নয়া ধর্ষণবিরোধী কঠোর বিল রাজ্যের

রাজ্যবাসী সমস্ত নারীদের ‘অপরাজিতা’ হয়ে ওঠার আশ্বাস দিয়ে নয়া ধর্ষণ বিরোধী বিল নিয়ে আসতে চলেছে রাজ্য আইনসভা! সোমবার বিধানসভায় শুরু হওয়া এক বিশেষ দু’দিনব্যাপী অধিবেশনে এই বিলটি সম্পর্কে ঘোষণা করা হয়। ‘অপরাজিতা মহিলা ও শিশু (পশ্চিমবঙ্গ ফৌজদারি আইন সংশোধনী) বিল, ২০২৪’ নামের এই বিলটি মঙ্গলবার বিধানসভায় আনুষ্ঠানিকভাবে পেশ করতে চলেছেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। এইদিনই এই বিলটির সমস্ত ধারা-উপধারা আলোচনা করে তা পাশ করানো হবে বিধানসভায়।

সম্প্রতি আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ঘটে যাওয়া এক স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণরতা ডাক্তারকে নির্মমভাবে খুন ও ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল রাজ্য তথা দেশ। এই প্রেক্ষিতেই এহেন বিল আনার সিদ্ধান্ত রাজ্যের।

কী বলা হচ্ছে এই বিলে?


সাতটা জামিন অযোগ্য এবং দুটো জামিনযোগ্য অপরাধকে চিহ্নিত করা হয়েছে এই বিলে। এবং সমস্তরকম অপরাধের জন্য কঠোরতম শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

জামিন অযোগ্য সেই অপরাধের মধ্যে পড়ছে – ধর্ষণ, গণধর্ষণ, অ্যাসিড হামলা, একই ধরনের নির্যাতনমূলক অপরাধের পুনরাবৃত্তি, অনূর্ধ ১৬ এবং ১২ বছর বয়স্ক নাবালিকাকে ধর্ষণ এবং অনূর্ধ ১৮ বছরের কম নাবালিকাকে গণধর্ষণ। এই জামিনযোগ্য অপরাধের মধ্যে পড়ছে নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ এবং বিনা অনুমতিতে মামলার নথি প্রকাশ।

শাস্তির ব্যবস্থা যথাযথ কড়া। ধর্ষণ করে খুন করলে অথবা নির্যাতিতা কোমায় চলে গেলে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড এবং জরিমানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধর্ষণ, গণধর্ষণ, অ্যাসিড হামলা, একই অপরাধের পুনরাবৃত্তির জন্য শাস্তি আজীবন কারাবাস এবং জরিমানা। অনূর্ধ ১৬ এবং অনূর্ধ ১২ নাবালিকা ধর্ষিতা হলে অপরাধীর সাজা ন্যূনতম ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং জরিমানা – সর্বোচ্চ শাস্তি আজীবন কারাবাস। অনূর্ধ ১৮ নাবালিকার গণধর্ষণ হলে যাবজ্জীবন কারাবাস এবং জরিমানা।

নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ এবং বিনা অনুমতিতে মামলার নথি প্রকাশের অপরাধে ৩ থেকে ৫ বছরের কারাবাস এবং জরিমানার বিধান ঘোষণা করা হয়েছে এই বিলে।
মামলার শুনানি করতে হবে ২১ দিনের মধ্যে। তাতেও শুনানি না হলে অতিরিক্ত ১৫ দিন দেওয়া হবে। যার মধ্যে বাধ্যতামূলকভাবে ফয়সালা করতেই হবে। এই বিল অনুযায়ী, সমস্ত ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলার শুনানি হবে সেশন কোর্টে। যার তত্ত্বাবধানে থাকবেন স্বয়ং মহামান্য হাইকোর্ট।

ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলার তদন্তের জন্য মহিলা পুলিশ আধিকারিকের নেতৃত্বে তৈরি হবে ‘অপরাজিতা’ স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। তদন্ত কোনওভাবে বিলম্বিত বা প্রভাবিত হলে তদন্তকারী অফিসারকে শাস্তি দেওয়ার বিধানও রয়েছে এই বিলে।

গত বুধবার তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “আমি স্পিকারকে অনুরোধ করব, বিশেষ অধিবেশন ডাকতে। দশ দিনের মধ্যে ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য বিল আনব আমরা। আর বিলটা রাজ্যপালকে পাঠাব। আমরা জানি, তিনি কিছু করবেন না। কিন্তু তাঁকে বিলে অনুমতি দিতেই হবে। অনুমতি না দিলে মহিলারা রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসবেন। এই বিল তিনি রাষ্ট্রপতির পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠাতে পারবেন না।”

প্রসঙ্গত, আরজি কর কাণ্ড নিয়ে তোলপাড় শুরু হওয়ার পর থেকেই ধর্ষণ বিরোধী আইন প্রণয়নের জন্য সরব হয়েছে রাজ্য সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এই মর্মে দু’বার চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘাটাল লোকসভার সাংসদ দীপক অধিকারী (দেব), ডায়মন্ডহারবার লোকসভার সাংসদ এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ধর্ষণবিরোধী আইন আনার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। কেন্দ্রের কোনও হেলদোল না থাকায় রাজ্য নিজের হাতে তুলে নিয়েছে এই গুরুদায়িত্ব। এহেন পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের এই কঠোর আইন প্রণয়ন আদৌ ধর্ষণের মানসিকতাকে কতখানি পাল্টাতে পারে, সেদিকেই তাকিয়ে সবাই।