ভণ্ডামির মুখোশ খুলে যাচ্ছে

এক অত্যন্ত কঠিন সময়ের মধ্যে সাধারণ মানুষ আজ দিশেহারা৷ দশ বছরের শাসনে মোদি সরকার দেশবাসীকে দিয়েছে ক্ষুধা, দারিদ্র এবং বুলডোজার৷ দেশের সংবিধানের চারটি স্তম্ভ যথা ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সামাজিক ন্যায়, এই চারটি স্তম্ভকেই আরএসএস-বিজেপি ভেঙে দিতে চাইছে৷ সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগে স্বৈরতান্ত্রিক আধিপত্যবাদ তথা ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে৷ ভারতীয় আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়ে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই তাদের মূল লক্ষ্য৷ সেই কারণে এই লোকসভা নির্বাচন এক যুগসন্ধিক্ষণ৷ ভারতবর্ষের সংবিধান, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্বের মধ্যে ঐক্য থাকবে কিনা সেটাই এখন বড় প্রশ্নচিহ্নের সম্মুখীন৷

নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন আরএসএস-বিজেপির নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়েছিল নির্ধারিত লাইন ধরেই৷ কিন্ত্ত দু’দফা ভোটগ্রহণ শেষ হতেই সেই প্রচার বেলাইন হয়ে গেছে৷ এখন তো চার দফা ভোটগ্রহণও শেষ৷ সোমবার হবে পঞ্চম দফার ভোটগ্রহণ৷ তারপরও বাকি থাকবে আরও দু’দফা৷ শুরুতে বুক ফুলিয়ে যেভাবে উন্নয়নের কথা বলতেন, তাঁর সরকারের দশ বছরের সাফল্যের খতিয়ান হাজির করতেন, সব কা সাথ সব কা বিকাশের ধ্বজা ওড়াতেন, সর্বোপরি সর্বত্র মোদির গ্যারান্টি হরির লুটের বাতাসার মতো বিলিয়ে বেড়াতেন, সেসব এখন নিমেষে হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে৷ তিনি এখন আর ভারতকে বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চহারে বেড়ে চলা অর্থনীতি বলে গলার শিরা ফোলাচ্ছেন না৷ বলছেন না ফাইভ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির কথাও৷ ভুলেও উচ্চারণ করছেন না ২০৩৬ সালে ভারতে অলিম্পিক আয়োজনের প্রতিশ্রুতির কথা৷ সর্বোপরি স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব, অমৃতকাল পেরিয়ে ২০৪৭ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষে ভারতকে আমেরিকা-ইউরোপের মতো উন্নত অর্থনীতির দেশ বানানোর দিবাস্বপ্ন দেখানোর কথাও তাঁর নির্বাচনী ভাষণ থেকে চিরতরে বিদায় নিয়েছে৷ তিনি এখন সবকিছু ছেড়ে দিয়ে ধর্মান্ধ হিন্দুত্বের পচা ডোবায় ডুব দিয়ে ভোটে জেতার জন্য ঘৃণা-বিদ্বেষ-বিভাজনের কদর্য লাইন অাঁকড়ে ধরেছেন৷ ভোট শুরুর আগে তাঁর সদম্ভ ও ঔদ্বত্যপূর্ণ ঘোষণা ছিল বিজেপি একাই জিতবে ৩৭০ আসন৷ আর জোটগতভাবে জয় ছাড়িয়ে যাবে ৪০০ আসন৷ লক্ষ্যমাত্রা পরিষ্কার৷ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে জেতা মানে সংবিধান থেকে ধর্ম নিরপেক্ষতাও গণতন্ত্রকে ছেঁটে ফেলে একদলীয় এবং একনায়কতন্ত্রী হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা৷ মনুবাদের অনুসারি নতুন সংবিধান তৈরি করে অহিন্দুদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা৷ মানুষের যাবতীয় গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে গৈরিক অনুশাসন চাপিয়ে দেওয়া৷

মানুষ যে এই শয়তানিটা ধরে ফেলেছেন তা গত চারদফা ভোটের পরই টের পেয়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবির৷ তাই রাতারাতি লাইন ছেড়ে বেলাইনে ঢুকে পড়েছেন নরেন্দ্র মোদি৷ প্রচারে প্রাধান্য পাচ্ছে ধর্মীয় মেরুকরণ ও হিন্দুত্বের কথা৷ উঠে আসছে নারী শক্তির কথা৷ বছরে দু’কোটি চাকরি দেবার কথা বলে যে স্বাধীন ভারতের ইতিহাস সবচেয়ে ভয়াবহ বেকারি ডেকে এনেছে তাঁকে বিশ্বাস করা যায় না৷ কর্পোরেট ও ধনীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করে যে দেশকে আয় ও সম্পদ বৈষম্যে ব্রিটিশ আমল থেকেও খারাপ অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে সে কখনওই মানুষের নেতা হতে পারে না৷ আসলে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷