অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরিতে মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআইয়ে স্থগিতাদেশ সুপ্রিম কোর্টের

২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলার ফের শুনানি সোমে

নিজস্ব প্রতিনিধি— সোমবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ওঠে এসএসসি সংক্রান্ত মামলা৷ এদিন এসএসসির ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ প্রধান বিচারপতি৷ তবে চাকরি বাতিল মামলায় অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি নিয়ে সিবিআই তদন্তে স্থগিতাদেশ সুপ্রিম কোর্টের৷ এদিন শীর্ষ আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় এসএসসি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও রাজ্যকে৷ সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তোলে, ‘কীভাবে এবং কেন তৈরি করা হল অতিরিক্ত এই পদ?’ পাশাপাশি পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূডে়র পর্যবেক্ষণ, ‘নষ্ট করা হয়েছিল ওএমআর শিট৷ নিয়োগ করা হয়েছে প্যানেলের বাইরে থেকে৷’ মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী সোমবার৷ অর্থাৎ চাকরিহারাদের ভবিষ্যৎ ফের অনিশ্চয়তার বেড়াজালে৷ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কলকাতা হাইকোর্টে দাবি করে, ‘সুপার নিউমেরারি পোস্ট তৈরি করা হয়েছিল৷ অর্থাৎ শূন্যপদ না থাকা সত্ত্বেও অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করে নিয়োগ করা হয়েছিল৷’ অভিযোগ উঠেছিল ওএমআর শিট নষ্টের৷ পরবর্তীতে ২৬ হাজার চাকরি বাতিল করে হাইকোর্ট৷ সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও এসএসসি৷ সোমবার সেই মামলার শুনানিতেই সুপার নিউমেরারি পোস্ট তৈরি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে পডে় এসএসসি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও রাজ্য৷ কেন বা কীভাবে এই পোস্ট তৈরি হল তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়৷ এই অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশনের বেঞ্চের নির্দেশে যে সিবিআই তদন্ত চলছিল, তাতে আপাতত স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়৷ কিন্ত্ত কেন এই স্থগিতাদেশ? তার কারণ হিসেবে জানা গিয়েছে, এদিন রাজ্যের আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করেন, ‘লোকসভা নির্বাচন চলছে৷ এখন সিবিআই তদন্ত করলে তো পুরো মন্ত্রিসভা জেলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে৷ এরফলে পরিস্থিতির হাতের বাইরে চলে যেতে পারে৷’ সেই কারণে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ স্থগিত রাখার আর্জি জানানো হয়৷ এর পরই সবদিক বিবেচনা করে সিবিআই তদন্তের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট৷ এদিন আদালতের তরফে জানানো হয়েছে, ‘কার নির্দেশে এই অতিরিক্ত পদ তৈরি হল, কে কে সুবিধাভোগী তা খতিয়ে দেখা হবে’৷ সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এসএসসির করা মামলায় কমিশনকে শীর্ষ আদালতের একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়৷ জানা গিয়েছে, যোগ্য-অযোগ্যদের আলাদা করতে তারা প্রস্তুত বলে সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ তবে শীর্ষ আদালতের প্রশ্ন, ‘ওএমআর শিট তো ধ্বংস করা হয়েছে৷ যোগ্য-অযোগ্য আলাদা করবেন কী করে?’ গত সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে বাতিল হয়েছে ২০১৬-র এসএসসি প্যানেল৷ চাকরি হারিয়েছেন ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষক ও অশিক্ষককর্মী৷ সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছে রাজ্য সরকার, স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ৷ এদিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূডে়র বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি ছিল৷ সেখানেই রাজ্যের কাছে শীর্ষ আদালতের প্রশ্ন, ‘চাকরির পরীক্ষার ওএমআর শিট কতদিনের জন্য সংরক্ষণ করে রাখা হয়?’ জবাবে রাজ্যের তরফে মুকুল রোহতাগি জানান, ১ থেকে ২ বছর সংরক্ষণ করা হয়৷ এর পরই প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ওএমআর শিট তো ধ্বংস করে দিয়েছেন তাহলে কীভাবে যোগ্য-অযোগ্যদের পৃথক করবেন? জবাবে রাজ্যের আইনজীবী জানান, ‘বিকল্প পথ রয়েছে৷’

তবে সে জবাবে আদালত যে মোটেও সন্ত্তষ্ট হয়নি তা বিচারপতির মন্তব্যেই স্পষ্ট৷ মামলাকারীর কাছে আদালত জানতে চায়, ‘২৫ হাজার বিরাট অঙ্কের সংখ্যা৷ যোগ্য-অযোগ্য আলাদা করবেন কী করে? এ বিষয়ে আমাদের কাছে সমস্ত তথ্য স্পষ্ট হতে হবে’৷ চাকরি বাতিল মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায় নিয়ে শীর্ষ আদালতের মন্তব্য, ‘আদালতের অন্য উপায় না থাকলে এধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়৷ যদি যোগ্য-অযোগ্যদের আলাদা করার ব্যবস্থা থাকে তবে তা হাইকোর্টে জানানো হল না কেন?’ এদিন আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘টেন্ডার ছাড়াই নাইসাকে বরাত দেওয়া হয়েছিল৷ মিরর ইমেজ ছাড়াই নষ্ট করা হয়েছিল ওএমআর শিট’৷ ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করলে রাজ্যকে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ‘এই দুর্নীতি বিশাল বড়৷ এই দুর্নীতির সুবিধা কারা পেয়েছে? সেটা জানা দরকার’৷ এদিকে চাকরিহারা আন্দোলককারীদের দাবি, ‘কারা অযোগ্য তা নিশ্চিত করুক সুপ্রিম কোর্ট, সিবিআই, ইডি’৷ অযোগ্যদের ‘দুর্নীতি’র দায় তাঁরা নেবেন না৷ সেই দাবিতে কলকাতার শহিদ মিনারে চত্বর আন্দোলন করছেন চাকরিহারারা৷ আগামী সোমবার ৬ মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে৷