ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষিত হয়ে গিয়েছে৷ দেশজুড়ে চালু হয়ে গিয়েছে আদর্শ আচরণবিধি৷ একই সঙ্গে রাজ্যগুলির পুলিশ-প্রশাসন চলে যায় কমিশনের অধীনে৷ এবার নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখেছেন দেশের ৮৭ জন অবসরপ্রাপ্ত আমলা৷ তাঁদের অভিযোগ, লোকসভা নির্বাচনের পরিবেশ নিরপেক্ষ নয়৷ তাঁদের আর্জি, মোদি সরকারের মেশিনারিও নিয়ন্ত্রণে নিক নির্বাচন কমিশন৷ কারণ হিসাবে তাঁরা বলেছেন, ভোটের প্রচার চলার মধ্যেই কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি বেছে বেছে বিরোধী নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ চলছে গ্রেফতারিও৷ অথচ বিজেপিতে নাম লেখানোর সুবাদে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত নেতারাও অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন৷ এই বৈষম্য কেন হবে? প্রতিহিংসার রাজনীতি চলছে কেন্দ্রের মদতে৷ তাই অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের স্বার্থে অবিলম্বে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ করা উচিত৷
নির্বাচন কমিশনকে পাঠানো এই চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আছেন প্রাক্তন বিদেশসচিব শিবশঙ্কর মেনন, ব্রিটেনে নিযুক্ত প্রাক্তন হাইকমিশনার শিবশঙ্কর মুখোপাধ্যায়, পাঞ্জাব পুলিশের প্রাক্তন ডিজি জুলিও রিবেইরো, প্রাক্তন সহকারী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ভি এল রেড্ডি, প্রাক্তন স্বাস্থ্যসচিব কে সুজাতা রাও, দিল্লির প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট গভর্নর নাজিব জং প্রমুখ৷ তাঁদের বক্তব্য, কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতি সমর্থনে নয়, দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষার প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই এই চিঠি লেখা হয়েছে৷ প্রাক্তন আমলারা সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেফতারির সময় নিয়ে৷ ইডির পদক্ষেপ প্রসঙ্গে তাঁরা লিখেছেন, ভোট ঘোষণা হওয়ার পর একজন প্রবীণ বিরোধী নেতার গ্রেফতারি ইচ্ছাকৃত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত৷ বেছে বেছে বিরোধী নেতানেত্রীদের হেনস্থায় সন্দেহ দানা বাঁধছে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির ভূমিকা নিয়ে৷ কংগ্রেস ও অন্য বিরোধী দলগুলির বিরুদ্ধে ভোটের ঠিক আগেই কেন পুরনো মামলাগুলি খুঁচিয়ে তোলা হচ্ছে? কেনইবা ভোটের মুখে তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের ঠিকানায় হানা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি৷ এসবের ব্যাখ্যা চেয়েছেন প্রাক্তন আমলারা৷ চিঠিতে তাঁদের প্রশ্ন, ‘ন্যায়বিচারের বাইরে কোনও উদ্দেশ্য কাজ করছে না তো? এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে দেখে আমরা বিরক্ত৷ ভোটের প্রক্রিয়ায় বিরোধীদের অবাধে অংশগ্রহণ ঠেকাতে প্রতিহিংসার রাজনীতি চলছে জেনেও কমিশন চুপ করে বসে আছে৷ জনমানসে সন্দেহ ক্রমশ বাড়ছে৷ গত এক মাসের ঘটনাবলি থেকেই এই ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছে৷ মানুষের মনের এই সন্দেহ কাটাতে কমিশনের দৃঢ় পদক্ষেপ প্রয়োজন৷ আর সেই প্রেক্ষিতেই প্রাক্তন আমলাদের পরামর্শ, সংবিধানের ৩২৪ ধারার অধীনে নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে কেন্দ্রীয় সরকারের মেশিনারি, বিশেষত এজেন্সিগুলির কাজকর্ম নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিক কমিশন৷ নিরপেক্ষ ভোটের স্বার্থে এই পদক্ষেপ অবশ্যই প্রয়োজন৷
অন্যদিকে ভোটের এই আবহে দিল্লিতে চলছে অঘোষিত রাষ্ট্রপতি শাসন৷ লোকসভা ভোটপর্বের মধ্যে ‘অপারেশন লোটাস’ চালিয়ে সরকার উল্টে দিতে না পেরে মোদি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক লেফটেন্যান্ট গভর্নরের মাধ্যমে পরোক্ষে দিল্লি শাসন শুরু করে দিয়েছে৷ কেন্দ্রশাসিত রাজ্যগুলিতে রাজ্যপালের স্থলাভিষিক্ত হল উপ-রাজ্যপাল বা লেফটেন্যান্ট গভর্নর৷ সেই পদই পরোক্ষে কেন্দ্রীয় শাসনের প্রধান মাধ্যম৷ লেফটেন্যান্ট গভর্নরের নির্দেশে বহু সরকারি অফিসার এখন আর দফতরে আসছেন না৷ তাঁরা জানিয়েছেন, নির্বাচনী আচরণবিধি চালু হয়েছে৷ তাই এখন সরকারের কোনও কাজ করা যাবে না৷ আসলে মোদি সরকার চাইছে দিল্লির সব পরিষেবা বন্ধ হোক৷ আর সেটাই হচ্ছে৷ ঘুরপথে দিল্লির ক্ষমতা দখলের জন্য মন্ত্রীদের ডেকে পাঠিয়ে লেফটেন্যান্ট গভর্নর নির্দেশ দিচ্ছেন, কোনও নতুন নীতি কিংবা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাঁকে জানাতে হবে৷ অফিসারদের বলে দেওয়া হচ্ছে তাঁরা যেন মন্ত্রীদের কথা না শোনেন৷ নির্বাচনী আচরণবিধি চালু হওয়ার জন্য দিল্লি সরকার কাজ করতে পারবে না, আর এজেন্সিগুলির সক্রিয়তা দেখেও না দেখার ভান করে আছে নির্বাচন কমিশন৷ ইডি, সিবিআই, আয়কর দফতরের মতো নির্বাচন কমিশনকেও হাতিয়ার করেছে মোদি সরকার৷ পায়ের নীচ থেকে মাটি যত সরছে, ক্ষমতা ধরে রাখতে গেরুয়া বাহিনী ততই নির্লজ্জ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে৷