আরজি করের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও নৃশংস হত্যার ঘটনায় তোলপাড় গোটা রাজ্য তথা দেশ। বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের আন্দোলনে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্ট পুলিশের তদন্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই-কে এই মামলার তদন্তভার দিতেই পাল্টা সরব হয়েছে রাজ্য সরকার। দ্রুত এই ধর্ষণের ঘটনার সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত দোষীকে শাস্তির দাবি জানিয়েছে শাসকদল। এবিষয়ে মমতা সরকার রাজ্য বিধানসভায় ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইন আনতে চলেছে। আসন্ন অধিবেশনে বিধানসভায় এই সংক্রান্ত বিল পেশ করবে রাজ্য।
সেই বিল নিয়ে রাজভবনের ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে ধন্ধে রয়েছেন অনেকে। এমনকি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বা রাজ্যপালের তরফ থেকে এবিষয়ে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী দেশে ধর্ষণ-বিরোধী কঠোর আইন চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন দুই দুইবার। কেন্দ্র সেই চিঠির জবাবে জানিয়েছে, দেশে আইন রয়েছে, কিন্তু বিচার প্রক্রিয়া এগোনো দরকার।
এরমধ্যে তড়িঘড়ি দিল্লিতে উড়ে গেছেন রাজ্যপাল। মূলত আরজি কর ধর্ষণ কাণ্ড নিয়ে রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং সেই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকার ব্যাখ্যা দিতেই কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাতে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু এরই মধ্যে জল্পনা ছড়িয়েছে বিধানসভায় রাজ্য সরকারের ধর্ষণ বিরোধী আইন পেশ নিয়ে। এই আইন প্রণয়নের প্রস্তাব পেশকে কোন দৃষ্টিতে দেখছে কেন্দ্রের শাসকদল? পাশাপাশি, রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যপাল এ বিষয়ে কোন পক্ষ নেবেন, তা নিয়ে রীতিমতো জলঘোলা হতে শুরু করেছে।
তবে সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে সূক্ষ্ম কৌশল নিতে চলেছে রাজভবন। সেজন্য এখনও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি সিভি আনন্দ বোস। শনিবার এজন্য তিনি দিল্লিতে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়ালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সাংবিধানিক খুঁটিনাটিগুলি খতিয়ে দেখছেন। এই বিলটি নিয়ে বিরোধিতা করলে রাজ্যপালের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে কিনা সেটাও ঝালিয়ে নিচ্ছেন রাজ্যপাল। আইনটি বিধানসভায় পাস হওয়ার পর রাজভবনে এলে রাজ্যপালের কর্তব্য কী হওয়া উচিত, সেবিষয়ে দুই জনের মধ্যে বিস্তর আলোচনা হয় বলে সূত্রের দাবি। বিষয়টি নিয়ে রাজভবনের অবস্থান কী হওয়া উচিত, তাঁর চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন তিনি। এমনটাই ধারণা রাজনৈতিক মহলের।
ফলে এই বিল নিয়ে রাজ্যপাল কোন পথে যাবেন, তা নিয়ে উদগ্রীব রাজ্যের রাজনৈতিক মহল। তিনি কি এই বিলের পক্ষেই মত দেবেন, নাকি এই আইনের কোনও প্রয়োজন নেই, বর্তমান সাংবিধানিক পরিকাঠামোয় থাকা আইন এবং বিচার ব্যবস্থায় এই সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে মন্তব্য করবেন। বরং উল্টে তিনি বিরোধীদের মতো আরজি কর কাণ্ডে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তথ্য প্রমাণ লোপাট না করলে দ্রুত তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেত বলে পাল্টা তোপ দাগবেন? বিষয়টি নিয়ে রাজ্যপাল কোন ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, তা দেখার অপেক্ষায় রাজ্যবাসী।