপিকে বড় ব্যবধানে হারাচ্ছে, এটাই সামনে আনছে তারা।
এদিকে শুধু কংগ্রেসই নয়, ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক অন্য দলগুলির থেকেও বিজেপি-বিরোধিতার প্রশ্নে মমতার রেকর্ড যে অনেক ভাল, সেটাও তুলে ধরা হচ্ছে তৃণমূলের পক্ষ থেকে। প্রসঙ্গত , গত জুলাই মাসে মহারাষ্ট্রে অনন্ত আম্বানির বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মুম্বই গিয়ে মমতা উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনে মহাবিকাশ আঘাড়ীর হয়ে মমতা প্রচার করবেন। কিন্তু পরে পরিস্থিতির গতিবিধি আঁচ করে তিনি সেই সিদ্ধান্ত বদলান, তা-ও তুলে ধরেছে তৃণমূল।
তৃণমূলের বক্তব্য, হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্র বিধানসভার ফলের প্রভাব জাতীয় স্তরের বিরোধী রাজনীতিতে পড়বে। আপাতত সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে বিরোধী দলগুলির সমীকরণ কী দাঁড়ায় এ বার সেই দিকেই নজর রাখবে রাজনৈতিক মহল।
রাজ্যের উপনির্বাচনেও শাসকদলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল বিজেপি। প্রাপ্ত ভোটের বিচারে বিজেপিকে অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছে তৃণমূল। ফলে বিজেপি বিরোধিতায় বিরোধী জোটের মধ্যে গুরুত্ব বাড়ছে তৃণমূলের।