দিল্লি, ১৫ মে: গত সোমবার চাবাহার বন্দর নিয়ে ইরানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত। ফলে আগামী ১০ বছরের জন্য এই বন্দরের নিয়ন্ত্রণ এখন ভারতের হাতে। এই নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার নাম না করে ভারতকে আক্রমণ করে আমেরিকা। সেই হুমকির আজ পাল্টা জবাব দিল ভারত। এবিষয়ে আমেরিকার বিদেশ দপ্তরের সহকারী মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, “চাবাহার বন্দর নিয়ে যে ভারত ও ইরানের চুক্তি হয়েছে, সেই বিষয়ে আমরা অবগত। ভারতের বিদেশ নীতি নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। এদিকে ইরানের সঙ্গে চাবাহার বন্দর নিয়ে তাদের সেই চুক্তিও দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আওতয় পড়ে। তবে ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। এবং তা জারি থাকবে। ”
তিনি আরও বলেন, “কেউ যদি ইরানের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য করার কথা ভাবেন, তাহলে তাদের ওপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। সেই কথাটা যেন তারা মনে রাখেন। গত তিন বছরে তেহরানের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার জন্য প্রায় ছ’শো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর আমরা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি। প্রয়োজনে সেই তালিকা আরও বড় হতে পারে। আমরা চাই ভারত তার বৈদেশিক এবং ইরানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সংক্রান্ত নীতি স্পষ্ট করুক।””
বেদান্ত প্যাটেলের এই মন্তব্যের পর ঝড় ওঠে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহলে। আজ বুধবার আমেরিকার এই মন্তব্যের জবাব দিল ভারত। আজ বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, “আমি দেখেছি এই বিষয়ে কিছু মন্তব্য করা হয়েছে। তবে এই বিষয়ে কিছু সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত নয়। সাধারণ মানুষকে বিষয়টি বুঝতে হবে। আমার মনে হয় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা দরকার। এটা বুঝতে হবে যে, এই চাবাহার বন্দর প্রকল্পে সবার মঙ্গল হবে। এই চুক্তির ফলে সকলের লাভ হবে। আশা করি অনেকেই এই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুদ্র দৃষ্টিভঙ্গি রাখবেন না। অতীতে এইধরনের কাজ করেনি তারা(আমেরিকা)। ওয়াশিংটন কিন্তু চাবাহারের বৃহত্তর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশংসা করেছে। গোটা বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে মিটে যাবে। সেই বিষয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। ”
প্রসঙ্গত চাবাহার বন্দরের শহিদ বেহস্তি পোর্ট টার্মিনাল ব্যবহারের জন্য ইরানের সঙ্গে চুক্তি করে ভারত। গত ১৩ মে, সোমবার সেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইরানে গিয়ে ঐতিহাসিক চাবাহার বন্দর চুক্তি স্বাক্ষর করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল। যার ফলে পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে নৌ বাণিজ্যে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে ভারত। এই বন্দরের মাধ্যমে আফগানিস্তান সহ মধ্য এশিয়া, এমনকী ইউরোপের সঙ্গেও সংযোগ স্থাপন করতে পারবে ভারত। ভারতের পরিকল্পনা, ইরানের চাবাহার বন্দরকে ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোরের সঙ্গে যুক্ত করার। এই করিডোরের মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে ভারত।
কিন্তু চাবাহার বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইরানের সঙ্গে ভারতের চুক্তি ভালো চোখে দেখেনি ওয়াশিংটন। তারপরেই ভারতকে ইঙ্গিতপূর্ণ সতর্কবার্তা দেয় আমেরিকা। যদিও ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর দাবি করেন, আমেরিকা চাবাহার বন্দর প্রকল্পকে নেতিবাচকভাবে দেখছে না। তাঁর কথায়, চাবাহার বন্দর প্রকল্পের সার্বিকভাবে প্রশংসা করেছে আমেরিকা।
এদিকে চাবাহার বন্দর নিয়ে ভারত এতদিন ধরে কাজ করলেও দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির ক্ষেত্রে কেন বিলম্ব হল? এই প্রশ্নের জবাবে জয়শংকর বলেন, ‘ইরানের দিক থেকে নানান সমস্যা দেখা দিয়েছিল। শর্ত বদলেছে, জয়েন্ট ভেঞ্চার পার্টনার বদল করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত আমরা সব জটিলতা কাটিয়ে চুক্তি করতে পেরেছি। এই চুক্তির প্রয়োজন ছিল। তাছাড়া এই বন্দরকে উন্নত করা যেত না। এর ফলে এখন গোটা অঞ্চলের উপকার হবে।’