অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব মন্ত্রণালয়ে ছাত্রদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে

সব মন্ত্রণালয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের পাশাপাশি কাজের ক্ষেত্রে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদেরও সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। কীভাবে শিক্ষার্থীদের এই কাজে সম্পৃক্ত করা হবে, সেই কাঠামো কী হবে, সেটি পরে ঠিক করা হবে। এ বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হল, আন্দোলনকারী ছাত্রদের ‘সহকারী উপদেষ্টা’ বা এরকম কোনও পদায়ন করে ছাত্রদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে তদারকির সুযোগ করে দেওয়া হবে।

আজ শুক্রবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক  অনুষ্ঠিত হয়। পরে সাংবাদিকদের এই কথা জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান  এবং ডাক, টেলি যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সব মন্ত্রণালয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে  আন্দোলনকারী ছাত্র প্রতিনিধিরা সম্পৃক্ত থাকবেন। এখন কীভাবে তাঁরা সম্পৃক্ত থাকবেন, কাঠামো কী হবে, সেটা পরবর্তী  সময়ে চিন্তা করা হবে।


মন্ত্রণালয়গুলোতে কীভাবে ছাত্ররা সম্পৃক্ত থাকবেন, সে বিষয়ে আরেকটু বিস্তারিত জানতে চাইলে নাহিদ ইসলাম বলেন, এর প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে একটি সিদ্ধান্ত আগেও ছিল; সেটি হল ‘সহকারী উপদেষ্টা’ বা এরকমভাবে কোনও পদায়ন করে মন্ত্রণালয়ে ছাত্রদের তদারকির সুযোগ থাকা; সেই ব্যবস্থাটি থাকবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, উপদেষ্টা পরিষদে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের  মনোনীত করা হয়েছে। একই সঙ্গে পর্যবেক্ষণ ও তদারকির জন্য এবং ছাত্রদের কণ্ঠ থাকার জন্য দুজন ছাত্র প্রতিনিধিও এই  উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছে। এর পাশাপাশি সামনের দিনে ছাত্র প্রতিনিধিরা অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে সহকারী হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাবেন।

নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টাসহ এ সরকারে সদস্য সংখ্যা ১৭ জন। গতকাল রাত ৯টার পর বঙ্গভবনের দরবার হলে অন্তবর্তীকালীন  সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও ১৩ জন উপদেষ্টাকে (তিনজন ঢাকার বাইরে থাকায় গতকাল শপথ নিতে পারেননি) শপথবাক্য  পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অবসান চেয়ে ড. ইউনূসকে খোলা চিঠি
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি খোলা চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য  পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। চিঠিতে বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এর মধ্যে ৫২টি জেলায়  সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সারা দেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে গভীর শঙ্কা, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে।  অবিলম্বে এ অবস্থার অবসান চান তাঁরা।

‘সংখ্যালঘুদের স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি  খোলা চিঠি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠন দুটি। আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ সংবাদ সম্মেলনে  সংগঠন দুটি এই খোলা চিঠি তুলে ধরে।

সংবাদ সম্মেলনে খোলা চিঠি পাঠ করেন বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও।  তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার এই আত্মদান, ত্যাগ ও সংগ্রাম বাংলাদেশে জাগরণের যে চেতনা প্রজ্বলিত করেছে, তা যেন কখনও  কেউ নিভিয়ে দিতে না পারে, মুক্তিযুদ্ধ যেন পথ না হারায়। এই বিজয় যখন চূড়ান্ত লক্ষ্যের অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছে, অত্যন্ত দুঃখ  ও বেদনার সঙ্গে লক্ষ করছি যে একটি বিশেষ গোষ্ঠী সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নির্বিচার তুলনাহীন সহিংসতা ছড়িয়ে এই অর্জনে  কালিমা লেপন করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।’

প্রাপ্ত সাংগঠনিক বিবরণ ও গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে অন্তত ৫২টি জেলায় এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় হাজার  হাজার হিন্দু পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে বলেও খোলা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়, ‘অনেক মন্দির  হামলার পর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক নারী নিগৃহীত হয়েছেন। কয়েকটি স্থানে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। আক্রান্ত হয়েছে  অন্য সংখ্যালঘুরাও। মূলত ৫ আগস্ট থেকে এই সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। সারা দেশের  সংখ্যালঘুদের মধ্যে গভীর শঙ্কা, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশকে প্রশ্ন বিদ্ধ করছে। আমরা অবিলম্বে এ অবস্থার অবসান চাই।’

রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান, সংগ্রামী ছাত্র নেতৃত্ব ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে এ অবস্থা জানানোর চেষ্টা করা হয়েছে  উল্লেখ করে খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘তাঁরাও তাঁদের বক্তব্য-ভাষণে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি তিন দিন ধরে গভীর শূন্যতার মধ্যে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। আর্তনাদ প্রলম্বিত  হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের সূচনালগ্নেই আপনার কাছে অত্যন্ত বিনীতভাবে আমাদের উদ্বেগ ও বেদনার  জায়গাটি তুলে ধরছি এই প্রত্যাশায় যে আপনি ও আপনার সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন, যাতে ছাত্র-জনতার বিজয় কলুষিত না হয় এবং ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এই রক্তক্ষরণের অবসান  ঘটে।’

এই সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর। সাংবাদিকদের বিভিন্ন  প্রশ্নের জবাব দেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ। এক প্রশ্নের জবাবে কাজল  দেবনাথ বলেন, দেশে কোনও ঘটনা ঘটলেই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

৫ আগস্ট থেকে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটলেও তা বন্ধে পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য  পরিষদের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মণীন্দ্র কুমার নাথ। সংবাদ  সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য রঞ্জন কর্মকার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক, সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য জে এল ভৌমিক প্রমুখ।