বিজেপি শিবির টালমাটাল, বর্ধমান পূর্ব আসনে এবার দলের অন্দরেই প্রকাশ্যে প্রার্থী বদলের ডাক

আমিনুর রহমান, বর্ধমান, ১৩ এপ্রিল– একদিকে বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীকে নিয়ে প্রচারের জোয়ার৷ অন্যদিকে কিন্ত্ত তাদের প্রধান বিরোধী বিজেপি শিবিরে ভাঁটার টান৷ তার অন্যতম কারণ বিজেপি শিবিরের মধ্যে প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নামতে দলেই দ্বন্দ্ব৷ দলীয় সূত্রে ওই খবর আসার পর রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে সরগোল৷ এরই মধ্যে পূর্বস্থলী এলাকার দুই বিজেপি নেতা সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে প্রকাশ্যে প্রার্থী অসীম সরকারের বদলে অন্য কোন নেতাকে মনোনয়ন দেবার দাবিতে সোচ্চার হলেন৷ তবে জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ওই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামা হয়েছে৷ একাধিক বৈঠক করে ‘বিদ্রোহী’ নেতা কর্মীদের নিয়ে প্রচারে ঝড় তোলার চেষ্টা চলছে৷ আর এই অবস্থায় সেটাকেই হাতিয়ার করে বিরোধী তৃণমূল কংগ্রেস ঝাঁপিয়ে পডে়ছে লড়াইয়ের ময়দানে৷
বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন অসীম সরকার৷ তিনি অবশ্য বিজেপির একজন বিধায়ক৷ টিকিট পাবার পরই ভোটের ময়দানে নেমে পডে়ছেন৷ কিন্ত্ত যত দিন যাচ্ছে ততই তার হয়ে কোথাও যেন বিজেপি কর্মী সমর্থকদের অনীহা৷ দলের ভালো সংগঠন রয়েছে কালনা মহকুমার পূর্বস্থলীতে৷ কিন্ত্ত সেখানকার নেতা কর্মীদের কাছে প্রার্থীর গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ প্রশ্ন উঠেছে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও৷ সূত্রের খবর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে অস্বস্তিতে উচ্চ নেতৃত্ব৷ ভোটের দিনক্ষন ঘোষনার আগেই ওই এলাকায় বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রায় প্রকাশ্যে চলে আসে৷ এবার প্রার্থীকে নিয়ে কার্যত দু’পক্ষের শক্তি প্রদর্শন চলছে৷ একপক্ষের মতে যারা সারা বছরই সংগঠনের কাজকর্মে থাকেন তাদের মধ্যে একজন শিক্ষিত কোন নেতা নেত্রীকে প্রার্থী করার দাবি ছিল৷ সেটা না মেনে অন্য জায়গার নেতাকে দল টিকিট দেওয়াতে বিতর্ক আছেই৷ কিন্ত্ত সে সব ধামা চাপা দিয়ে প্রচার শুরু হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে দলের অন্দরেই ক্ষোভ৷

দলের টিকিট পেয়েই পূর্ব আসনে তডি়ঘডি় প্রচারে নামেন বিজেপি প্রার্থী অসীম সরকার৷ কীর্তন গেয়ে সব এলাকায় প্রচার জমানোর চেষ্টা করেন৷ কিন্ত্ত শুরু থেকেই গুটি কয়েক কর্মী সমর্থকদের ছাড়া বড়ো একটা সমাবেশ দেখা যায়নি৷ যে কথা কার্যত স্বীকার করেছেন স্থানীয় এক নেতা৷ বিশেষ করে বিজেপির পুরনো দিনের কর্মীরা দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে গা ঘামাতে রাজি হননি৷ দলে তাদের ‘একঘরে’ করে রাখা হয়েছে হয়েছে বলে অভিযোগ৷ ফলে দেওয়াল লিখন থেকে শুরু করে প্রচার, মিছিল সবেতেই বিজেপি অনেকটা পিছিয়ে বলে তার দায়দায়িত্ব নেতৃত্বের ঘাডে়ই চাপিয়েছেন কর্মীরা৷ এরই মধ্যে দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে তোপ দেগে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন পূর্বস্থলী এলাকার দুই নেতা৷ তাদের মধ্যে একজন হলেন শহরের প্রাক্তন সভাপতি উদয় ঘোষ৷ অন্যজন হলেন ২০১৪ সালে দলের হয়ে ভোটের ময়দানে লড়াই করা সন্তোষ রায়৷ তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এই কেন্দ্রে ভূমিপুত্রকে প্রার্থী করতে হবে৷ যা নিয়ে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা৷ বলা হলো অসীম সরকার এর বদলে দলের হয়ে স্থানীয়ভাবে যারা দীর্ঘদিন লড়াই করছেন তাদের মধ্যে একজন ভূমিপুত্রকে প্রার্থী করা হোক৷ এটাও বলা হয়েছে আগামী ১৯ এপ্রিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকা হবে৷ তারপরও যদি বদল না হয় তাহলে সরব হবেন তারা৷ এই ধরনের ঘটনা নিয়ে আবারো প্রকাশ্যে বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল সামনে এলো বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা তুঙ্গে৷ অন্যদিকে দেরিতে হলেও টালমাটাল অবস্থা ফেরাতে ময়দানে নেমেছেন দলের রাজপথ নেতাদের একাংশ৷ সূত্রের খবর অবস্থা সামাল দিতে দলের পক্ষ থেকে দলের কর্মসূচিতে দুরে থাকা নেতা নেত্রীদের তালিকা তৈরির কাজ প্রায় শেষ৷ এবার জনে জনে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সক্রিয় করার কাজ চলছে বলে দাবি৷

প্রচারে এবার কিছুটা হলেও সকলকে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন খোদ বিজেপি প্রার্থী অসীম সরকার৷ তার কথা অনুযায়ী মান অভিমান থাকতেই পারে৷ সেটা একটা পরিবারেও থাকে৷ সে সব কাটিয়ে উঠা গেছে৷ দলের যোগ্যদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে প্রচারে নামা হবে৷ তবে এই সব বিতর্কে জল ঢেলে প্রায় একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে মন্তব্য করেন বিজেপির সাংগাঠনিক জেলা সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায়৷ তার বক্তব্য কোন দ্বন্দ্ব নেই৷ সকলেই একযোগে প্রচারে নেমেছেন৷ এদিন তিনি সংবাদ মাধ্যমের কাছে বেশ কয়েকটি প্রচার কর্মসূচির কথাও তুলে ধরেন৷