বদলে যাওয়া জঙ্গলমহলে বইছে ভোটের হাওয়া

খায়রুল আনাম

ভৌগোলিক দিক থেকে বীরভূম জেলার পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সীমানা ১৭৫ কিলোমিটার বিস্তৃত৷ যার পুরোটাই বীরভূম লোকসভার অধীনে রয়েছে৷ যা জেলার জঙ্গলমহল এলাকা হিসেবে চিহ্নিত৷ বীরভূম, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম ও ছোটনাগপুর মালভূমির বন ও পর্বতময় অংশটির নাম-ই জঙ্গলমহল৷ অষ্টাদশ শতাব্দীতে এই অঞ্চল ব্রিটিশ শাসনাধীনে আসার পর থেকেই এটি জঙ্গলমহল এলাকা হিসেবে পরিচিত৷ এক সময় জঙ্গল তরাই নামে পরিচিত ছিলো৷ স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এই জঙ্গলমহল এলাকার তেমন কোনও উন্নয়ন হয়নি৷ এমন কী, রাজ্যে তিন দশকের বেশি সময় ধরে ‘পরিবর্তনকামী’ বাম সরকার থাকা সত্বেও এই জঙ্গলমহল এলাকায় উন্নয়নের ছিটেফোঁটা পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে৷ চলাচলের রাস্তাঘাট, পানীয় জল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য পরিষেবার দিকে তেমন কোনও দৃষ্টিই দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে৷ দু’একটি ক্ষেত্রে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হলেও, পরবর্তীতে সে দিকে আর দৃষ্টি না পরার কারণে সে সবই বিবর্ণ হয়ে গিয়েছে৷

রাজ্যে রাজনৈতিক পালা বদলের পর থেকেই জঙ্গলমহলের উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ হাতে নিয়ে তাকে বাস্তবায়িত করতে জঙ্গলমহল উন্নয়ন পর্ষদ গঠন করে সমস্ত ধরনের আর্থিক ও পরিকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া শুরু হয়৷ গড়ে তোলা হয় মানুষের চাহিদা পূরণের জন্য রাস্তাঘাট, পানীয় জল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদু্যৎ সরবরাহ ব্যবস্থা-সহ অন্যান্য পরিকাঠামোগত ব্যবস্থা৷


প্রতিযোগিতামূলক উৎসব-অনুষ্ঠানে মধ্যে দিয়ে জঙ্গলমহলের তরুণ প্রজন্মকে সামনে আনার উদ্যোগও নেওয়া হয়৷ এই জঙ্গলমহলে বসবাসকারী গরিষ্ঠ সংখ্যক আদিবাসী পুরুষ ও মহিলাদের জন্যও নেওয়া হয় বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প-পরিকল্পনা৷ জঙ্গলমহলের প্রাকৃতিক সম্পদ শালপাতাকে ব্যবহার করে বিভিন্ন সামগ্রী উৎপাদন করে তা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে আদিবাসী সমাজের মানুষকে আর্থিকভাবে লাভবান করার কাজও শুরু হয়৷ জঙ্গলমহলের বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে বার বার হাজির হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানকার মানুষদের প্রেরণা ও

উৎ সাহ দিয়ে চলেছেন৷ বীরভূম জেলার জঙ্গলমহলের অন্তর্ভুক্ত রাজনগর ব্লকের রাজনগর, ভবানীপুর, গাংমুরি-জয়পুর-সহ যে সব এলাকাগুলি রয়েছে, সেই এলাকাগুলি বীরভূম লোকসভার অন্তর্ভুক্ত৷ আদিবাসী অধু্যষিত এই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করতে এখানকার ভবানীপুর-হিরাকুনি মোড় থেকে আলিগড় পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের বেশি নতুন রাস্তা তৈরি করতে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে৷ আলিগড় থেকে চন্দ্রপুর পর্যন্ত আরও একটি রাস্তা সংস্কার করে তা উন্নতমানের করে দেওয়া হয়েছে৷ তৈরি করা হয়েছে রাজনগর থেকে খয়রাশোল যাওয়ার রাস্তা৷ বড় রাস্তাগুলি ছাড়াও গ্রামাঞ্চলের ভিতরেও তৈরি হয়েছে বহু ঢালাই রাস্তা৷ গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের ফার্ম ও ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠান৷ তবে, এখানকার মানুষের আক্ষেপ রয়েছে যে, আলিগড় থেকে সিরিসা যাওয়ার রাস্তায় সিদ্ধেশ্বরী নদীর উপরে একটি সেতু তৈরি হলেও সেতুর উপরে ওঠার জন্য দু’পাশে কোনও রাস্তা তৈরি না হওয়ার কারণে সেতুটি প্রায় অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে৷ এই এলাকার তিনবারের সাংসদ শতাব্দী রায়ের কাছে এনিয়ে আবেদনও জানানো হয়েছে৷ চতুর্থ বারের জন্য শতাব্দী রায় লোকসভা ভোটে প্রার্থীও হয়েছেন৷ তাই জঙ্গলমহলেও বইছে ভোটের হাওয়া৷ জঙ্গলমহলের মানুষ তাই আশা করছেন, ভোট মিটলে এই সমস্যাটিও মিটে যাবে এবং এখানকার মানুষ উন্নত পরিষেবার পথে হাঁটতে পারবেন৷