প্রশান্ত দাস
সন্দেশখালি কাণ্ড নিয়ে প্রকাশ্যে আসা একটি ভিডিও ঘিরে তৈরী হয়েছে জল্পনা৷ সন্দেশখালির ঘটনা বিজেপির পূর্ব পরিকল্পিত, শুভেন্দুর দৌলতেই সাজানো হয়েছিল এই চক্রান্তের ঘঁুটি, এমনটাই বলছেন ওই ভিডিও-তে দৃষ্টিগোচর হওয়া ব্যক্তি৷ যিনি হলেন, সন্দেশখালি ২ ব্লকের বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়াল৷ এবার এই প্রসঙ্গেই তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়৷ প্রথমেই তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি তো ক্রনোলজিতে বিশ্বাস করে! কিভাবে ক্রনোলজি ধরে এঁরা একের পর এক ঘটনা ঘটিয়েছে সারা দেশের কাছে বাংলাকে বদনাম করার জন্য৷’’ বিজেপির এই নীচ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে নিন্দায় সরব হয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘আজকে যে তথ্য, ভিডিও ফুটেজ জনসমক্ষে এসেছে তা স্বাধীনতার পর সব নির্লজ্জতার ইতিহাস ভেঙে দিয়েছে৷’’ এই নির্লজ্জ ঘটনার পরিকল্পনার জন্য বিজেপি নেতৃত্বদের বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য বলেন অভিষেক৷ সাংবাদিক বৈঠক থেকে গর্জে উঠে তিনি বলেন, ‘‘বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে যদি আপনারা বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা না চান তাহলে ধরে নিতে হবে আপনাদের অঙ্গুলিহেলনেই এই ষড়যন্ত্র সাজানো হয়েছিল৷’’ পাশাপাশি বিজেপির উদ্দেশ্যে অভিষেকের চ্যালেঞ্জ, ‘‘ক্ষমতা থাকলে এই গঙ্গাধর কয়াল কে সাসপেন্ড করুক৷’’ সেই সঙ্গে সিপিএমকেও আক্রমণ করলেন অভিষেক, ‘‘সিপিএমের কেউ জনস্বার্থ মামলা করবে এই ঘটনা নিয়ে?’’
২০০০ টাকার বিনিময়ে বাংলার নারীদের সম্ভ্রম দিল্লির কাছে বিক্রয় করেছে এই গেরুয়াবাহিনী, মন্তব্য অভিষেকের৷ শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারির প্রসঙ্গে তুলে তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের যাকে খুশি তাকে গ্রেফতার করুন৷ কিন্ত্ত বাংলাকে ছোট করছেন কেন?’’ গঙ্গাধরের বক্তব্য টেনেই অভিষেকের আরও সংযোজন, ‘‘বাংলার দশ কোটি মানুষ, তার মধ্যে পঞ্চাশ শতাংশ মহিলা! ২০০০ টাকার বিনিময়ে তাঁদের সম্ভ্রম বিক্রি করে দিয়েছেন দিল্লির কাছে, মানুষ দেখুক আজ৷’’ পাশাপাশি একাধিক প্রশ্নের উত্থাপন করেন তিনি৷ ‘‘আজ কোথায় মহিলা কমিশন? এসটি কমিশন? আর যেই বিচারপতিরা মামলা শুনছিলেন তাঁরা কি বলবেন? বাংলাকে কলুষিত করার পেছনে যেমন বিজেপি দায়ী তেমনি বিচার ব্যবস্থার একাংশও দায়ী৷ আমার বিরুদ্ধে আদালতের অবমাননার মামলা করতে পারে৷ বাংলার সম্মান রক্ষার্থে আমার যা করার আমি করবো৷ সত্যি কথা বলার জন্য যদি ফাঁসি দেয় আমি ফাঁসির মঞ্চে যাবো, জেল দিলে জেলে যাবো’’, বলেন অভিষেক৷ একের পর এক মামলার উল্লেখ করে বিজেপিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন অভিষেক৷ কয়লা থেকে গরু পাচারের মামলা, পুলওয়ামা ঘটনায় বিজেপির দিকে আঙ্গুল তুলে তিনি বলেন, ‘‘হঠাৎ করে ২০২১ এর আগে শুরু হলো কয়লা কেলেঙ্কারি৷ কলিয়ারিগুলো গার্ড করে সিআইএসএফ৷ অনুব্রত মন্ডল গরু পাচারের অভিযোগে এক বছর ধরে জেলে৷ আজ থেকে এক মাস আগে বর্ধমানের কাটোয়ায় উত্তরপ্রদেশ থেকে গরু আসছে ধরা পড়েছে৷ আর সীমান্তের দায়িত্বে কে থাকে? সেই বিএসএফ যে অমিত শাহের অধীনস্ত৷ বাংলায় অনুপ্রবেশ হলে, বর্ডার দিয়ে গরু পাচার হলে বুঝতে হবে বিএসএফ দায়ী৷ তাহলে সবার আগে আপনার (অমিত শাহের) পদত্যাগ করা উচিৎ৷ এভাবেই এঁরা ২০১৯ এর ভোটের আগে পরিকল্পিত ভাবে পুলওয়ামা করিয়েছিলো৷’’
ভিডিও-তে গঙ্গাধরকে বলতে শোনা যাচ্ছে, প্রত্যেক বুথে তিনি মদের খরচের উল্লেখ করেছেন৷ সেই প্রসঙ্গেই বিজেপি বিরুদ্ধে তোপ দাগেন অভিষেক৷ তিনি বলেন, ‘‘ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে বারো বছর গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন৷ তিনি সেসময় গুজরাটে মদ বিক্রি বন্ধ করেছিলেন৷ আর সেই বিজেপি দলের বাংলার ৩৪১ টি মন্ডলের মধ্যে একজন মন্ডল সভাপতি বলছেন, প্রতি বুথে পাঁচ হাজার টাকার মদ লাগবে৷ বাংলায় আশি হাজার বুথ তার মানে বাংলায় নির্বাচনে বিজেপির মদের বাজেট ৪০ কোটি৷’’ শুভেন্দুকে সরাসরি আক্রমণ শানিয়ে অভিষেকের বক্তব্য, ‘‘এখানে গঙ্গাধর কয়াল পরিষ্কার স্বীকার করছেন যে তাঁর নেতা বাংলার সবথেকে বড়ো শত্রু৷ দিল্লির সবথেকে বড়ো ক্রীতদাসত্ব করা তল্পিবাহক৷’’ এই ঘটনায় বিচারব্যবস্থার বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘বিচারব্যবস্থাও রাজ্য পুলিশকে কোনোরকম সুযোগ না দিয়ে মামলাটি হস্তান্তর করে দিলো কেন্দ্রীয় সংস্থার ওপর৷ বিচারব্যবস্থা কেও দেখা উচিৎ ছিল৷’’
বাংলার সম্মানহানির অভিযোগ তুলে অভিষেক বলেন, “নির্বাচনে রাজনৈতিক দল গুলিকে একে ওপরের বিরুদ্ধে বলতে হয়৷ সব ঠিক আছে কিন্ত্ত শালীনতার একটা গন্ডি থাকা উচিৎ! ইচ্ছেকৃত তারা ছয় সাত মাসের আগের ধর্ষণের অভিযোগ লিখিয়েছেন যাতে মেডিকেল টেস্টে ধরা না পড়েন৷ আজ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলকে ছোট করতে গিয়ে ভারতবাসীর কাছে বাংলার দশ কোটি মানুষকে ছোট করা হয়েছে৷” নিশানা করতে ছাড়েননি রাজ্যপালকেও৷ আক্রমণ শানিয়ে অভিষেক বলেন, “দুদিন আগে বাংলার রাজ্যপাল তাঁর এক কর্মীর সাথেই শ্লীলতাহানি করে, বাংলা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন৷ আপনি যদি সৎ থাকেন তাহলে পালানোর কি আছে? তদন্তে সহযোগিতা করুন৷”