নিজস্ব প্রতিনিধি— আঁচ মিলেছিল গত মঙ্গলবারই৷ সেই মতো বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দেবাশিস ধরের মনোনয়ন বাতিল হল শুক্রবার৷ মঙ্গলবার বীরভূম জেলার নির্বাচনী সভা থেকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, সদ্য স্বেচ্ছাবসর নেওয়া আইপিএস দেবাশিস ধরকে এখনও ‘রিলিজ’ সার্টিফিকেট দেয়নি তাঁর সরকার৷ ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী কোনও সরকারি পদাধিকারী ব্যক্তি ভোটে লড়তে পারেন না৷ ফলে দেবাশিস ধরের প্রার্থীপদ নিয়ে একটা প্রশ্ন চিহ্ন থেকেই গিয়েছিল৷ আশঙ্কা ছিল প্রার্থীপদ বাতিল হয়ে যাওয়ার৷ ঘটলও ঠিক তেমন৷ শুক্রবার সকালে বাতিল হল বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীর মনোনয়ন৷ রাজ্য সরকারের ছাড়পত্র দেখাতে না পারায় তাঁর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে বলে খবর৷ তার পরেই মনোনয়ন বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি৷ দ্রুত শুনানির আর্জি জানান প্রাক্তন পুলিশকর্তা৷ যদিও তাতে বিশেষ সুরুহা হয়নি৷ কলকাতা হাইকোর্টের একক বেঞ্জ তাঁর দ্রুত শুনানির আর্জি খারিজ করেছে৷ তবে মামলা করার অনুমতি দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি৷ সেক্ষেত্রে মামলা শোনা হবে আগামী সপ্তাহের শুরুতে৷
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বীরভূম জেলার জেলাশাসকের দফতরে মহাসমারহে মনোনয়ন জমা দেন প্রাক্তন পুলিশকর্তা দেবাশিস ধর৷ ইতিমধ্যে প্রচারের কাজও শুরু করে দিয়েছিলেন প্রাক্তন ওই পুলিশকর্তা৷ তবে নবান্ন তাঁর ইস্তফা পত্র গ্রহণ না করার কারণে রাজ্য বিজেপির অন্দরে তাঁর প্রার্থীপদ নিয়ে একটা দ্বন্দ আগে থেকেই তৈরি হয়েছিল৷ সেই কারণেই রাজ্যের অন্যান্য লোকসভা আসনের থেকে খানিকটা দেরিতেই বীরভূম লোকসভা আসনে প্রার্থী হিসেবে প্রাক্তন পুলিশকর্তা দেবাশিস ধরের নাম ঘোষণা করে বিজেপি৷ তবে মঙ্গলবার মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মন্তব্যের পরে আরও খানিকটা দোলাচলে পড়ে গিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপির কর্মকর্তারা৷ সেই মতো ওই লোকসভা আসনে তড়িঘড়ি দ্বিতীয় প্রার্থী ঘোষণা করে বিজেপি৷ ২০২১ সালে বিজেপিতে যোগ দেওয়া দেবতনু ভট্টাচার্যকে বৃহস্পতিবার নিজের সঙ্গে নিয়ে গিয়ে মনোনয়ন জমা করান রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়৷ ঘটনাচক্রে বৃহস্পতিবারই ছিল বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন৷ এবারের নির্বাচনে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংগঠনিক দায়িত্বে ছিলেন দেবতনু৷
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের সময় কোচবিহার জেলার এসপি পদে ছিলেন দেবাশিস ধর৷ কোচবিহারের শীতলকুচিতে সেই নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে প্রাণ যায় চারজনের৷ মর্মান্তিক ঘটনার পরেই আইপিএস আধিকারিক দেবাশিস ধরকে সাসপেন্ড করে রাজ্য সরকার৷ দীর্ঘদিন ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’এ থাকার পর গত মার্চ মাসে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি৷ তার পরেই বিজেপিতে যোগ দেন প্রাক্তন পুলিশকর্তা৷ প্রসঙ্গত, দেবাশিস ধরের বিরুদ্ধে সামঞ্জস্যহীন সম্পত্তির মামলা শুরু করেছিল রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ৷ তাঁর বাড়িতে তদন্ত করে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দাদের হাতে উঠে এসেছিল একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নথি৷