শুভেন্দুর ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে তৃণমূলকে পাল্টা সুকান্তর

‘তৃণমূলে থাকাকালীন সেই টাকা বৈধ হলে এখনও বৈধ’

নিজস্ব প্রতিনিধি – সন্দেশখালি ঘটনায় এবার অকপটে রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা বালুরঘাটের বিজেপি প্রার্থী সুকান্ত মজুমদার৷ সন্দেশখালির ঘটনা মিথ্যে নয়, বরং পুলিশকে ব্যবহার করে এবার ভোট বৈতরণী পেরোনোর চেষ্টা করছে তৃণমূলের, দাবি সুকান্ত মজুমদারের৷ বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে সুকান্ত খোলসা করেন এ বিষয়টি৷ এদিন সুকান্তর সাথে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য বিজেপির মিডিয়া ইনচার্জ তুষারকান্তি ঘোষ৷ এ প্রসঙ্গে সুকান্ত বলেন, “বুধবার থেকে যে ভিডিও সামনে আসতে শুরু করেছে, তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা এবং তাঁর স্বামী দুজনেই অকপটে স্বীকার করেছেন যে ধর্ষণের মতো ঘটনা সন্দেশখালিতে ঘটেছে৷ শিবু হাজরা, উত্তম সর্দার, শেখ শাহজাহান তাঁরা এ ধরণের কাজ করেছেন৷ এখানেই শেষ নয়, পঞ্চায়েত সদস্যাকেও এমন কুপ্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল৷ আর সেটা কে করেছে? তৃণমূলেরই এক নেতা বিষ্ণুপদ প্রামানিক থেকে শুরু করে অন্য যাঁরা আছেন তাঁরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন৷”

সম্প্রতি এক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে সন্দেশখালির এক মহিলাকেই বলতে শোনা যাচ্ছে যে তাঁকে অপহরণের চেষ্টা করেছিল তৃণমূলের স্থানীয় নেতা৷ অভিযোগের তীর তৃণমূল নেতা দিলীপ মল্লিকের দিকে৷ এ প্রসঙ্গেও সরব সুকান্ত৷ তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি বলেন, “বুধবার রাতেও এক মহিলাকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছিল৷ বৃহস্পতিবার যখন বিজেপির প্রতিনিধিদল মানুষকে আইনি সহায়তা দিতে সন্দেশখালি পৌঁছায়, তখন মানুষ তাঁদের বলেন এ বিষয়ে৷ দিলীপ মল্লিক নামক তৃণমূল নেতা এক মহিলাকে মুখ বেঁধে অপহরণের চেষ্টা করেন৷ সেই মহিলা যদি নিজেকে ছাড়াতে না পারতেন তাহলে তাঁর সাথেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটতে পারতো৷ তৃণমূল কংগ্রেস কে বলবো, স্টিং-স্টিং খেলা বন্ধ করুন! ফেক ভিডিও চালানো বন্ধ করুন! এই ঘটনা যে ঘটেছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন আপনার দলের পঞ্চায়েত সদস্যা৷ ” এ প্রসঙ্গেই বঙ্গীয় মহিলাদের উপদেশ দেন সুকান্ত৷ তিনি বলেন, “বাংলার মহিলাদের বলবো, আপনারা তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন৷ নয়তো আপনাদের সাথেও ছোটখাটো সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে এই ধরণের ঘৃণ্য কাজ করতে পারে৷”


সম্প্রতি দেখা গেছে একের পর এক মহিলা অর্থাৎ অভিযোগকারিণী বেড়িয়ে এসে বলেছেন, “তাঁদের ভুল বোঝানো হয়েছে৷ ” এ প্রসঙ্গেও জবাব দিয়েছেন সুকান্ত৷ জল্পনায় ইতি টেনে তিনি বলেন, পুলিশকে ব্যবহার করার কথা৷ ‘কুখ্যাত সাগর ঘোষ হত্যাকাণ্ড’ এর প্রসঙ্গ টেনে সুকান্ত বলেন, “তৃণমূল পুলিশকে ব্যবহার করেই সন্দেশখালির ঘটনা ঘোরাতে চাইছে৷ দিলীপ মল্লিকের মতো নেতারা মহিলাদের মুখ বন্ধ করতে চাইছেন৷ তাহলে কি দিলীপ মল্লিক, শেখ শাহজাহান এঁদের এই কার্যকলাপ ভুঁয়ো?” এই সূত্রে তিনি বিঁধেছেন শাসকদলকেও৷ সুকান্ত বলেন, “তৃণমূল গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছিলো, শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করিয়েছে৷ কেন গ্রেফতার করা হয়েছে? ১৬৪ এর ভিত্তিতে তো? এই ১৬৪ তো ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হয়েছে৷ সুতরাং তৃণমূল যেনতেন প্রকারে নির্বাচনী বৈতরণী পাড় করার জন্যই এই ধরণের ফেক ভিডিও দেখাচ্ছে৷ ” পাশাপাশি ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ সুকান্তর৷ সেই উদ্দেশ্যেই তিনি বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে, যেন ফলাফলের পরও অন্তত একমাস কেন্দ্রীয় বাহিনী বাংলায় থাকে৷ বিক্ষিপ্ত হিংসার ছবি আবার দেখা যেতেই পারে নির্বাচনের পরে, তাই আগে থেকে সতর্ক থাকা৷ তাছাড়াও তৃণমূলের অসংখ্য নিচু তলার নেতা, কর্মী এই ভোট পরবর্তী হিংসা ছড়ানোর অপরাধে জেলে৷ সুতরাং যাঁদের ইচ্ছে এই ধরণের কাজ করার তাঁরা করবেন৷”

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধাচারণ করতে কখনই পিছপা দেয়না তৃণমূল৷ শুভেন্দুকে টাকা নিতে দেখা গেছে প্রকাশ্য ক্যামেরায় কিন্ত্ত তিনি বিজেপির ‘ওয়াশিং মেশিন’ এ যাওয়া মাত্রই তাঁর ‘সাতখুন মাফ’, মন্তব্য তৃণমূলের৷ এ প্রসঙ্গেই পাল্টা জবাব সুকান্তর৷ তিনি বলেন, “কখন টাকা নিয়েছিলেন? তৃণমূলে থাকাকালীন৷ তখন সেই টাকা বৈধ হলে এখনও বৈধ৷ তাহলে ওয়াশিং মেশিনটা কে?” সিএএ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার্তা সুকান্তর৷ তিনি বলেন, “সিএএ নিয়ে রাজ্যবাসীকে ভুল বোঝানো হচ্ছে৷ প্রথম দফায় মোট ৩০০ জনকে নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে৷ যাঁর মধ্যে ১৪ জনকে ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে৷ তাঁদের দেশকে তাড়ানো হয়নি৷ নির্বাচনের পর বাংলায় ক্যাম্প করে মানুষকে এ বিষয়ে বোঝানো হবে৷ নাগরিকত্ব দেওয়া হবেই৷”