মোল্লা জসিমউদ্দিন: বুধবার এক মামলার শুনানি পর্বে রাজ্যের ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ উগরে দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ৷ নিয়োগ দুর্নীতি মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করা নিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিবের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী৷ গত ২২ মার্চ মুখ্যসচিব বি পি গোপালিকাকে নোটিস জারি করে কলকাতা হাইকোর্ট৷ ৩ এপ্রিলের মধ্যে রিপোর্ট তলব করা হয়৷ ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের কাছে জানতে চায়, ‘নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়া সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সিবিআইয়ের তরফ থেকে রাজ্যের কাছে যে অনুমোদন চাওয়া হয়েছিল, সেবিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কতদিনের মধ্যে নেওয়া সম্ভব হবে?’ বুধবারের মধ্যে তা জানানোর নির্দেশিকা ছিল৷ তবে এদিন রাজ্য এই বিষয়ে কোন রিপোর্ট জমা দেয়নি৷ এই মামলার দ্বিতীয় শুনানি পর্বে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ‘আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে রাজ্যের মুখ্যসচিব যদি জবাব না দেয় তাহলে আদালত তাঁকে সশরীরে ডাকতে বাধ্য হবে’৷ নিয়োগ মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ শিক্ষা দফতরের প্রাক্তন একাধিক পদস্থ কর্তা জেলে রয়েছেন৷ শিক্ষা দফতরের বেশ কয়েকজন আধিকারিকের বিরুদ্ধেও বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে৷ এ ব্যাপারে গত শুনানিতে অভিযুক্ত সরকারি কর্মীদের গ্রেফতারির বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিবের অবস্থান জানতে চেয়েছিল বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তর ডিভিশন বেঞ্চ৷ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইযের অভিযোগ, ‘এ ব্যাপারে রাজ্য কোনও সহযোগিতা করছে না’৷ এতেই ক্ষুব্ধ বিচারপতি এদিন দুুপুরে সরকারি আইনজীবীর কাছে কৈফিয়ত তলব করেছিলেন৷ এও জানিয়েছিলেন, আইনজীবীর জবাবে সন্ত্তষ্ট না হলে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে ডেকে পাঠাবেন৷ এদিন সরকারি আইনজীবী আদালতকে জানান, “মুখ্যসচিব ভোটের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন৷ নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ার জন্য দেরি হচ্ছে৷”
এরপরই প্রতু্যত্তরে বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, “২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নোটিস দেওয়া হয়েছিল৷ দেড় বছর হয়ে গেল, একটা অনুমতি দেওয়ার সময় পেলেন না? এখন নির্বাচনের অজুহাত দিচ্ছেন?” এরপরই এ ব্যাপারে মঙ্গলবারের মধ্যে আদালতে রিপোর্ট জমা না দেওয়া হলে মুখ্যসচিবকে সশরীরে এজলাসে হাজিরার হুঁশিয়ারিও দেয় কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ৷ নিয়োগ মামলায় এর আগে সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টে বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে দ্রুত শুনানির প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিল৷ এর আগে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় সিবিআইয়ের তদন্তের গতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন একাধিক বিচারপতি৷ এ ব্যাপারে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানিয়েছিলেন, ‘চার্জ গঠনের ক্ষেত্রে অনুমতি চেয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে চিঠি দিলেও তার উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি’৷ এ ব্যাপারেই রাজ্যের জবাব চেযেছিলেন বিচারপতি৷ উল্লেখ্য, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সরকারি পদে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনে চার্জশিট ইতিমধ্যেই জমা করেছে সিবিআই৷ কিন্ত্ত রাজ্য অনুমোদন না দিলে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ৷ কেন রাজ্য সরকার এত দিন ধরে ওই অনুমোদন প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে রেখেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কলকাতা হাইকোর্ট৷ আগামী মঙ্গলবার রাজ্যের মুখ্যসচিব কে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়েছে৷ জমা না দিলে তাঁকে সশরীর হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ৷